সম্পাদকীয়: রোহিঙ্গা সমস্যা তীব্র হচ্ছে

Slider সম্পাদকীয় সারাদেশ

22008242_10203643551964802_1469652742043303714_n

 

 

 

 

 

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে জাতিসংঘের একটি সেফ হাউসে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের উপর বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটেছে। শ্রীলঙ্কা পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার কলম্বোর মাউন্ট লাভিনিয়ার জাতিসংঘ সেফ হাউসে এ ঘটনা ঘটে। পরে সেফ হাউজ থেকে ৩১ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে বাধ্য হন কর্মকর্তারা।

পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকারা জানিয়েছেন, গত এপ্রিলে সাগর পাড়ি দিয়ে শ্রীলংকায় আসে এসব রোহিঙ্গা। পরে তাদেরকে পুলিশের একটি ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়। সিনহালি জাতিকা বালামুলুওয়া নামের একটি চরম জাতীয়তাবাদী গ্রুপ তাদের ফেসবুক পেজে হামলার লাইভ সম্প্রচারে দেখিয়েছে। হামলার নেতৃত্বদানকারী আকমিমানা দায়ারাত্নে নামে এক বৌদ্ধ ভিক্ষু এসময় বলেন, এই রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসী। তারা মিয়ানমারে আমাদের বৌদ্ধ ভিক্ষুদের হত্যা করেছে। ’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা হামলাকারীদের সরিয়ে দিয়েছি এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ’

অন্যদিকে ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরে রোহিঙ্গাদের জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। এদিকে এ ঘটনায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। তারা রোহিঙ্গাদের এমন হামলা থেকে রক্ষার জন্য দেশটিকে অনুরোধ করেছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ৫ লাখ রোহিঙ্গা।  এখন খবর এসেছে,  কক্সবাজারের হোয়াইক্যং থেকে শক্তিশালী বোমাসহ মিয়ানমারের এক নাগরিককে আটক করেছে পুলিশ।

এদিকে রাখাইন রাজ্যের বুচিদং ও রাচিদংয়ের গ্রামের পর গ্রামে হামলা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পোড়ানোর পাশাপাশি হত্যা, ধর্ষণ, অত্যাচার-নির্যাতনে রোহিঙ্গারা নিরুপায় হয়ে পড়ে। অনেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে, অনেকে আবার মংডু শহরের আশপাশের গ্রামগুলোতে আশ্রয় নেয়। কারণ, তখনো এই শহরের আশপাশে তেমন নির্যাতন শুরু হয়নি। কিন্তু ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে মাইকিং করে রোহিঙ্গাদের এসব এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিচ্ছেন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এরপরই ছোট ছোট কয়েকটি গ্রামে আগুন দেয় তারা। আজ বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের মংডু শহরের ফয়েজিপাড়া, সিকদারপাড়া, আশিকাপাড়া, উকিলপাড়া, নাপিতের ডেইল, নুরুল্লাপাড়া, কাদিরবিল গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এসব বাসিন্দার অভিযোগ, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় মগদের দিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামে মাইকিং করাচ্ছে। পাশাপাশি আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য কিছু প্রভাবশালী রোহিঙ্গার ঘরে আগুন দেয়। মংডুর কাদিরবিলের রিকশাচালক নুরুনবী (৫৫) বলেন, ‘মঙ্গলবার মাইকিং করে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলে। এরপর সেনা ও কিছু রাখাইন যুবকসহ গ্রামে এসে কোনো কথা ছাড়াই আমাদের ঘরবাড়িতে আগুন দিয়েছে। ওই সময় প্রাণে বাঁচতে ধানখেতে গিয়ে লুকিয়ে ছিলাম। পরে পরিবারের সাতজন সদস্য নিয়ে হেঁটে নাফ নদীর তীরে আসতে রাত একটা বাজে। এরপর আজ বৃহস্পতিবার ভোররাত চারটার দিকে একটি নৌকায় করে জনপ্রতি পাঁচ হাজার করে টাকা দিয়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে ঢুকি। তাঁর দাবি, ‘অং সান সু চির ভাষণের আগ পর্যন্ত মংডু শহরে আমাদের বাড়িঘর আগে পোড়ায়নি এবং ওই এলাকার রোহিঙ্গাদের কিছু ত্রাণ হিসেবে চাল, ডাল দেওয়া হলেও সেগুলো সেনা সদস্যরা পরে কেড়ে নিয়েছেন। ফয়েজিপাড়ার গৃহবধূ আমেনা খাতুন বলেন, ‘গত ২৭ আগস্ট দিনদুপুরে গ্রামের “থাব্বে” ফরিদ আলম আমার স্বামী নুরুল আমিনসহ ১৭ জনকে ডেকে নিয়ে যায় সেনাবাহিনীর কাছে। ওই সময় পাঁচজনের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা করে আদায় করার পর তাদের ছেড়ে দিলেও আমার স্বামীসহ ১২ জনকে হত্যা করেছে সেনাবাহিনী। কিন্তু স্বামীর লাশ দেখার সেই সুযোগ পাইনি। চার মেয়ে ও তিন ছেলেসহ মোট আটজনকে নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি।’ তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গারা ঘরবাড়ি ছেড়ে বের হওয়ার পরপর মগেরা লুটপাট শুরু করে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গাদের বলেন, তোওয়া, তোওয়া। এর অর্থ হচ্ছে যা যা।

এ ছাড়া  মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘের একটি নির্ধারিত সফর হঠাৎ করে বাতিল করে দিয়েছে সে দেশের সরকার। ইয়াংগনে জাতিসংঘ মুখপাত্র স্তানিস্লাভ সেলিঙ বিবিসিকে জানান, সরকার এই সফর বাতিল করার পেছনে কোনো কারণ দেখায়নি।

ওদিকে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বলছে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের সংখ্যা গত কয়েকদিনে লক্ষণীয় রকমে কমে গেছে। তবে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম-এর একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, মিয়ানমার ছেড়ে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসা যে একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে এমন কথা বলার সময়এখনো আসেনি। ওদিকে, মিয়ানমারে কর্মরত একটি ত্রাণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির প্রধান এবং সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড মিলিব্যান্ড বলেছেন, যেসব দেশ বর্মী সেনাবাহিনীকে সমর্থন দেয় তাদের উচিত রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধের জন্য তাদের প্রভাবকে কাজে লাগানো। তিনি বলেন, এ সমর্থনকে মানবাধিকার লংঘনের কাজে ব্যবহার করা চলে না। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে তাতে সেখানে ‘জাতিগত শুদ্ধি অভিযান’ চলছে বলে অভিযোগও উঠেছে।

এমতাবস্থায়, রোহিঙ্গা মুসলমানদের মানবিক কারণ আশ্রয় দিয়ে আমরা কি কোন সমস্যা পড়লাম?  মানবিক কাজ করতে গিয়ে যদি আমরা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ি তাহলে আমরা কোথায় আশ্রয় নিব এটাও পরিস্কার নয়। কারণ রোহিঙ্গারা আমাদের কাছে এসেছে। কিন্তু আমরা কোথায় যাব? আমাদের যাওয়ার মত কোন প্রতিবেশী রাষ্ট্র কি আছে?

ড. এ কে এম রিপন আনসারী

এডিটর ইনচীফ

গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *