নাটোরের সিংড়ায় দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির দায়ে ৭০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে চার হাজার টাকা জরিমানা ও জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানোর আদেশ দেন গ্রামের মাতবরেরা। আর জরিমানার টাকায় তাঁরা মিষ্টি খেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু শিশুটির বাবা এ বিষয়ে আইনি বিচার চান। প্রথমে গ্রামের মাতবরদের বাধার কারণে তিনি থানায় যেতে পারেননি। পরে পুলিশের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার তিনি এ ব্যাপারে সিংড়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
সিংড়া থানা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির নাম আফছার আলী। গত রোববার দুপুরে তিনি এক বাড়িতে ঢুকে সাত বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় বাড়িতে কেউ ছিল না। শিশুটির চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে ওই বৃদ্ধকে হাতেনাতে ধরে। পরে ওই ব্যক্তির ছেলে ও জামাই এসে তাঁর বিচার করার আশ্বাস দিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। সেদিন রাতেই এ নিয়ে সালিস বৈঠক বসে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য জাফর ইকবালের পরিচালনায় সালিসে ওই বৃদ্ধকে চার হাজার টাকা জরিমানা ও গলায় জুতার মালা দিয়ে ঘোরানো হয়। পরে জরিমানার টাকায় মিষ্টি কিনে খান সবাই।
সালিসে ইউপি সদস্য, গ্রামপ্রধান মতলেব আলী, ওয়াজেদ আলীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। ঘটনার পর শিশুটির বাবা আজ বুধবার সিংড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
শিশুটির বাবা বলেন, মেয়েকে দাদির কাছে রেখে নাটোর শহরের একটি ধানের চাতালে কাজ করতে গিয়েছিলেন। সেই সুযোগে আফছার আলী এ ঘটনা ঘটান। তাঁরা থানায় অভিযোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গ্রামের মাতবরেরা তাঁদের ভয়ভীতি দেখিয়ে একটা সাদা কাগজে সই নিয়ে নেন। পরে পুলিশের কানে বিষয়টি গেলে তাঁকে থানায় আসতে বলা হয়।
ইউপি সদস্য বলেন, নয় সদস্যের সালিসি বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযুক্ত বৃদ্ধকে শাস্তি হিসেবে জুতার মালা পরানো ও চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এটা তাঁর একক সিদ্ধান্ত নয়। শিশু নির্যাতনের শাস্তি তাঁরা দিতে পারেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।’ তবে জরিমানার টাকায় মিষ্টি খাওয়ার কথা তিনি অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন নাটোর শাখার সভাপতি মাহফুজুর রহমান বলেন, শিশু নির্যাতনের বিচার গ্রাম্য প্রধানেরা করতে পারেন না। বিচারের নামে তাঁরা অবিচার করেছেন। এ জন্য তাঁদের শাস্তি হওয়া উচিত।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।