আবার মামলার জটিলতায় দেশের ক্রিকেট!

Slider খেলা

c5551b82def51a5f2e23e3dd87e78e90-59c61d9b738b1

 

 

 

 

বাংলাদেশ দল এখন ব্যস্ত দক্ষিণ আফ্রিকায়। বেনোনিতে তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ চলছে। কদিন পরই প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ। আলোচনায় এখন শুধু মাঠের ক্রিকেটই থাকার কথা। কিন্তু সেটি থাকছে কোথায়? ব্যাট-বলের লড়াই ছাপিয়ে চলে আসছে সংগঠকদের সেই পুরোনো বিবাদ, আইন-আদালতের বিষয়-আশয়।

বিসিবির গঠনতন্ত্র–সংক্রান্ত এক মামলায় গত ২৬ জুলাই দেওয়া আপিল বিভাগের রায় নিজেদের পক্ষে দাবি করে আগামী ২ অক্টোবর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ও বিশেষ সাধারণ সভার তারিখ ঘোষণা করেছে বোর্ডের বর্তমান পরিচালনা পরিষদ। এ মামলার বাদী স্থপতি মোবাশ্বের ১৬ সেপ্টেম্বর সাধারণ সভা, বিশেষ সভাসহ বোর্ডের সব কার্যক্রম বন্ধের জন্য বিসিবিকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন। অন্যদিকে, আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ২০১২ সালে সংশোধিত বিসিবির গঠনতন্ত্র এবং সে অনুযায়ী করা কাউন্সিলর তালিকাকে অবৈধ উল্লেখ করে এজিএম না করতে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসানকে চিঠি দিয়েছেন সাবের হোসেন চৌধুরী।
মোবাশ্বেরের আইনি নোটিশ ও সাবের হোসেনের চিঠির জবাবে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, এজিএম যথাসময়েই হবে।
তাহলে চলমান এই সংকটের পরবর্তী ধাপ কী? কাল প্রথম আলোকে মোবাশ্বের হোসেন জানিয়েছেন, তিনি আগামীকাল বা পরশু মামলা করবেন। তাতে হয়তো বিসিবির এজিএম স্থগিত হয়ে যেতে পারে। তখন কী হবে? আগের মতোই হয়তো স্থগিতাদেশ এনে বিসিবির বর্তমান বোর্ড চালিয়ে নিতে পারে নিজেদের কার্যক্রম। মাঠের ক্রিকেটে বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, সংগঠকেরা তখন হাঁটছেন পুরোনো পথ ধরে!
বিসিবির গঠনতন্ত্রে দুবার সংশোধনী আনা হয় ২০১২ সালে। প্রথম সংশোধনীটি আনার পর বার্ষিক সাধারণ সভার অনুমোদন ছাড়াই ওই বছরের ২৯ নভেম্বর গঠনতন্ত্রে দ্বিতীয়বারের মতো সংশোধনী আনে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। দ্বিতীয় সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিসিবির সাবেক পরিচালক স্থপতি মোবাশ্বের এবং জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের সভাপতি ইউসুফ জামিল (গত নভেম্বরে মারা গেছেন) ২০১২ সালের ডিসেম্বরে রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানির পর ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। একই সঙ্গে সংশোধিত গঠনতন্ত্রের ওপর স্থগিতাদেশও দেওয়া হয়। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি সংশোধনী গঠনতন্ত্র অবৈধ বলে রায় দেন আদালত।
পরদিন বিসিবি ও এনএসসির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত। পরে বিভিন্ন সময় বাড়ানো হয় স্থগিতাদেশ। স্থগিতাদেশ নিয়েই বিসিবির নির্বাচন হয় ২০১৩ সালের অক্টোবরে। নির্বাচিত সেই পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী মাসে।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল নিষ্পত্তি করে গত ২৬ জুলাই চূড়ান্ত রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত। এই রায়ে বলা হয়, গঠনতন্ত্রের সংশোধনের ক্ষমতা থাকছে বিসিবির হাতেই। এনএসসি সেটা হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। একই সঙ্গে হাইকোর্টের রায়ও সঠিক বলে মন্তব্য করেন আদালত।
মোবাশ্বেরের আইনি নোটিশ পাঠানো এই কারণেই, হাইকোর্টের রায় যেহেতু ‘সঠিক’ বলেছেন সর্বোচ্চ আদালত, তার মানে সংশোধনী গঠনতন্ত্র অবৈধ থাকছে। এই সংশোধিত গঠনতন্ত্রের অধীনে বর্তমান বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সব কার্যক্রম অবৈধ। আর অবৈধই যদি হয় তবে সামনে এজিএমও করতে পারে না বর্তমান বোর্ড।
কিন্তু বিসিবি সভাপতির কথা, ‘২০১২ সালের যে সংশোধিত গঠনতন্ত্র সেটা অনুযায়ী নির্বাচন হবে। আমরা ওটার মাধ্যমেই নির্বাচন করেছি।’ যথাসময়ে এজিএম করার ব্যাপারেও তিনি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী।
এজিএমটা না হলে কী ক্ষতি হতে পারে, সংবাদমাধ্যমের সামনে সেটিও তুলে ধরেছেন বিসিবি সভাপতি, ‘১০ অক্টোবর আইসিসির বোর্ড সভা। আমরা ৮ মিলিয়ন থেকে যে ১৬ মিলিয়ন ডলার পাব, সেই সিদ্ধান্ত হবে এই সভায়। ওখানে (এজিএম না হলে) আমাদের ঢুকতেই দেবে না। যদি বলেন আহ্বায়ক কমিটি করবে, আইসিসি সেটাও অনুমোদন করবে না। ক্রিকেটের অগ্রযাত্রা তারা বন্ধ করতে চায়।’
নাজমুলের দাবি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের অংশগ্রহণও বন্ধ হয়ে যাবে তখন। বিসিবির বর্তমান বোর্ডের প্রশ্ন, তাঁরা যদি অবৈধ হন, তবে গত চার বছরে বাংলাদেশ দল যে সাফল্য পেয়েছে সব মিথ্যে? প্রসঙ্গটা তুলতেই মোবাশ্বের হোসেনের পাল্টা প্রশ্ন, ‘বাংলাদেশে যখন সামরিক শাসন ছিল, তখন তারা যে রাস্তাগুলো বানিয়েছে, সেটা কি গণতান্ত্রিক সরকার এসে বন্ধ করে দিয়েছে?’
উন্নয়নের সঙ্গে আইনগত বৈধ-অবৈধের কোনো সম্পর্ক নেই, এটাই তাঁর যুক্তি। ক্রিকেটের উন্নয়নকে পুঁজি করে আইন না মেনে সবকিছু চলতে পারে না বলেই তাঁর মত।
কিন্তু বিসিবি সভাপতি যে বললেন, এজিএম না হলে বাংলাদেশের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে আইসিসির দুয়ার। মোবাশ্বেরের যুক্তি, ভারতের বর্তমান বোর্ডও তো নির্বাচিত নয়। সেটি চলছে আদালতের গঠন করা প্রশাসনিক কমিটি দিয়ে। তাঁর কথা, ‘সেটা যদি হয় ভারত-পাকিস্তানেরও আইসিসির দুয়ার বন্ধ হওয়ার কথা ছিল। সাময়িক আমাদের নির্বাচিত সভাপতি ঢুকতে পারবেন না, তাতে অসুবিধা কী? সিইও (বিসিবির প্রধান নির্বাহী) যাবেন।’
বিসিবি সভাপতির অভিযোগ, যাঁরা তাঁদের আইনি নোটিশ বা চিঠি দিয়েছেন, তাঁরা ২০০৮-এর গঠনতন্ত্রে ফিরে যেতে চান, যেটি আইসিসি অনুমোদিত নয়। মোবাশ্বের বিষয়টি উড়িয়ে দিলেন, ‘আমরা কোথাও বলিনি ২০০৮-এর গঠনতন্ত্রে ফিরে যেতে। আমরা বলছি, অবৈধ গঠনতন্ত্রের অধীনে আপনাদের অস্তিত্ব অবৈধ। আদালতই ঠিক করবেন সামনে কীভাবে, কোন গঠনতন্ত্রের অধীনে নির্বাচন হবে।’
২০১২ সালের ২৭ নভেম্বর মূলত বিসিবির নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তিন মাসের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল নাজমুল হাসানের অস্থায়ী কমিটিকে। সেই ‘তিন মাস’-এর জায়গায় তাঁদের নির্বাচন করতে লাগে ১১ মাস। এনএসসির কোটায় বিসিবি পরিচালক হয়ে এসে সভাপতি পদে নির্বাচনও করেন নাজমুল। মোবাশ্বেরের তাই প্রশ্ন, ‘তাঁকে পাঠানো হয়েছিল তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে, প্রজ্ঞাপনে সব লেখা আছে। তিনি নির্বাচন আয়োজন না করে নিজেই কেন দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন, তাঁকে এটা জিজ্ঞেস করুন।’
দুই পক্ষই তাদের অবস্থানে অনড়। মামলা-মোকদ্দমার আলামতও মিলছে। বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধান এখন কীভাবে হয়, সেটিই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *