বর্তমান রাজা সালমান বিন আব্দুল আজিজের সিংহাসনে আরোহনের পর থেকেই গত কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবে দ্রুত গতিতে বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে চলেছে। যা মূলত ওই রাজতান্ত্রিক দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে পুনরায় ঢেলে সাজানোর জন্যই একটি প্রচেষ্টা বলে মনে হচ্ছে।
তবে এ ক্ষেত্রে রাজা সালমান বিন আব্দুল আজিজের ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানের সিংহাসনে বসার বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং এরপর স্থিতিশীলতা বজায় থাকাকে সবেচেয়ে বেশি গুরত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি সৌদি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন রাজা আব্দুল আজিজ আল সৌদের প্রথম নাতী।
এই লক্ষ্য অর্জনে সৌদি আরবের বর্তমান সরকার প্রচুর ধারাবাহিক পরিবর্তন এনেছে। যার সবগুলোর লক্ষ্য হলো একটাই। মোহাম্মদ বিন সালমানের হাতে সব ক্ষমতার উৎস কেন্দ্রীভুত করা। রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তার ফ্রন্টে উত্তারাধীকারী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়েছে তার বাবা সিংহাসনে বসার পরপরপই। এরপর সাবেক উত্তরাধীকারী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফকে সিংহাসনের উত্তারধীকারী যুবরাজের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। আর সবশেষে যুবরাজ মোতালিব বিন আব্দুল আজিজকেও ন্যাশনাল গার্ড এর নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
যাতে সৌদি রাজতন্ত্রের তিনটি প্রধান নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান- সেনাবাহিনী, ন্যাশনাল গার্ড এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নতুন উত্তরাধীকারী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের একক নেতৃত্বের অধীনে নিয়ে আসা যায়। বিস্তৃত রাজ পরিবারের আর কোনো প্রভাবশালী যুবরাজকে প্রতিদ্বন্দ্বীতার সুযোগ না দিয়েই।
অর্থনৈতিক ফ্রন্টে, ২০০-র বেশি সৌদি যুবরাজ এবং ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুর্নীতির অভিযোগে। আর তাদের ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যমানের সম্পদ আটক করা হয়েছে। সৌদি অ্যাটর্নি জেনারেল এই হিসেব দিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের অনেকে আরবী ভাষার বেশ কিছু গুরুত্বপুর্ণ মিডিয়া হাউজেরও মালিক। যার মধ্যে আছে আল আরাবিয়া এবং রোটানা টেলিভিশন চ্যানেল দুটিও। এর ফলে মোহাম্মদ বিন সালমানের হাতে আরো বেশি অর্থনৈতিক এবং গণমাধ্যম ক্ষমতা চলে আসল।
ধর্মীয় ফ্রন্টে, কয়েকডজন প্রভাশালী ধর্মতাত্বিক এবং শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশটিতে ধর্মীয় পুলিশের কতৃত্বও কমানো হয়েছে। এর পাশাপাশি কিছু গুরুতর সাংস্কৃতিক পরিবর্তনও আনা হয়েছে। যেমন নারীদেরকে গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। জাতীয় ছুটির দিনগুলোতে গণ উদযাপন এবং বিনোদন উৎসব আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
উত্তরাধীকারী যুবরাজের হাতে বেশিরভাগ ক্ষমতার উৎস তুলে দেওয়ার প্রচেষ্টার মধ্যে আরো বড় কিছু করার প্রচেষ্টা আছে বলেই মনে হচ্ছে। আর তা হলো, সৌদির রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে পুনরায় ঢেলে সাজানো। এর জন্য এমনকি দরকার হলে সৌদি রাজনৈতিক সিস্টেমের অতীতের মৌলিক নীতিমালাও লঙ্ঘন করা হবে। অতীতের এমন মৌলিক নীতিমালার একটি হলো নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলো এবং সম্পদ আল সৌদ রাজবংশের নানা শাখার মধ্যে এমনভাবে বিতরণ করে দেওয়া যাতে কেউই একা নিজের হাতে সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে না পারেন। এর মধ্যে আরেকটি নীতি ছিল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমুহের সমর্থনের ওপর নির্ভর করা। এবং এমন একটি রেন্টিয়ার স্টেট যেটি তেলের রাজস্ব বিতরণের মাধ্যমে সৌদি জনগনের আনুগত্য এনে দিত।
একটি বিষয়ের উল্লেখ দরকার যে, মোহাম্মদ বিন সালমান সামনের বছরগুলোতে সৌদি অর্থনীতির আধুনিকায়নের কথা বলেছেন। এর জন্য নানা খাতে প্রাইভেট কম্পানিগুলোকে একটি বড় ভুমিকা পালন করতে দেওয়া হবে। বিশেষ করে তেলের ব্যবস্থাপনায় ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্ত করা হবে। কেননা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরামকো-কে আন্তর্জাতিক বাজারে আনতে চাইছেন আগামী বছর থেকেই। আন্তর্জাতিক বাজারও এর জন্য অপেক্ষা করছিল। এটি তাদের জন্য অনেকটা একটি চুক্তি বা সুযোগের মতোই।