পায়ে সুচ ঢুকিয়ে কিশোরকে ১৬ ঘণ্টা নির্যাতন

Slider জাতীয় নারী ও শিশু
পায়ে সুচ ঢুকিয়ে কিশোরকে ১৬ ঘণ্টা নির্যাতন
নওগাঁর রানীনগরে চুরির অপবাদ দিয়ে পায়ের পাতা ও আঙ্গুলে সুচ ঢুকিয়ে ও দড়ি দিয়ে বেঁধে শরিফুল ইসলাম (১৫) নামে এক কিশোরকে ১৬ ঘণ্টা নির্যাতন করা হয়েছে। এসময় ওই কিশোর পা ধরে অনুনয় বিনয় করার পরও তাকে ছেড়ে দেয়া হয়নি।

কিশোর শরিফুল ইসলাম রানীনগরের কালিগ্রাম ইউনিয়নের কালিগ্রামের মুন্সিপাড়ায়র প্রবাসী জামাল উদ্দিন আকন্দের ছেলে। পুলিশ ঘটনাস্থলে থেকে কিশোরকে উদ্ধার না করেই থানায় ফিরে আসে। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে এক চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সোমবার নওগাঁ সদর হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগে শিশু ওয়ার্ডের ৩৬নং বেডে নির্যাতনের যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে দেখা গেছে কিশোর শরিফুলকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে শরিফুল ইসলাম বাড়িতে শুয়ে ছিল। প্রতিবেশী আব্দুল খালেক কাজ আছে বলে শরিফুলকে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। এসময় শরিফুলকে তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর বাড়ির দরজা বন্ধ করে দেয় খালেক।

এরপর হাজী আক্কাস আলী, তার ছেলে জিয়ারুল ও টিপুকে বাড়িতে ডেকে নেয় খালেক। খালেক টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে শরিফুলকে লাঠি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। পরে গলায় গামছা পেঁচিয়ে ৪-৫ মিনিট ধরে টানা হেঁচড়া ও শ্বাসরোধের চেষ্টা করে।

এরপর শরিফুলকে রশি দিয়ে বেঁধে চারজন মিলে লাঠি আঘাত করতে থাক। এসময় চিৎকার চেঁচামেচি করায় কৌশলে শরিফুলকে বাড়ির পাশের একটি জঙলের ধারে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেখানে কয়েক দফা নির্যাতন চালানো হয়। প্রতিবেশীরা বিষয়টি বুঝতে পেরে তাদের মারপিট করার জন্য নিষেধ করে।

বিষয়টি তার মা আয়েশাকে জানানো হলে ছুটে যান সেখানে। তাদের হাত-পা ধরেও কোন কাজ হয়নি। খবর পেয়ে রাত ৮টায় পুলিশের এসআই শফিকুর রহমান ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার না করেই থানায় ফিরে যায়। রাতে কিশোরকে খালেকের বাড়িতে রাখা হয় এবং আবারও নির্যাতন চালানো হয়।

শনিবার সকালে মা আয়েশা থানায় যান এবং পুলিশের কাছে ছেলেকে উদ্ধারের অনুরোধ করেন। সারাদিন গেলেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অবশেষে রাত ৮টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পুনরায় কিশোর শরিফুলকে উদ্ধার করে এবং রানীননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এসময় ঘটনার মূলহোতা আব্দুল খালেককে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। উন্নত চিকিৎসার জন্য রবিবার সকালে নওগাঁ সদর হাসপাতালে অর্থোপেডিক বিভাগে ভর্তি করানো হয় ওই কিশোরকে।

নির্যাতনের শিকার শরিফুল জানায়, কাজ করে নিবে বলে খালেক আমাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে চারজন মিলে কয়েক দফা মারপিট করে। খালেক বলে- তুই আমার ২০ হাজার টাকা নিয়েছিস, কখনো বলে ৫০ হাজার এবং সোনাদানা চুরি করেছিস। তার টাকা কবে হারিয়েছে সেটাও আমি জানি না বা চুরি করিনি।

শরিফুলের মা আয়েশা বলেন, মারপিটের কারণে আমার ছেলে রক্ত বমি করেছে। তাদের আমি হাত-পা ধরেছি ছেলেকে ছেড়ে দেয়ার জন্য। তারপরও আবার নির্যাতন চালানো হয়েছে। প্রথম দিনে পুলিশকে জানানো হলেও পুলিশ আমার ছেলেকে উদ্ধার না করে চলে আসে। ছেলেকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।

কালিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে শরিফুলের হাত বাঁধা অবস্থায় দেখিছিলাম। তার শরীরে নির্যাতনের চিহ্নি দেখা যাচ্ছে। তাদের বলার পর তারা হাতের বাঁধন খুলে দেয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় সেখানে পুলিশ গিয়েছিল। তবে ছেলেটি চুরি করেছে কি না এ বিষয়টি তার জানা নেই।

রানীনগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শফিকুর রহমান বলেন, ওই এলাকায় একজন আসামিকে আটক করতে গিয়েছিলাম। বিষয়টি জানার পর ওসি স্যারকে জানিয়েছি। তবে ঘটনাস্থলে শুক্রবার আমি যায়নি। পরের দিন শনিবার কিশোরের মাকে সাথে নিয়ে তাকে উদ্ধার করে।

রানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রধান আসামি আব্দুল খালেককে শনিবার রাতে আটক করা হয়েছে। ওই ছেলের মা আয়েশা বাদী হয়ে শিশু নির্যাতন আইনে আব্দুল খালেককে প্রধান আসামি করে চারজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আদালতের মাধ্যমে নওগাঁ জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশের দায়িত্বহীনতার বিষয়টিতে অস্বীকার করে বলেন, আমরা বিষয়টি জানার পরই ঘটনাস্থল থেকে ওই কিশোরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি এবং চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *