ন্যায়বিচার পাব কি না সংশয়ে আছি : খালেদা

Slider রাজনীতি

003507kalerkantho-17-11-2017-13

 

 

 

 

‘দেশে এখন ন্যায়বিচারের বদলে চলছে নাই বিচারের পরিবেশ। কাজেই আদালতের কাছে আমি ন্যায়বিচার পাব কি না, সেই সংশয় নিয়েই এ মামলায় আমাকে জবানবন্দি দিতে হচ্ছে।

রাজনৈতিক কারণে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমাকে হেয় করাই মূল উদ্দেশ্য। ’ গতকাল বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতে এ কথা বলেছেন।

ঢাকার বকশিবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালত ৫-এর অস্থায়ী আদালতে খালেদা জিয়া গতকাল ষষ্ঠ দিনের মতো বক্তব্য দেন। বক্তব্য অসমাপ্ত থাকায় আগামী ২৩ নভেম্বর আবার দিন ধার্য করেন বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

এ মামলায় গত বছর থেকে আসামিপক্ষের আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন ধার্য করা হয়। ওই সময় খালেদা জিয়া এক দিন বক্তব্য দেন। এরপর দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় গত ১২ অক্টোবর এ মামলাসহ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ১৯ অক্টোবর আত্মসমর্পণ করে জামিন পাওয়ার পর তিনি প্রতি ধার্য তারিখে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দিচ্ছেন।

সদ্য বিদায়ী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার প্রসঙ্গ টেনে গতকাল আদালতে খালেদা জিয়া বলেন, তাঁকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। শাসকদলের নজরে পড়ায় প্রধান বিচারপতির যে পরিণতি হয়েছে তা নজিরবিহীন। প্রধান বিচারপতিকে এভাবে চলে যেতে হলে অন্য বিচারকদের ন্যায়বিচারের সুযোগ আছে কি? ক্ষমতাসীনদের পছন্দ না হওয়ায় তাঁকে (এস কে সিনহা) এভাবে বিদায় নিতে হয়েছে। খালেদা জিয়া আরো বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেওয়ায় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে অপতৎপরতা শুরু হয়। ক্ষমতাসীন মহল তাদের ক্রোধ গোপন রাখতে পারেনি। প্রকাশ্যে তাঁকে বিদেশে চলে যেতে হুমকি দেওয়া হয়। তাঁর পদত্যাগ চাওয়া হয়। জোর করে ছুটি নিতে বাধ্য করা হয়। দেশে আসার আগেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়ন করা হয়নি—এ মন্তব্য করে খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, নিম্ন আদালতগুলো আইন মন্ত্রণালয়ের প্রভাবমুক্ত হয়নি বরং সাম্প্রতিক কিছু ন্যক্কারজনক ঘটনায় এই আদালতগুলোর ওপর শাসক মহলের রাজনৈতিক চাপ ও কর্তৃত্ব আরো বেড়েছে।

সংবাদমাধ্যমের প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমের এখন কোনো স্বাধীনতা নেই। ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়ার ভয়ে তারা সত্য সংবাদ অবাধে প্রকাশ করার সাহস পায় না। তা সত্ত্বেও যতটুকু খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে, তাতে বোঝা যায় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে তাঁর পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৩৬টি মামলা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই এসব মামলা করা হয়েছে, যা জনগণের কাছে স্পষ্ট। অসত্য ও ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাগুলো করা হয়েছে। আমি রাজনীতিতে সক্রিয় বলেই ক্ষমতাসীনরা আমাকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করে। অথচ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাগুলো সব তুলে নেওয়া হয়েছে। ভিত্তিহীন অভিযোগে দায়ের করা মামলার কারণে আমি ভীত নই। তবে আমার শঙ্কার কারণ হচ্ছে যে অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও ন্যক্কারজনকভাবে দেশে ন্যায়বিচারের পরিবেশ বিলুপ্ত করা হয়েছে। ’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশে এখন আর ন্যায়বিচারের পরিবেশ নাই। আছে নাই বিচারের পরিবেশ। কোনো বিচারক ইচ্ছা করলেই ন্যায়বিচার করতে পারবেন না। ক্ষমতাসীনদের দিকে তাকিয়ে রায় ঘোষণা করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থাও হারিয়ে গেছে। ’

গতকাল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার তারিখ ছিল। ওই মামলায় সাক্ষীদের আসামিপক্ষ পুনরায় জেরা করে। গতকাল সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ায় আগামী ২৩ নভেম্বর খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদেরও আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন ধার্য করা হয়েছে।

ফেরার পথে ধাওয়া-ভাঙচুর : আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন শেষে খালেদা জিয়ার ফেরার পথে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দুপুরে হাইকোর্টের পাশে কদম ফোয়ারার সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের সহকারী কমিশনার এহসানুল ফেরদৌস কালের কণ্ঠকে বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা রাস্তা অবরোধ করে মিছিল করায় ওই এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে গেলে তারা গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় তাদের ইট-পাথরের আঘাতে পুলিশের কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে সংঘর্ষ বাধার আগেই ওই এলাকা ছেড়ে যায় খালেদা জিয়ার গাড়ি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আদালত থেকে দুপুরে বাসায় ফিরছিলেন খালেদা জিয়া। এ সময় তাঁর পেছনে মিছিল করতে করতে যেতে থাকে বিএনপির নেতাকর্মীরা। কদম ফোয়ারার মোড়ে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। তা অমান্য করে মিছিল করে যেতে থাকলে পুলিশ ধাওয়া দেয়। এ সময়

বিএনপির নেতাকর্মীরা পালানোর চেষ্টা করে এবং ইট-পাথর ছুড়ে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়, যানজটের সৃষ্টি হয়।

সুত্রঃ কালেরকন্ঠ

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *