পাল্লা দিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর কাজ

Slider অর্থ ও বাণিজ্য জাতীয়
পাল্লা দিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর কাজ
দেশের অন্যতম মেঘা প্রকল্প পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নানামুখী কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। সেতুর উভয় পাড়ে সংযোগ সড়ক ও টোল প্লাজার কাজ প্রায় শেষ।

চলছে নদী শাসন, নদী শাসনের জন্য বিপুল পরিমাণ ব্লক তৈরি, ড্রেজিংয়ের কাজসহ বিভিন্ন স্থানে স্লপিংয়ের কাজ। যে দিকে তাকাবেন শুধু কাজ আর কাজ। পদ্মা সেতুর বিশাল এই কর্মযজ্ঞ রাতের আঁধারকেও হার মানিয়েছে। পদ্মায় প্রবল সে াতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দ্রুত এগিয়ে চলছে সেতু নির্মাণকাজ। ইতিহাসের সাক্ষী হতে ইতিমধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলার দুটি। এখন বসবে পিলার দুটির উপরে ক্যাপ তার পরেই স্প্যান বসানো শুরু হবে। ইতিমধ্যে পিলার দুটির ক্যাপ ঢালাইয়ের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ঈদের পরেই ঢালাই কাজ সম্পন্ন হবে এবং ক্যাপ ঢালাইয়ের ১৫ থেকে ২০ দিন পরেই পিলারের ওপর বসানো হবে সুপারস্ট্রাকচার বা স্প্যান। তখন দেখা যাবে পদ্মা সেতুর বাস্তব দৃশ্য।জাজিরা প্রান্তে প্রথমে ৩৭ নম্বর পিলারের এবং পরে ৩৮ নম্বর পিলারে দ্বিতীয় ধাপের ঢালাইয়ের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন এই পিলার দুটির চূড়ান্ত ধাপ ক্যাপ ঢালাইয়ের সব প্রস্তুতি চলছে। ক্যাপের জন্য রডের বিশাল খাঁচা তৈরি করা হচ্ছে মাওয়ার কুমারভোগ এলাকার কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের পাশে ভাসমান জেটিতে। ঈদের পরপরই প্রথমে ৩৭ নম্বর পিলার এবং তার দুই একদিন পর ৩৮ নম্বর পিলারে ক্যাপ ঢালাই সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার তোফাজ্জল হোসেন। তিনি জানান, পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের কাজের পাশাপাশি এগিয়ে চলছে একই প্রান্তের ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের কাজ। ইতিমধ্যে ৩৯ নম্বর পিলারে পাইল কেপিং শেষ করে এখন ওই পিলারে রড বাঁধাই হচ্ছে। শিগগিরই এই পিলারটির প্রথম ধাপে ঢালাই হবে এবং ৪০ নম্বর পিলারে পাইল ক্যাপিংয়ের বটম সেকশনের কাজও চলছে। ৪০ নম্বর পিলারের কেপিং শেষ হলেই সেটিরও প্রথম ধাপের ঢালাই হবে। এরপর একে একে ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের দ্বিতীয় ধাপের ঢালাই শেষে ক্যাপ ঢালাই করে তার পর স্প্যান বসানো হবে। তখন ওই চারটি পিলারে ৩টি স্প্যান বসালে এক সঙ্গে প্রায় ৪৫০ মিটার পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হবে। এদিকে ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের পাইল ড্রাইভ অব্যাহত আছে। এসব পাইলে বিশ্বের সেরা সেরা হাইড্রোলিক হ্যামার ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৯০০ কিলো জুল, ২৪০০ কিলো জুল এবং ৩ হাজার কিলো জুল ক্ষমতা সম্পন্ন হাইড্রোলিক হ্যামার। একই সঙ্গে ৪২ নম্বর পিলারে ১৬টি পাইলের কংক্রিটিংও এগিয়ে চলছে। এ ছাড়াও পদ্মা সেতুর ১৪টি পিলারের চূড়ান্ত ডিজাইন অনুমোদনের কাজ চলছে। ব্রিটিশ ‘কাউই’ নামের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এ কাজ করছে। আগামী মাসে ডিজাইনটি অনুমোদনের সম্ভাবনার কথা নিশ্চিত করেছেন দায়িত্বশীলরা। এর পর কাজের গতি আরও কয়েক গুণ বাড়ানো হবে।

এ দিকে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে ১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর পিলারে পাইল ড্রাইভ কাজ শুরু হয়েছে। দিন-রাত হ্যামারের প্রতিধ্বনিতে পদ্মাপাড়ে উৎসবের আমেজ বইছে। দেশি-বিদেশি প্রায় বিশ হাজারেরও বেশি মানুষ দেশের অন্যতম মেঘা প্রকল্প পদ্মাবহুমুখী সেতু প্রকল্পে কাজ করছে। এ কাজ বিশ্বের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং কাজ এবং বাংলাদেশের এই প্রথম এত বড় প্রকল্প যা নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। দেশের দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষ এই সেতুর জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। ঈদ আসলেই মাওয়া-কাওড়াকান্দি বা শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে চলাচলকারী মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হয়। এই সেতু বাস্তবায়ন হলে তার অবসান হবে। এ ছাড়া দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সড়ক পথে এই সেতু এক মাইল ফলক। এই সেতু বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণ অঞ্চলে গড়ে উঠবে শিল্পকারখানা। প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে, দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে পরিণত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *