বন্দুক হামলা দিন দিন ভয়ংকর হচ্ছে

Slider সারাবিশ্ব

8a5a2d9e46bbda41fedc8786b1247faf-59d25ff2ce635

উত্তর আমেরিকা ডেস্ক: ভেগাসের হামলা সাম্প্রতিক সময়ের সব বন্দুক হামলার ভয়াবহতাকে ছাড়িয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। আহত হয়েছে চার শতাধিক।

লাস ভেগাসের মান্দালাই বে এলাকা মেতেছিল সুর আর সংগীতে। এদিন ছিল কান্ট্রি মিউজিক কনসার্টের শেষ দিন। স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে একটি হোটেল কক্ষ থেকে কনসার্টস্থল লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। হোটেলে নিজের কক্ষ থেকে এলোপাতাড়ি গুলি চালান স্টিফেন প্যাডক নামের এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তিও পরে নিহত হন।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, লাস ভেগাসের এ হামলা নিশ্চিতভাবেই আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এরই মধ্যে ৫০ জন নিহতের খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ছাড়া আহত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফলে নিহত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে সহজেই ধারণা করা যায়।

এর আগের ভয়াবহ হামলাটি হয়েছিল অরল্যান্ডোতে। ঠিক ১৬ মাস আগে আমেরিকার অরল্যান্ডোর পালস নাইটক্লাবে ওমর মতিন নামের এক ব্যক্তির বন্দুক হামলায় নিহত হয় ৪৯ জন। ওই হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছিল জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এ ঘটনার আগে বন্দুক হামলায় সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল ভার্জিনিয়ায়। ২০০৭ সালে ভার্জিনিয়া টেকে হওয়া ওই বন্দুক হামলায় নিহত হয় ৩২ জন।

প্রতিটি বন্দুক হামলাই আগের ভয়াবহতাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি নতুন হামলাই আসছে আরও বেশি বিধ্বংসী ও প্রাণঘাতী হয়ে। ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বন্দুক হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়েছিল মাত্র নয়জন। কিন্তু ভার্জিনিয়া টেকে হওয়া হামলা এ অবস্থাটি রাতারাতি বদলে দিল। এ হামলায় নিহত হয় ৩২ জন, যা ১৯৪৯ সালে ক্যামডেনে হওয়া বন্দুক হামলায় নিহতের সংখ্যার দ্বিগুণের বেশি। আর অরল্যান্ডো হামলায় এর চেয়েও আরও ১৭ জন বেশি নিহত হয়। এরপর লাস ভেগাসে এখন পর্যন্ত ৫০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও তা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কিন্তু এরই মধ্যে এ সংখ্যা গত ১০ বছরে বন্দুক হামলায় মোট নিহতের সংখ্যার দ্বিগুণের বেশি। আর আগের ভয়াবহ হামলার হতাহতের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যেতে মাত্র ১৬ মাস সময় নিয়েছে।

এসব পরিসংখ্যান কোনোভাবেই এ বন্দুক হামলার ভয়াবহতাকে তুলে ধরতে যথেষ্ট নয়। কারণ, রেকর্ড ভাঙার এ ধারা পরবর্তী হামলার ভয়াবহতা সম্পর্কে ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ ধারা সাধারণ মানুষের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতার একটি সারাংশ বলা যায়। লাস ভেগাস জানান দিচ্ছে, পরবর্তী হামলায় নিশ্চিতভাবেই অর্ধশতাধিক নিহত হতে পারে।

এসব হামলার ঘটনায় হামলাকারীর সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোনো শত্রুতা ছিল না। এসব হামলার স্থল হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে বিচিত্র সব এলাকা। কী বিশ্ববিদ্যালয়, কী স্কুল, কী ক্যাফেটেরিয়া কিংবা কনসার্ট—কোনো কিছুই বাদ যায়নি। এমনকি রাস্তায় পথ চলতি মানুষকেও বন্দুক হামলায় প্রাণ দিতে হয়েছে। ইদানীং ইসলামিক স্টেটের কথা শোনা গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে হামলাকারীর পরিচয় হিসেবে মানসিক বিষাদগ্রস্ততার কথা উঠে এসেছে। আর এসবই রয়েছে আশঙ্কার কেন্দ্রে, যা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। একই সঙ্গে আধুনিক ও নিরাপদ রাষ্ট্র হিসেবে আমেরিকাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *