যুদ্ধের বীণা উথলে উঠুক
—-কোহিনূর আক্তার,
১৯৭১ সাল , পহেলা বৈশাখ,
দুপুরে আমার বড় ছেলেটা বলছে মা মা ও মা ! কি রে বাবা ?
মা আজ বাবাকে খুব মনে পড়ছে
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে
বাংলা ভাষ বাংলা ভাষা করে জীবন দিল রাজ পথে ।
আমি ও বাবার মতো যুদ্ধে চলে যাবো ।
মা মারে যুদ্ধের লাল ফিতা আমার মাথায় বাঁধিয়ে দাও,
আমি তাই দিলাম , ছেলে আমার বীরের মত ১৯৭১ সালে যুদ্ধে চলে গেল
আমার বুকফাটা কান্নার শব্দ যেনো স্তব্ধ হয়ে গেল ।
আমার বুকের মানিক তুই যাস না বাপ তুই যে আমার জীবনের অবলম্বন ,
বিদায় বেলায় ওর অশ্রু শিক্ত মুখটা লুকিয়ে বলছিল
মা আমার জন্য দোয়া করো ।
আমি পারুল ও বিনাকে নিয়ে থাকি,
বড় মেয়েটির বয়স ১৪ , যখন পাক হানাদার বাহিনী জানতে পারল ,
আমার ছেলে মুক্তিযোদ্ধা তখন ওরা ওরা
আমার ১৪ বৎসর বয়সের মেয়েটিকে তুলে নিয়ে গেল ।
ঐ জানোয়ারেরা ওকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে তখনো সে বুঝেনি।
আমার পারুল তখনো কি অবুঝ হানাদারদের হাতের মুঠোয় থেকে
পারুল বললো মা আমার ওড়নাটা দাও ।
আমি চিৎকার করে হেসেছিলাম ,
নিয়ে যা , যা আছে তোদের নেবার ।
তবুও আমি স্বাধীন বাংলা দেখতে চাই ,দেখতে চাই ।
১৯৭১-২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি বাহিনী শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে ।
বেতার কেন্দ্র থেকে ছড়িয়ে পড়লো সারা বিশ্বে ,
আমার শরীরের লোম গুলো সব দাড়িয়ে গেল ।
এবার বুঝি দেশ রক্তের ঢেউয়ে ভাসে যাবে ।
সেদিন ভোর হতে না হতেই পাক হানাদার বাহিনী
আমায় ঘেরাও করলো সব বন্দুকের নল
আমার মাথায় ঠেকাল আমি ওদের কাছে কাকুতির সুরে বললাম
আমায় মেরো না আমার ছোট্ট একটি মেয়ে আছে
সে এখনো গোসল করে ঠিকমতো মাথাটা মুছতে পারে না
ওর জন্য আমাকে বাঁচতে দাও ।
আমার কথায় ক্ষান্ত হলো না ওরা মারলো পাঁচ টি গুলি ।
আমার সেই ছোট্ট মেয়েটির বুকে কচি কচি হাত
পাঁ নিথর হয়ে পড়ে রইলো আমার শ্রেষ্ঠ উঠানে ।
আর একটি গুলি ওরা আমায় করলো না ।
আমাকে ইতিহাসের সাক্ষী করে
কি নির্মম কাঠগড়ায় আজও দাড়িয়ে রাখলো ।
২৬ শে মার্চে প্রথম প্রহরে বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করা হলো ।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র জয়ের অগ্নি বানী ছড়ানো হলো ।
আজও আমি দাড়িয়ে আছি তোমরা কি পেয়েছো আমায় ?
আসো আমার কাছে ধরো অস্ত্র করো
গুলি এই পৃথিবীর বুকে ঝাঁঝরা করে দাও পাপিষ্ঠার বুক ।
আমাকে আর রক্তের তিলক পড়তে বলো না না ।
২৭/৯/১৭ সময় ৫:৪৫ মি