রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করা হচ্ছে: জাতিসংঘ

Slider সারাবিশ্ব

 

রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করা হচ্ছে: জাতিসংঘ

মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর পরিকল্পিত নির্যাতনের মাধ্যমে জাতিগতভাবে তাদের নির্মূল করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রধান জাইদ রাদ আল হুসেইন। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সীমান্তে স্থলমাইন বসাচ্ছে— এ মর্মে খবর পেয়েছেন বলেও জানান তিনি। গতকাল জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে দেয়া বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। খবর এএফপি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার প্রধান জাইদ রাদ আল হুসেইন বলেন, মিয়ানমার যেহেতু মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের সেখানে যেতে দিচ্ছে না, তাই বর্তমান পরিস্থিতির পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন সম্ভব হচ্ছে না। তবে মনে হচ্ছে, সেখানে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালানো হচ্ছে।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। দেশটির সরকারের অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা সেখানে গেছে। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সে দেশের সরকার ও বিভিন্ন গোষ্ঠীর নিপীড়নের ঘটনা অনেক দিনের। মিয়ানমারে নিপীড়নের কারণে কয়েক দশক ধরে রোহিঙ্গারা বিপুল সংখ্যায় বাংলাদেশ, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর চলমান অভিযানের কারণে এ পর্যন্ত ২ লাখ ৯৪ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া আরো বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি ছেড়ে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে খাদ্য ও পানীয় ছাড়া রাখাইন প্রদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলে সংস্থাটি জানায়।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা ও চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজতে গত বছর জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করে। কফি আনান কমিশন নামে পরিচিত ওই কমিটি রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানের পরামর্শ দিয়ে চলতি বছরের ২৩ আগস্ট মিয়ানমার সরকারের কাছে প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। এরপর ২৫ আগস্ট সশস্ত্র রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালায় বলে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় এবং বিদ্রোহীদের নির্মূলে অভিযানের ঘোষণা দেয়া হয়।

অভিযানে মিয়ানমার বাহিনী মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করছে এবং আন্তর্জাতিক আইনের মৌল নীতিগুলো লঙ্ঘন করছে বলে জাইদ রাদ আল হুসেইন অভিযোগ করেন।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রধান বলেন, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয় মিলিশিয়ারা রোহিঙ্গাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে, বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করছে, এমনকি পলায়নপর বেসামরিক মানুষকে গুলি করছে বলে অনেক খবর ও স্যাটেলাইট থেকে সংগৃহীত ছবি আমরা পেয়েছি।

তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকারের প্রতি আমি তাদের নিষ্ঠুর সামরিক অভিযান বন্ধ করার, অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো জবাবদিহিতায় আনার এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গুরুতর ও ব্যাপক বৈষম্য বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি।

জর্ডানের কূটনীতিক জাইদ রাদ আল হুসেইন বলেন, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরা ঠেকাতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সীমান্তে স্থলমাইন বসাচ্ছে জানতে পেরে তিনি মর্মাহত হয়েছেন।

‘নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারলে’ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে বলে মিয়ানমার সরকার যে ঘোষণা দিয়েছে, জাইদ রাদ আল হুসেইন তার সমালোচনা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৬২ সাল থেকে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও অন্যান্য অধিকার কেড়ে নিচ্ছে।

তিনি বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, জোরপূর্বক বিপুল সংখ্যক মানুষকে স্থানান্তর করে তাদের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা রুদ্ধ করার নৈরাশ্যবাদী চক্রান্ত চলছে।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রধান ‘রোহিঙ্গারা নিজেদের বাড়িঘরে আগুন দিচ্ছে’ এমন মিথ্যাচার না করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এভাবে বাস্তবতাকে সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করতে গিয়ে মিয়ানমার সরকার নিজের আন্তর্জাতিক ইমেজ ক্ষুণ্ন করছে। তারা মাত্র কিছুদিন আগেও বিশ্বসম্প্রদায়ের সৌহার্দ্য থেকে ব্যাপকভাবে লাভবান হয়েছে।

মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রধান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে জাতিসংঘ কর্মীদের ঘটনাস্থলে যেতে দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *