আটক রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার জেলা পুলিশের কাছে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন, মিয়ানমারের আকিদাবাদ জেলার মংদু থানার কুয়ান শিবং গ্রামের আবদুছ ছবুর (৫১), তাঁর স্ত্রী আমিনা বেগম (৪২), ছেলে আবদুল হালিম (২৩) ও আছলম (৭), মেয়ে হালিমা (১৮), ছালিমা (১৫), হারিছা (১৩), ফারিছা (১০) ও উমামা (২), আবদুল হালিমের স্ত্রী উম্মুল খাইরি (২২), দেড় বছর বয়সী মেয়ে মোশারফা বেগম ও হালিমের শ্যালক কাওসার (৭)।
কাওসারকে আজ শুক্রবার সকালে এবং অন্যদের গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের গুটিলা গ্রাম থেকে আটক করা হয়। আজ দুপুরে তাহিরপুর থানা-পুলিশ তাদের সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইনসে পাঠায়।
পুলিশ লাইনসে আবদুছ ছবুর প্রথম আলোকে জানান, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার পর প্রাণ বাঁচাতে ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে তিনি পরিবারের ১৫ সদস্যকে নিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারের কুতুপালং এলাকায় আসেন। সেখানে শরণার্থীশিবিরে ছিলেন। চার মাস আগে কুতুপালং এলাকায় তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের গুটিলা গ্রামের আল আমিনের সঙ্গে পরিচয় হয় আবদুছ ছবুরের। পরে আল আমিনই তাদের এখানে নিয়ে আসেন। এখানে আসার পর স্থানীয় লোকজন তাদের থাকার একটি ঘর তৈরি করে দেন এবং আবদুস ছবুর স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতার চাকরি নেন।’
আবদুছ ছবুর আরও বলেন, তাঁর পাঁচ ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মধ্যে বর্তমানে দুই ছেলে চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসায় চাকরি করছেন। অন্যরা তাঁর সঙ্গেই আছেন। বৃহস্পতিবার রাতে তাহিরপুর থানার পুলিশ গুটিলা গ্রামে গেলে পরিবারের সবাই পুলিশের সঙ্গে থানায় আসেন। তিনি জানান, পুলিশ তাদের সঙ্গে খুবই ভালো আচরণ করছে। খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। শুক্রবার পুলিশ লাইনস জামে মসজিদের ছেলে হালিমকে নিয়ে জুমার নামাজও আদায় করেছেন।
আবদুছ ছবুর আরও বলেন, মিয়ানমার থেকে চলে আসার পর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আর কোনো যোগযোগ নেই। তারা বেঁচে আছেন, নাকি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের হত্যা করেছে সেটি জানেন না।
আবদুল হালিম আরও বলেন, ‘যেদিন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের বাড়িতে আগুন দেয় সেদিন সেখানে তাঁর সাত বছরের শ্যালক কাওসার ছিল। পালানোর সময় সেও তাদের সঙ্গে চলে আসে। কাওসারের মা-বাবা ও পরিবারে লোকজনের ভাগ্যে কী ঘটেছে সেটি আর জানতে পারেনি তারা।’
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নন্দন কান্তি ধর জানান, স্থানীয় লোকদের মাধ্যমেই রোহিঙ্গা পরিবারটি এলাকায় আছে বলে খবর পান। পরে তাদের থানায় নিয়ে আসা হয়। তিনি জানান, আটকৃকতদের কাছ থেকে স্থানীয় বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে নেওয়া পাঁচজনের নাগরিকত্বের সনদ জব্দ করেছে পুলিশ। এতে বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আপ্তাব উদ্দিনের স্বাক্ষর রয়েছে।
আপ্তাব উদ্দিন বলেছেন, তিনি স্থানীয় ইউপি সদস্যের সুপারিশে এই নাগরিকত্বের সনদ দিয়েছেন। এরা যে রোহিঙ্গা সেটা তিনি জানেন না।
সুনামগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ আজ বেলা আড়াইটার দিকে জানান, আটক রোহিঙ্গাদের সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের ব্যবস্থাপনায় কক্সবাজার জেলা পুলিশের কাছে পাঠানো হয়েছে। কক্সবাজার পুলিশই পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।