সম্পাদকীয়: অংগে পচন ধরছে, চিকিৎসা জরুরী

Slider বাংলার মুখোমুখি সম্পাদকীয়

5af34be579906b5ab39fc9d70c183301-59f077edb4364

 

 

 

 

বর্তমান সরকার, ক্ষমতাসীন দল আর প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের মধ্যে দ্রুতই সুষ্ঠু সমন্বয় দরকার। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে যাওয়ার আগেই সরকারকে এই উদ্যোগ নিতে হবে। হিংসা বিদ্বেষ ভুলে সমন্বিত উদ্যোগ সৃষ্টি না হলে সার্বিক পরিস্থিতি ঘোলা হতে পারে এবং সকলকেই তখন অনুশোচনা করতে হবে।

সাম্প্রতিক কালের বিভিন্ন ঘটনাবলী পর্যবেক্ষনে মনে হচ্ছে যে, সরকারের সঙ্গে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দূরত্ব বাড়ছে। সংবিধানের তিনটি অংগ ক্রমান্বয়ে দূরে চলে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ- আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ একে অপরের পরিপূরক। তিনটি অংগের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে রাষ্ট্র নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে এতে সন্দেহ নেই।

সম্প্রতি বিচার বিভাগের প্রধানকে নিয়ে যে গল্প হয়ে গেলে এরপর সরকারকে যা করতে দেখা গেলো তা  শোভনীয় নয়। ঘটনা যাই ঘটুক প্রকৃত্য সত্য জাতির কাছে পরিস্কার। সর্বশেষ দেখা গেলো, বিচার বিভাগের একটি চেয়ারের একটি পদে দুইজন লোক নিয়োজিত। একজনকে বিদায় করে অন্যজনকে বসালে এই সমস্যাটা হত না। ফলে প্রধান বিচারপতি  আর প্রধান বিচারপতির অনুরুপ দায়িত্ব পালনকারী প্রধান বিচারপতি এখন একই দায়িত্বে রয়ে গেলেন। বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে যদি এমন অবস্থা হয় তবে সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে যাবে অতীতের সকল সময়ের চেয়ে বেশী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসিকে ভারপ্রাপ্ত বা চলতি দায়িত্বের ভিসি বললে তিনি উত্তেজিত হয়ে উঠেন। আসলে তার কি পদ, তাও পরিস্কার করা দরকার।

সর্বশেষ গত দুই দিনে চারটি ঘটনায় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের কিছু সদস্যের নাম জড়িয়ে পড়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন, বিচ্ছিন্ন কিছু পুলিশ সদস্যের দায় পুরো পুলিশ প্রশাসন নিতে পারে না। এর মাঝে কক্সবাজারে সেনা সদস্যদের হাতে ঘুষের ১৭ লাখ টাকাসহ আটক হয়েছেন পুলিশের ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের (ডিবি) ছয় সদস্য। তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

অন্যদিকে রাস্তা থেকে গাড়ি আটক করে থানায় নিয়ে তা বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে। তার বিষয়েও চলছে তদন্ত।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির মতিঝিল ইউনিটের উপ-পরিদর্শক সুশান্ত কুমার রাহুতের বিরুদ্ধে ফকিরাপুলের জি-নেট টাওয়ারের রিক্রুটিং অ্যান্ড ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসায়ীরা ৪৫ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করেছেন। রিক্রুটিং এজেন্সি ব্যবসায়ীদের ১২০০ পাসপোর্ট আটক করার পর ৪৫ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রায় ১১০০ পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হয়েছে। গুরুতর এই অভিযোগ ওঠার পর তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।

এদিকে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী রিনা চৌধুরীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৮ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুর্নীতি করে অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে সুভাষ চন্দ্র সাহাকে ফরিদপুর থেকে প্রত্যাহার করে ঢাকায় ফেরত এনেছে পুলিশ সদর দফতর। । এসব ঘটনায় পুলিশের বিভিন্ন অর্জন ম্লান হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।

পরিস্থিতি বিবেচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত। আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রন তাদের কাজ নয় যদি রাষ্ট্র তাদের নিয়োজিত না করে। কিন্তু কক্সবাজারের ঘটনায় দেখা যায়,  প্রতিরক্ষা বাহিনী, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যকে অপরাধ সংঘটনকালে হাতে নাতে ধরেছেন যা বর্তমানে সারাদেশে তোলাপাড় সৃষ্টি করেছে।

এ সব কারণে সহজেই প্র্রতিয়মান হয় যে, রাষ্ট্রের তিনটি অংগ দিন দিন রুগ্ন হয়ে যাচ্ছে। অংগ রুগ্ন হলে দেহের যা হয় দেশেরও তাই হতে পারে। সুতরাং এখনি উচিত দেহটাকে সুস্থ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া।

ড. এ  কে এম রিপন আনসারী

এডিটর ইনচীফ

গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *