কাঙ্ক্ষিত চামড়া পাচ্ছে না আড়তগুলো

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

 

কাঙ্ক্ষিত চামড়া পাচ্ছে  না আড়তগুলো

ঈদের পর দুদিন চলে গেলেও আড়তগুলোয় কাঙ্ক্ষিত চামড়া আসছে না। সিংহভাগ চামড়া বিভিন্ন অঞ্চলের ফড়িয়াদের হাতে থাকায় তা পাচার হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে চামড়া পাচার রোধে সীমান্তগুলোয় কড়া নজরদারির কথা জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

রাজধানীর ট্যানারি মালিক ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছর ঈদের দুদিনের মধ্যে রাজধানীর পোস্তা এলাকায় সাত থেকে সাড়ে সাত লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু এ বছর আড়াই  লাখ চামড়াও সংগ্রহ করতে পারেনি আড়তগুলো।

চামড়া পাচারের আশঙ্কা করছেন ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ। তিনি বলেন, ১৫৪টি ট্যানারির মধ্যে মাত্র ৩০টি সাভারে পরিপূর্ণভাবে স্থানান্তর করতে সক্ষম হয়েছে ও উত্পাদনে গেছে। বিশাল এ শিল্পকে হঠাত্ করে স্থানান্তর করতে গিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বিপুল পরিমাণ চামড়া ফড়িয়াদের হাতে থাকায় তা পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচার যাতে না হয়, সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন ট্যানারি মালিকরা। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ট্যানারি মালিকরা জানান, আগামী সপ্তাহে চামড়া কেনা শুরু করবেন তারা। এবার দাম কম হওয়ায় পশুর চামড়া পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেটা যাতে না হয়, সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন।

তবে কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় আড়তগুলোয় চামড়া দিতে পারছেন না বলে দাবি কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের। এ কারণে তারা নিজেরাই চামড়া সংরক্ষণ করছেন। চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী রফিকুল কাদের বলেন, চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছি। কিন্তু আড়তদাররা গরুর চামড়া প্রতি পিস মাত্র ৫০০-৭০০ টাকায় কিনতে চান। কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় নিজেরাই চামড়া সংরক্ষণ করছি। কয়েক দিন পর দাম বাড়লে বিক্রি করব।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-চন্দনাইশ এলাকা থেকে প্রায় ২০ হাজার গরুর চামড়া সংগ্রহ করেন আরেক ব্যবসায়ী মো. মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, ঈদের দিনই প্রায় পাঁচ হাজার চামড়া বিক্রির জন্য পাইকারি আড়তে যাই। ওই সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা প্রতি পিস গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছিল মাত্র ৬০০-৭০০ টাকায়। তাই প্রথম দফায় ওই পাঁচ হাজার চামড়া বিক্রি করলেও বাকি চামড়া আড়তে না এনে নিজেই সংরক্ষণ করছি।

জানা গেছে, ঈদের তৃতীয় দিন গতকালও কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেননি চট্টগ্রামের আড়তদাররা। চট্টগ্রামে এবার পাঁচ লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলেন আড়তদাররা। গতকাল পর্যন্ত এর অর্ধেক চামড়াও সংগ্রহ করতে পারেননি তারা।

আড়তদাররা বলছেন, আগে গ্রামগঞ্জে চামড়ায় লবণ দেয়া হতো না। আড়তে এনে লবণ দেয়া হতো। এবার এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। ফলে আড়াই-তিন লাখ কাঁচা চামড়া এখনো রয়ে গেছে গ্রামগঞ্জে বেপারিদের কাছে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সহসভাপতি আবদুল কাদের বলেন, ব্যবসায়ীরা মাঠপর্যায় থেকে প্রতি পিস চামড়া কিনেছেন ২০০-৫০০ টাকায়। সেই চামড়া আড়তে এনে দাম চান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত ট্যানারি না থাকা ও ঢাকার ট্যানারি মালিকদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় আড়তদাররা ওই দামে চামড়া কিনতে পারছেন না।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, আড়তে যেসব চামড়া এসেছে, রোববার থেকে সেগুলো লবণ দিয়ে শুকানোর কাজ চলছে। প্রতি বছরের মতো ১৫ দিন পর ট্যানারি মালিকরা এসে চামড়া নিয়ে যাবেন।

কাঙ্ক্ষিত চামড়া সংগ্রহ করতে পারেননি খুলনার আড়তদাররাও। তাদের মতে, আগে ঈদে নগরীর শেখপাড়া চামড়াপট্টিতে ১৫-২০ হাজার চামড়া সংগ্রহ হলেও এবার হয়েছে মাত্র পাঁচ-ছয় হাজার।

চামড়াপট্টির আইয়ুব লেদারের মো. নাসিম হোসেন জানান, গত বছর তিন হাজারের বেশি চামড়া পেয়েছিলেন তিনি। এ বছর ঈদের দ্বিতীয় দিন দুপুর পর্যন্ত চামড়া পাওয়া গেছে ১ হাজার ২০০ পিস। এ অঞ্চলে এত কম চামড়া পাওয়ার কথা নয়।

গত বছর প্রায় তিন হাজার চামড়া পেয়েছিলেন বলে জানান ইমুন লেদার কমপ্লেক্সের শহিদুল ইসলাম। কিন্তু এ বছর অর্ধেক চামড়াও পাননি এ আড়তদার।

আড়তে চামড়া না আসায় তা পাচার হওয়ার আশঙ্কা করছেন আড়তদাররা। যদিও বিজিবি বলছে, চামড়া পাচার ঠেকাতে তারা কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে।

যশোর ২৬ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফুল হক বলেন, চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে কড়া সতর্কতা বজায় রাখা হয়েছে। ফলে পাচারকারীরা সুবিধা করতে পারবে না। হাটগুলো থেকে ব্যবসায়ীরা যাতে চামড়া ফেরত নিয়ে আসতে না পারেন, সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। প্রধান সড়ক ছাড়া কোনো আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে চামড়া পরিবহন ঠেকাতে বিজিবি সদস্যদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *