সীমান্তে হেলিকপ্টার টহল, মিয়ানমারের সাথে সংঘাত বাড়ার শঙ্কা

Slider সারাবিশ্ব
সীমান্তে হেলিকপ্টার টহল, মিয়ানমারের সাথে সংঘাত বাড়ার শঙ্কা
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে রাত হলেই শোনা যায় গুলির শব্দ ও মানুষের চিৎকার। দেখা যাচ্ছে ধোঁয়া ও আগুনের লেলিহান শিখা।

আর অনুপ্রবেশের আশায় সীমান্তের সরু খাল বেয়ে বা কাঁটাতারের বেড়া গলিয়ে আসছে আক্রান্ত শত শত রোহিঙ্গা নারী ও শিশু।মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে হত্যাযজ্ঞ শুরুর পর দলে দলে ঘর ছাড়ছেন তারা। রবিবারও সীমান্ত এলাকা ছিল বেশ থমথমে।

স্থানীয়রা ধারণা করছেন, ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ফলে এবারের সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। ফলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ভাগ্যে কী ঘটবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। আর শনিবার মধ্যরাত থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত অন্তত ৫ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ করেছে। এছাড়া সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অত্যন্ত মানবেতন অবস্থায় আছেন তারা। ফলে বড় ধরনের মানবিক বির্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে, রবিবার দুপুর ও বিকালে ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার টহল দিতে দেখা গেছে। তবে রোববার ওপার থেকে গুলির শব্দ আর তেমন শোনা যায়নি।

অন্যদিকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে রাত-দিন অতন্ত্র প্রহরীর মতো সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি।
সীমান্তে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে আরও ১৫ হাজার সদস্য বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানান বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আবুল হোসেন।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমারের বাহিনী বা কোনো সন্ত্রাসী দলের অনুপ্রবেশ শক্ত হাতে মোকাবেলার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

পলিথিনের ছাউনি দিয়ে সেখানে গাদাগাদি করে অসহায় এসব রোহিঙ্গারা শুক্রবার থেকে কখনও রোদে পুড়ছেন, কখনও বৃষ্টিতে ভিজছেন। প্রচণ্ড রোদের সঙ্গে ক্ষুধায় কাঁদছে শিশুরা। আশপাশের মানুষ মুড়ি, বিস্কুটসহ শুকনো খাবার দিয়ে গেলেও তা একদমই কম। ফলে খাবার আনার সঙ্গে সঙ্গেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে তারা।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার ৩৪-বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর কাজী মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘যারা বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে অনুপ্রবেশ করছেন, তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে না। স্থানীয়রা তাদের খাবার-দাবার দিচ্ছে। ‘

রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমঘুমের জলপাইতলি জিরোপয়েন্ট, তমব্রু, কলাতলী পয়েন্ট, পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমান পাড়ার রহমতের বিল, উলুবুনিয়ার সীমান্ত, হোয়াইকংয়ের সীমান্ত পয়েন্টে থেমে থেমে এপারে ঢুকেছেন আরও অনেক রোহিঙ্গা নারী ও শিশু।

বিগত কয়েক দশক ধরেই রক্তাক্ত মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন। রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিমদের দেশটির নাগরিক হিসেবে স্বীকার করেনি জান্তা সরকার। মাঝে মাঝেই তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতনের নির্মমতা।
নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে উগ্রপন্থী বৌদ্ধারাও চালায় হত্যাযজ্ঞ। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া আর রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ যেন নিত্য ব্যাপার।

চলতি মাসের শুরুতে রাখাইনে সেনা মোতায়েন করে মিয়ানমার সরকার। ঘোষণা দেয় অভিযানের। এরই মধ্যে গ্রামের পর গ্রাম রোহিঙ্গাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর বদলা নিতেই রোহিঙ্গা যোদ্ধারা অন্তত ২৫টি পুলিশ পোস্টে হামলা ও একটি সেনাঘাঁটিতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়।

গত বছরের অক্টোবরে এমনই এক হামলার ঘটনায় জাতিসংঘের সাবেক প্রধান কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন তাদের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার এবং তাদের নাগরিকত্ব প্রদানের আহ্বান জানায়। এরপর কয়েক ঘণ্টা পরই বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে।

এই সংঘর্ষে রবিবার সকাল পর্যন্ত ৯৬ জন নিহতের খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। এর মধ্যে ৮৪ রোহিঙ্গা মুসলিম আর ১২ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *