মিয়ানমার সংবাদমাধ্যমের দাবি রাখাইনে সহিংসতার জন্য দায়ী পাকিস্তান ও আইএস!

Slider জাতীয়
রাখাইনে সহিংসতার জন্য দায়ী পাকিস্তান ও আইএস!
প্রায় দুই সপ্তাহ যাবৎ রোহিঙ্গা ইস্যুতে উত্তাল মিয়ানমার ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতি অঙ্গন। এবার এ উত্তালে নতুন ঢেউ যোগ করলো মিয়ানমারের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম মিজিমা।

তাদের দাবি, রাখাইনে সহিংসতার জন্য দেশটির সেনাবাহিনী দায়ী নয়। এ বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড-দমননিপীড়নের পেছনে হাত রয়েছে পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসের। ভারত ও বাংলাদেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে মঙ্গলবার এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মিজিমা।আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির (আরসা) সামরিক শাখার প্রধান হাফিজ তোহারের ফোনে আসা তিনটি কলের সূত্র ধরে  ভারত ও বাংলাদেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানান বলে দাবি করে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যমটি। ২৩ ও ২৪ আগস্ট দীর্ঘ সময়ব্যাপী এসব ফোন কলে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ওপর হামলার বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। গত ২৫ আগস্ট ২০টির বেশি তল্লাশী চৌকিতে হামলা চালানো হয়। তারই সূত্র ধরে রাখাইনে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী।

মিজিমার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাফিজ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন পাকিস্তানের লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) এর কাছ থেকে। পরে তাকে নিয়োগ দেয় মংডুর কিয়ুক পিন সিয়েক গ্রামের হরকত উল জিহাদ আল ইসলামি-আরাকান (হুজি-আ) আব্দুল কাদুস বার্মি। হাফিজ নিজেও আকা মুল মুজাহিদীন (এএমএম) নামের একটি দল গড়েন। যেটি পরে আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) এর সঙ্গে এক হয়ে যায়।

২৩ আগস্ট রাত ১১.৩২ মিনিটে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইনটেলিজেন্স (আইএসআই) এর কর্মকর্তা আশফাকের কাছ থেকে হাফিজ তোহারের ফোনে আসা কলের সূত্র ধরে প্রথমে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা এটি বুঝতে পারে। ৩৪ মিনিট ব্যাপী ওই ফোন কলে বলা হয় তারা হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত। তবে দীর্ঘ পরিকল্পনার জন্য আরও সময় প্রয়োজন। ২৪ আগস্ট রাতের আগে হামলা চালানো যাবে না।

সাংকেতিক ভাষায় ব্যবহার করা হয় এসব ফোন কলে। পরে বাংলাদেশি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ভারতীয় গোয়েন্দাদের বিষয়টি জানায়।

আশফাক ফোনে হাফিজ তোহারকে বলেন, ‘কালা আদমি রিপোর্টে দিতেহি হামলা হো’। তোহার উত্তর দিয়েছিলেন, ‘জ্বি জনাব। জো হুকুম। পার ২৪ রাত সে পেহলে নাহি হোগা। ‘ (২৪ রাতের আগে এটা করা যাবে না।

‘কালা আদমি’ বা ‘কালো মানুষ’ বলতে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানকেই বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ পাকিস্তানের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইনটেলিজেন্স (আইএসআই) কর্মকর্তা আশফাক রোহিঙ্গা ইস্যুতে কফি আনানের রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পরপরই হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।

দ্বিতীয় কলটি এসেছিল ২৪ আগস্ট বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ১৩ মিনিটে। ২৮ মিনিটের ওই ফোন কলে হাফিজ তোহারকে  আশফাক বলেন, ‘কালা আদমি (কফি আনান) রিপোর্ট পাবলিক (প্রকাশ) করতে যাচ্ছে। ‘ হাফিজ তোহার বলেন, ‘আর কয়েক মিনিট বাকি। ‘ আশফাক যতদ্রুত সম্ভব হামলা চালানোর অনুরোধ করেন। হাফিজ তোহার বলেন, ‘নির্দেশনা দেয়ার পর ‘রানারদের’ (বার্তাবাহক) সব আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি) স্কোয়াডে পাঠানো হয়েছে। মধ্যরাতে হামলা চালানো হবে। ‘ আশফাক উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘দের কিউ কর রাহা হো ?'(দেরি কেনো করছো?)। হাফিজ তোহার উত্তর দেন, ‘মেসেজ পৌঁছানেমে টাইম লাগতা হ্যায় স্যার। ‘ (বার্তা পাঠাতো সময় লাগে)।

বিকেল ৬.০২ মিনিটে ইরাক থেকে তৃতীয় কলটি কল আসে। কল করা ব্যক্তি নিজেকে ‘আল আদমি অব দায়েশ’ (আইএসের কর্মীরা দায়েশ নামে পরিচিত) বলে তোহারকে পরিচয় দেয়। ১৪ মিনিটের ওই কলটিতে বলা হয়, ‘আইএস জানে আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) বার্মার উপনিবেশবাদী, বৌদ্ধ ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে ভালোভাবেই জিহাদ করবে। ‘

কূটনীতি মহলের শঙ্কা রোহিঙ্গা ইস্যুতে নতুনভাবে এ অঞ্চলে মাথা চাড়া দিতে পারে আইএস। কারণ ইরাক ও সিরিয়ায় সাম্প্রতিককালে বেশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এই সন্ত্রাসী সংগঠন। আর রোহিঙ্গা ইস্যুকে তারা পূঁজি করে তাদের কার্যক্রম এ অঞ্চলে বাড়াতে পারে বলে শঙ্কা জাগাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *