মালয়েশিয়ায় দ্বিতীয় আবাস গড়তে বিনিয়োগ; ১০৫০ বাংলাদেশি চিহ্নিত

Slider টপ নিউজ
মালয়েশিয়ায় দ্বিতীয় আবাস গড়তে বিনিয়োগ; ১০৫০ বাংলাদেশি চিহ্নিত

মালয়েশিয়া দ্বিতীয় আবাসস্থল গড়তে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের কথা শোনা যাচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। সেকেন্ড হোম বা দ্বিতীয় আবাস গড়তে মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগ করেছেন এমন ১০৫০ বাংলাদেশিকে চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

চিহ্নিত ওই বাংলাদেশিদের মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও প্রবাসীদের নাম। তাদের বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহে নতুন কৌশল নিয়েছে সংস্থাটি। এবার ওই ১০৫০ বাংলাদেশি নাগরিকের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ সংগ্রহ করেই মালয়শিয়ায় মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলআর) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এর অংশ হিসেবে যে সকল বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় আবাস গড়েছেন তাদের বিভিন্ন তথ্য চেয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছে দুদক। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র চিহ্নিত বাংলাদেশির সংখ্যার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও অনুসন্ধানের স্বার্থে বিস্তারিত তথ্য জানাতে অস্বীকার করে।

তবে দুদকের অন্য একটি সূত্র জানায়, দুদকের অনুসন্ধানে পাওয়া ১০৫০ জন বাংলাদেশির একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানে বিনিয়োগের প্রমাণ পাওয়ার পরই তাদের নাম ও পাসপোর্ট নম্বর সংগ্রহ করে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান কর্মকর্তা।

গত ১২ আগস্ট ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে ১০৫০ জন ব্যাক্তি ও পাসপোর্টধারীর স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা এবং পাসপোর্ট নম্বরের আদ্যক্ষরের ব্যাখ্যাসহ সংশ্লিস্ট তথ্যাদি চাওয়া হয়েছে। যা আগামি ৩০ আগস্টের মধ্যে ‍দুদকে পাঠানোর বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (পরিচালক) বলেন, এর আগে বেশ কয়েকজন ভিআইপি ব্যক্তির বিষয়ে মালয়েশিয়ায় এমএলআর পাঠিয়েছিল দুদক। এমএলআরের জবাব পাওয়া গেলেও মেলেনি কাঙ্ক্ষিত তথ্য। কারণ হিসেবে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তালিকা ধরে একসঙ্গে সকল ব্যক্তির তথ্য দেওয়া মালয় সরকারের নীতিবহির্ভূত। মালয়েশিয়া থেকে তথ্য পেতে আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণসহ এমএলআর পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছে মালয়েশিয়া সরকার। তাই যেসব ব্যক্তি সেকেন্ড হোম হিসেবে মালয়েশিয়ায় আবাস গড়েছেন তাদের সম্পর্কে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করার জন্য এবার দুদক ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, মালায়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম প্রজেক্টে বিনিয়োগ করা অপরাধ নয়। ওই ব্যক্তি বিনিয়োগ করতে গিয়ে দেশের অর্থ পাচার করেছেন নাকি বৈধ পথে অর্থ বিদেশে নিয়ে গেছেন, অর্থ্যাৎ মানিলন্ডারিং সংশ্লিষ্ট অপরাধ খোঁজাই দুদকের লক্ষ্য।

এর আগে ১৩ জন হাই প্রোফাইল ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করেছিল দুদক। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যাপারে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ার কথা বলে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমে বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রমাণ পাঠায়নি মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে দুদকের এক সচিব (সদ্য পিআরএলে যাওয়া) বলেন, অর্থ পাচার করে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমে বিনিয়োগ করেছেন এমন অভিযোগে দুদকের তদন্ত চলছে। এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়া থেকে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বিনিয়োগের নামে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে অনুসন্ধানে নামে দুদক। অভিযোগ অনুসন্ধানে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের তালিকা থেকে শতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

অভিযোগে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদের শেষ দিকে বিদেশে পাড়ি জমানোর জন্য সেকেন্ড হোম প্রকল্পে নতুন করে আবেদন করেছিলেন ৬৪৮ বিশিষ্ট ব্যক্তি। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ২৮৭ জন, বিএনপি-জামায়াতের ৯৬ জন এবং বাকি ২৬৫ জন সুবিধাভোগী শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও আমলা। আর পাঁচ বছরে অন্তত চার হাজার ৯৮৬ কোটি টাকার সমপরিমাণ মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার করেছে সংশ্লিষ্টরা। মূল কারণ হলো, কালো টাকা বিদেশে পাচার করা। আর এদের পছন্দের তালিকায় সবার ওপরে মালয়েশিয়া। এর পরেই রয়েছে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর এবং মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ। এ দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে ‘বিনিয়োগকারী’, ‘উদ্যোক্তা’ ও ‘স্ব-কর্মসংস্থান’ কোটায় সহজেই ভিসা দিচ্ছে।

গত এক যুগে অন্তত ৩ হাজার ৩৪৫ জন বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম সুবিধা নিয়েছেন। এতে পাচার হয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। মালয়েশিয়ার সরকার ২০০২ সালে বিশেষ কর্মসূচির আওতায় ‘সেকেন্ড হোম’ প্রকল্প শুরু করে। ওই বছর কোনো বাংলাদেশি এ সুবিধা না নিলেও ২০০৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিন হাজার ৬৯১ জন সেকেন্ড হোম সুবিধা নিয়েছেন। তালিকাভুক্ত বাংলাদেশিরা দেশ থেকে টাকা সরিয়ে সেকেন্ড হোমে বিনিয়োগ করেছেন; যা সরাসরি মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধের শামিল। ১৯৪৭ সালের ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্টের ৫(১) ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কেউই দেশ থেকে টাকা বিদেশে পাঠাতে পারেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *