দুই শিশু খুনের প্রতিবাদে সামাজিক আন্দোলন

Slider নারী ও শিশু

pic-16_156666রাজধানীর ভাটারা ও চকবাজার এলাকায় দুই শিশু হত্যার বিচার দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন। গতকাল শুক্রবার ভাটারায় স্কুলছাত্রী ফারজানা আক্তার লিজা হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন শেষে মিছিল বের করলে পুলিশ-জনতা সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

বিক্ষুব্ধ জনতা নতুন বাজার এলাকায় প্রগতি সরণিতে আগুন ধরিয়ে অবরোধ করে। ফলে এ সময় রাস্তায় প্রায় আধাঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। পুলিশ লাঠিপেটা করে মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় সোলমাইদ উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়।

গত মঙ্গলবার সোলমাইদ উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী লিজার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সোমবার বিকেলে ছবি আঁকার রঙ পেনসিল কিনতে দোকানে গিয়ে সে আর ফিরে আসেনি। ধারণা করা হচ্ছে, ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তাকে। এ ঘটনায় ভাটারার ১ নম্বর রোডের ৩৪ নম্বর বাড়ি থেকে সৌরভ নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। লিজার পরিবার সৌরভদের বাড়িতে ভাড়া থাকে। এলাকাবাসীর দাবি, পুলিশ সৌরভকে গ্রেপ্তার করার পরও বিষয়টি প্রভাবশালীদের চাপে অন্য খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

এদিকে পুরান ঢাকার ইসলামবাগে প্রতিবন্ধী শিশু মনি আক্তারকে ধর্ষণের পর হত্যার বিচার দাবিতে গতকাল চকবাজার ঈদগাহ মাঠে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে কয়েকটি সামাজিক সংগঠন। এ সময় মনির মা রেণু বেগম সন্তান হত্যার বিচার দাবি করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। গত ২১ নভেম্বর (শুক্রবার) রাতে চকবাজারের ইসলামবাগে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ৯ বছরের শিশু মনিকে বাসার কাছেই ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় দেলোয়ার নামে সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও ঘটনার প্রকৃত রহস্য এখনো বের হয়নি।

উত্তাল প্রগতি সরণি : গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সোলমাইদ এলাকাবাসী ও সোলমাইদ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ভাটারা থানার সামনের রাস্তায় মানববন্ধন শুরু করে। কর্মসূচি চলাকালে অংশগ্রহণকারীরা রাস্তায় কাঠ ও বাঁশ জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেয়। একপর্যায়ে মিছিল বের করে তারা। মিছিলটি প্রগতি সরণিতে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। বিক্ষোভকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। পুলিশও জলকামান ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। উত্তেজিত এলাকাবাসী ভাটারা মসজিদ রোডের ২৩ নম্বর বাড়িতে (আসামি সৌরভের বাড়ি) ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। বিক্ষোভের কারণে প্রগতি সরণিতে প্রায় আধাঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। দুপুরে স্বাভাবিক হয়ে আসে সড়কের পরিস্থিতি। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া সোলমাইদ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুস সালাম বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ হঠাৎ হামলা চালায়। এরপর জনতা গাড়ি ভাঙচুর ও রাস্তায় অগ্নিসংযোগ করে। পরে পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ভাটারা থানার ওসি সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখানে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা আমরা প্রতিহত করেছি। হত্যা মামলার তদন্ত ঠিকভাবেই চলছে।’
লিজা হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবু আল বাশার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ মামলায় পুলিশ সৌরভকে বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আমরা প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছি।’
তদন্ত কর্মকর্তা আরো জানান, সৌরভের বাবার নাম রেজাউল হক। তিনি রঙের ঠিকাদার। সৌরভ একসময় স্থানীয় একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে লেখাপড়া করলেও এখন সে বখাটে হিসেবে পরিচিত। সৌরভদের বাসায় লিজার পরিবার ভাড়া থাকে। তার বাবা নজরুল ইসলাম গাড়িচালক। দুই বোনের মধ্যে নিহত লিজা ছিল বড়।
খুনির গ্রেপ্তার দাবিতে কাঁদলেন মা : ‘আমার প্রতিবন্ধী বাচ্চাডারে যে নরপিশাচ এইভাবে মারছে আমি তার ফাঁসি চাই। সবার সামনে তার বিচার চাই…’- মাইকে এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন রেণু বেগম। গত ২১ নভেম্বর ইসলামবাগে তাঁর মেয়ে মনিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এ ঘটনার বিচার দাবিতে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চকবাজারের ঈদগাহ মাঠে মানববন্ধন করে কয়েকটি সামাজিক সংগঠন। সেখানে বক্তারা বলেন, প্রতিবন্ধী মনিকে হত্যার এক সপ্তাহ পরও পুলিশ খুনিদের সন্ধান পায়নি। এই খুনের বিচার করা না হলে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দেন বক্তারা। মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশটির আয়োজন করে ইসলামবাগ অনির্বাণ সমাজকল্যাণ সংস্থা, পাদুকা প্রস্তুতকারী সংযুক্ত শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস, বাংলাদেশ প্রজন্ম বাঁচাও আন্দোলন, গোলাম মোস্তফা লেন কিশোর সংঘ প্রভৃতি সংগঠন। কর্মসূচিতে মনির বাবা চান মিয়াসহ স্বজনরাও উপস্থিত ছিলেন।
মনি হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই পিন্টু কুমার চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গুরুত্ব দিয়ে এ ঘটনার তদন্ত চলছে। দেলোয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কোনো ক্লু মেলেনি। তার ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা হবে। এলাকায় সোর্স লাগিয়েও আমরা তদন্ত করছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *