‘প্রথমে ভেবেছিলাম বোমা’

Slider সারাবিশ্ব

d89011ee671a5552d8f6b4a044bdac95-5a09b478705f3

 

 

 

 

ইরাকের বাগদাদের বাসিন্দা মাজিদা আমির। তিন সন্তানের মা তিনি। গতকাল রোববার রাতে হঠাৎ করেই বুঝতে পারেন চারদিক দুলছে ও ভবন কাঁপছে। প্রথমে মাজিদা ভেবেছিলেন, কোনো বোমা বিস্ফোরণের কারণে হয়তো এমনটা হচ্ছে। কয়েক সেকেন্ড পরই তিনি বুঝতে পারলেন, এটি ভূমিকম্প। এরপরই চারপাশ থেকে শোনা যেতে থাকে মানুষের চিৎকার।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে মাজিদা বলেন, ‘আমি বাচ্চাদের নিয়ে রাতের খাবার খেতে বসেছিলাম। হঠাৎ করেই বুঝতে পারি বাড়ি কাঁপছে। আমি ভেবেছিলাম, শক্তিশালী কোনো বোমা বিস্ফোরণের কারণে হয়তো বাড়ি কাঁপছে। পরে ভুল ভাঙে।’

ইরাক ও ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় গতকাল রাতে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৩। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৩৯৬ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে সাত হাজারের বেশি মানুষ। এর মধ্যে শুধু ইরানেই প্রায় ৬ হাজার ৬০০ জন আহত হয়েছে। একটি সাহায্য সংস্থার দাবি, এই ভূমিকম্পের কারণে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়তে পারে। ভূমিকম্পের সময় দুই দেশের সীমান্তবর্তী ওই অঞ্চলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন এ সময় বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে।

ইরানের বেশ কয়েকটি প্রদেশে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় কেরমানশাহ প্রদেশে নিহত মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এরই মধ্যে সেখানে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে বলে নিশ্চিত করে দেশটির সরকারি সূত্র। ভূমিকম্পের পর ইরানে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

ইরানের জরুরি সেবাবিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা পির হোসেইন কুলিভান্দ রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল আইআরআইএনএনকে বলেন, ভূমিকম্পে সীমান্ত থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের সারপোল-ই-জাহাদ শহরে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভূমিধসের কারণে উদ্ধার কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া শহরটির প্রধান হাসপাতাল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে সেখানে হতাহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

ইরাকের কুর্দিস্তানের দারবন্দিখান শহর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটির রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মকর্তা ইয়াসিন আব্বাস বিবিসিকে বলেছেন, ইরাকের কুর্দিস্তানে ভূমিকম্পে ৪২৫ জন আহত হয়েছেন।

বর্তমানে ইরান ও ইরাকের বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। দুই দেশেই কয়েক হাজার মানুষ পরাঘাতের আশঙ্কায় রয়েছে। তারা ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় ও পার্কে অবস্থান করছে। এদিকে ইরাক ও ইরান সীমান্তের পর কোস্টারিকা ও ইসরায়েলেও ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে।

২০১২ সালের পর এটিই ইরানে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। ইরানে গত বছর ১৬টি ও এ বছর ১৯টি ভূমিকম্প হয়েছে। ২০০৩ সালে ৬ দশমিক ৬ মাত্রার এক ভূমিকম্পে ইরানের ঐতিহাসিক শহর বাম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ওই দুর্যোগে মোট ২৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *