রাখাইনে গ্রামের পর গ্রামে আগুন

Slider সারাবিশ্ব

81081_b5

 

 

 

 

আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের কমপক্ষে ১০টি এলাকা। ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই অগ্নিকাণ্ডের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। স্যাটেলাইটের ছবিতে দেখা গেছে, ২৫শে আগস্ট বিকালে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে রাথেডং শহরের কাছে জাই ডি পিইন এবং কোয়ে তান কাউক গ্রাম। ২৮শে আগস্ট পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে কমপক্ষে আটটি জনবসতি। এসব জনবসতি বা গ্রাম মংডু শহরে বা এর আশপাশে অবস্থিত। এসব স্থানে আগুন শনাক্ত করতে পেরেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের স্যাটেলাইট। তবে কে বা কারা অগ্নিসংযোগ করেছে তা নিশ্চিত হতে পারে নি তারা। মানবাধিকার বিষয়ক এ সংগঠনটি আরো বলেছে, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে আরো অনেক স্থানে আগুন দেয়া হয়েছে। কিন্তু তা স্যাটেলাইটে ধরা সম্ভব হয়নি। কারণ স্যাটেলাইটের সেন্সর রেজুলুশন ছিল সীমিত। আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। স্যাটেলাইটে পাওয়া ছবির সঙ্গে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রত্যক্ষদর্শী, মিডিয়ার বিবরণ মিলিয়ে দেখেছে। তাং পাইও লেট ইয়ার গ্রাম থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন এমন একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, সন্ত্রাসীদের ধরার নামে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করছে। বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে। সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। হিউম্যান রাইট ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক উপ পরিচালক ফিল রবার্টসন বলেছেন, স্যাটেলাইটে পাওয়া নতুন এসব ডাটা থেকে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। দাতা ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার উচিত মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো, যাতে তারা রাখাইনে চলমান ধ্বংসযজ্ঞ প্রকাশ করে। বিদ্রোহীদের শুধু দায়ী করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা থেকে রেহাই পেতে পারে না মিয়ানমার সরকার। গত ২৫শে আগস্ট আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মির সদস্যরা কমপক্ষে দু’ডজন পুলিশ পোস্ট ও চেকপোস্টে হামলা চালায়। এর পর পরই সরকার জানান দেয়, লড়াইয়ে কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জন নিরাপত্তা রক্ষাকারী। সেই নিহতের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ লিখেছে, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে সেনাবাহিনীর ৩৩তম লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন মেতায়েনকে কেন্দ্র করে ওই হামলা হয়। এরপরই সরকার ওই এলাকায় অভিযান জোরালো করেছে। নির্যাতন, নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মি ও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী একে অন্যকে দায়ী করছে। এরই মধ্যে কয়েক হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়েছে চলমান এই লড়াইকে কেন্দ্র করে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, তবে এবারের অগ্নিকাণ্ডের কারণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি প্রযুক্তি ব্যবহার করে। তবে ২০১২ ও ২০১৬ সালের সহিংসতায় যেভাবে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল তার সঙ্গে এর মিল রয়েছে।
২০১৬ সালের অক্টোবরে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনী দমনপীড়ন চালানোর সময় যে পরিমাণ বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল- এবার তার চেয়ে অনেক বেশি এলাকা পুড়ে গেছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সেখানকার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের পর পাওয়া স্যাটেলাইট ছবিতে এমন প্রমাণ দেখতে পেয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। আগুনে পোড়া ওই এলাকা পরিদর্শনে যেতে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের যেতে দিতেও দাবি করেছে এ সংগঠনটি। পাশাপাশি বলা হয়েছে, সেখানে  মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।  স্থানীয় অধিবাসী ও অধিকারকর্মীরা নিরস্ত্র নারী, শিশু, পুরুষের ওপর বাছবিচারহীনভাবে গুলি চালানোর জন্য অভিযুক্ত করছে সেনাবাহিনীকে। বলা হচ্ছে, তারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে সব। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলছে, শুক্রবার শুরু হওয়া সহিংসতায় প্রায় ১০০ মানুষ নিহত হয়েছে। শুক্রবার ভোরে সেখানে ৩০টি চেকপোস্টে সন্ত্রাসী হামলা চালায় আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মি। মিয়ানমার সরকার বলেছে, সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়াইকালে বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে রোহিঙ্গা উগ্রপন্থি সন্ত্রাসীরা। অন্যদিকে রোহিঙ্গারা দায়ী করছে সেনাবাহিনীকে। সেনাবাহিনী বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছে, মিয়ানমার সরকারের উচিত ওই অগ্নিকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করে এর কারণ উদঘাটনে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষককে সেখানে যেতে অনুমতি দেয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *