বিচার চান ‘গণধর্ষণের’ শিকার কাশ্মীরিরা

Slider সারাবিশ্ব

63ec7dad2dedeb7033f109f43a35246b-59da4eeaa603d

 

 

 

 

২৬ বছর আগের কথা। ভারতীয় সেনাদের বিরুদ্ধে কাশ্মীরের দুটি গ্রামে ৩০ জন নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। এত দিনেও ওই ঘটনার বিচার হয়নি। দোষীদের বিচার চেয়ে ‘গণধর্ষণের’ শিকার নারীরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এখনো।

বিবিসি উর্দুর খবরে বলা হয়েছে, ১৯৯১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কুনান ও পোশপোরা নামে কাশ্মীরের দুটি গ্রামের নারীদের গণধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছিল ভারতীয় সেনাদের বিরুদ্ধে। গ্রাম দুটি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার অন্তর্ভুক্ত। ১৯৯০-এর দশকে কাশ্মীরে বড় আকারে সামরিক অভিযান চালাচ্ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। এক-একটি এলাকা ঘিরে তল্লাশি চালানো হতো। মূলত কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে দমন করার জন্যই এসব অভিযান চলত।

ওই দিন গণধর্ষণের শিকার দুই নারী বিবিসির কাছে তাঁদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তাঁদের নাম জুনি ও জারিনা (ছদ্মনাম)। বললেন, শীতের রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাঁরা। হঠাৎ করেই শোনা যায় দরজায় খটখট শব্দ।

ভারতীয় সেনাদের দেখে জুনি ও জারিনা ভেবেছিলেন, হয়তো তল্লাশি চালানো হবে। কিন্তু অচিরেই ভুল ভাঙে তাঁদের। সেনাদের কেউ কেউ মদ খাচ্ছিল। জুনি বলেন, ‘আমার দুই বছরের মেয়ে কোলে ছিল। সেনারা আমাকে ধরার চেষ্টা করছিল। আমি বাধা দিয়েছিলাম। এক সময় কোল থেকে পড়ে যায় আমার মেয়ে। তাঁকে জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলা হয়। এতে সারা জীবনের মতো পঙ্গু হয়ে যায় সে। এরপর তিনজন সেনা আমাকে জাপটে ধরে। এরপর কি ঘটেছিল আমি আজও তা ভুলতে পারি না। ওরা পাঁচজন ছিল। আমি এখনো তাঁদের চেহারা মনে করতে পারি।’

একই দিনে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন জারিনা। মাত্র ১১ দিন আগে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘ওই দিনই বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি ফিরেছিলাম আমি। বাড়িতে নতুন কাপড় ঝোলানো দেখে শাশুড়িকে প্রশ্ন করেছিল সেনারা। তাঁর কাছ থেকে জানতে পেরেই আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সেনারা। এখনো সেনাদের দেখলে আমরা ভয়ে কাঁপতে থাকি। আমরা চরম অবিচারের শিকার হয়েছি।’

807c52393b3da67c1e3303c237320339-59da4eeaa7c2d

 

 

 

 

কুনান ও পোশপোরা গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই দিন নারীদের যেমন ধর্ষণ করা হয়েছিল, তেমনি অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়েছিল গ্রামের পুরুষেরা। এসব নির্যাতনের বিচার হয়নি আজও। ২০১৩ সালে একদল কাশ্মীরি নারী এ বিষয়ে রাজ্য হাইকোর্টে আবেদন করেন।

এর পর শুরু হয় দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া। একপর্যায়ে জম্মু ও কাশ্মীর হাইকোর্ট ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। রাজ্য সরকারকে দেওয়া আদালতের সেই নির্দেশ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। পড়েছে আইনের মারপ্যাঁচে। রাজ্য সরকার প্রাথমিকভাবে এতে রাজি হলেও, পরে আবার অবস্থান পরিবর্তন করে। হাইকোর্টে রায় চ্যালেঞ্জ করা হয়। সেই থেকে চলছে মামলা।

এ বিষয়ে শ্রীনগরে রাজ্য সরকারের মন্ত্রী নাইম আখতার বিবিসিকে বলেন, কাশ্মীরে যে ধরনের সংঘাত চলছে, সেখানে প্রায় সময়ই সত্যের ওপর ধুলো জমে যায়।

ভারতীয় সেনাবাহিনী অবশ্য এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বিবৃতিতে বলেছেন, এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনবার স্বাধীনভাবে তদন্ত করা হয়েছে। কিন্তু পরস্পরবিরোধী বিবরণ পাওয়ায় মামলাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *