পাসপোর্ট প্রয়োজন আড়াই লাখ, দেয়া যাবে ৪২ হাজার

Slider অর্থ ও বাণিজ্য জাতীয়

base_1502819863-8

মালয়েশিয়ায় বৈধ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন প্রায় ৩ লাখ ৯৫ হাজার বাংলাদেশী। তবে এ বৈধকরণ প্রক্রিয়ায় মেয়াদসংবলিত পাসপোর্ট থাকতে হবে প্রত্যেকেরই। এজন্য ডিসেম্বরের মধ্যেই কুয়ালালামপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনকে ইস্যু করতে হবে প্রায় আড়াই লাখ পাসপোর্ট। যদিও নির্ধারিত সময়ে ইস্যু করা সম্ভব হবে ৪২ হাজার পাসপোর্ট। এ অবস্থায় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশীকে ঘিরে।

জানা গেছে, দুই প্রক্রিয়ায় দেশটিতে অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে মালয়েশিয়া সরকার— রিহায়ারিং ও ই-কার্ড (এনফোর্সমেন্ট কার্ড) প্রোগ্রাম। এর মধ্যে রিহায়ারিং প্রোগ্রামের আওতায় মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসাধারী শ্রমিকদের আবারো বৈধ ভিসায় চাকরির সুযোগ দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ই-কার্ড প্রক্রিয়ায় বৈধ শ্রমিক হিসেবে দেশটিতে থেকে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন স্টুডেন্ট, ট্যুরিস্ট বা অন্যান্য স্বল্পমেয়াদি ভিসায় আসা অবৈধ অভিবাসী। বৈধ করার মাধ্যমে এদের সবাইকেই পরিসংখ্যানের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির সরকার। তবে এর জন্য অপরিহার্য শর্ত হিসেবে বৈধ হতে ইচ্ছুক অভিবাসীদের নিজ দেশের পাসপোর্ট সঙ্গে রাখার নির্দেশনা রয়েছে।

রিহায়ারিং বা ই-কার্ড প্রোগ্রামের জন্য নিবন্ধনকারীদের মালয়েশিয়ার স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ পছন্দ অনুযায়ী নিয়োগ দেবে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই নতুন করে বৈধ হওয়া এসব অভিবাসীর নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হবে। এ সময়ে যাদের নিয়োগ হবে না, তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে আসতে হবে। এজন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের মধ্যে ই-কার্ডের আওতায় আসার জন্য নিবন্ধন করেছেন এক লাখ, যা দেশটিতে মোট ই-কার্ড নিবন্ধনের ৫৭ শতাংশ। অন্যদিকে রিহায়ারিং প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন করেছেন প্রায় ২ লাখ ৯৫ হাজার বাংলাদেশী, যা মোট রিহায়ারিং নিবন্ধনের ৮৯ শতাংশ। এ ৩ লাখ ৯৫ হাজার অভিবাসীর মধ্যে পাসপোর্ট ইস্যু করতে হবে আড়াই লাখের জন্য। এর মধ্যে অনেকেই নিজের পাসপোর্ট ফেলে দিয়েছেন। আবার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বা হারিয়ে গেছে, এমনও রয়েছেন অনেকে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পাসপোর্টের জন্য প্রতিদিনই কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে গড়ে ৫০০-৬০০ জন করে আসছেন। কোনো কোনো দিন এ সংখ্যা হাজারও ছাড়িয়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাড়তি জনবল চেয়েছিল বাংলাদেশ মিশন। এর উত্তরে স্থানীয়ভাবে এ জনবল সংকট দূর করার নির্দেশনা দেয়া হয়। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৪০০টি করে পাসপোর্ট দিতে পারছে মিশন। এজন্যও দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে হচ্ছে। সে হিসাবে আগস্টের ১৫ দিন এবং সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসে ১২২ দিন নিয়ে হাতে আছে মোট ১৩৭ দিন। কোনো বন্ধ না নিয়ে যদি ১৩৭ দিনই মিশন পাসপোর্ট ইস্যু করার কাজ করে যায়, তাহলে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পাসপোর্ট ইস্যু করা যাবে মাত্র ৫৪ হাজার ৮০০টি। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাবে এর পরিমাণ হবে ৪২ হাজারের কাছাকাছি।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বেশ কয়েক দিন ধরেই পাসপোর্ট ইস্যুর কাজ চলছে। অতিরিক্ত চাপের কারণে বাংলাদেশ থেকে টিম পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছিল। মন্ত্রণালয় এজন্য স্থানীয়ভাবে নিয়োগ দেয়ার কথা বলেছে। তবে কোনো দিনই ৪০০-এর নিচে পাসপোর্ট ইস্যু হচ্ছে না। আর পাসপোর্টের বিষয়টি নিয়ে কাজ করে মূলত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যদিও এর জন্য জবাবদিহি করতে হচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেই। তবে সেখানে কোনো বাংলাদেশীর কাছ থেকে এখনো এমন কোনো অভিযোগ আসেনি যে, পাসপোর্টের কারণে নতুন চাকরির আবেদন করা যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘পাসপোর্ট ইস্যু করার পর নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য কিছুদিন সময় দিতে হবে। যেহেতু ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ সুযোগ শেষ হয়ে যাবে, ফলে নভেম্বরের মধ্যেই সবার পাসপোর্ট ইস্যু করার বিষয় রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পাসপোর্ট দেয়ার জন্য মিশন সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে।’

একই কথা জানালেন কুয়ালালামপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার মো. শহিদুল ইসলামও। তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে স্থানীয়ভাবে অস্থায়ী কিছু জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নভেম্বরের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য আমরা কাজ করে চলেছি।’

কুয়ালালামপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনে আড়াই লাখ অভিবাসীর পাসপোর্ট দেয়া নিয়ে বাড়তি কিছুটা চাপ রয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘প্রায় আড়াই লাখ বাংলাদেশীকে এ বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বৈধ করতে হবে। এরা সবাই বর্তমানে এমআরপির জন্য বাংলাদেশ মিশনে আসছেন। এতে মিশনের ওপর কিছুটা চাপ পড়েছে। তবে এর ইতিবাচক বিষয় হলো, প্রক্রিয়াটি শেষ হয়ে গেলে আমরা যে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে অভিবাসী পাঠাই বা মালয়েশিয়া যে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিচ্ছে, তা বিশ্বস্ততা ও দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা যাবে।’

সূত্র জানায়, ই-কার্ডের জন্য আবেদনকারী বাংলাদেশীদের বেশির ভাগই দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। এদের কারো কাছেই বৈধ কোনো কাগজ নেই। এমনকি বেশির ভাগ শ্রমিকেরই নিজের কাছে কোনো পাসপোর্ট নেই। বেশির ভাগের পাসপোর্ট এখন দালালদের কাছে আটকে রয়েছে। আবার কেউ কেউ নিজের পাসপোর্ট ফেলে দিয়েছেন। অভিযানের শুরুতে প্রায় ১ হাজার ২৬৬ ও পরে আরো ৫০০ জনের মতো বাংলাদেশী মালয়েশীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। দেশটিতে অবৈধভাবে থাকার কারণে এদের ৫০ হাজার রিঙ্গিত জরিমানা বা ১২ মাস কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত করা হতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যে বাংলাদেশীরা হাইকমিশনে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে আসবেন, তাদের অবশ্যই প্রমাণস্বরূপ বাংলাদেশী নাগরিক হওয়ার কাগজ নিয়ে আসতে হবে। এদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেই পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে। আর যে বাংলাদেশীদের আটক করা হয়েছে, তাদের কারো কাছেই মালয়েশিয়ায় যাওয়ার বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। মালয়েশিয়া সরকারের দেয়া সাময়িক অবস্থানের অনুমতিপত্রের জন্যও তারা আবেদন করেননি।

জানা গেছে, অবৈধ অভিবাসী সংকট নিরসনে চলতি বছরের শুরুতে ই-কার্ড ও রিহায়ারিং স্কিমের ঘোষণা দেয় মালয়েশিয়া। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে নিবন্ধন শুরু হয়। নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয় ৩০ জুন মধ্যরাতে। অন্যদিকে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ১ জুলাই মধ্যরাত থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে মালয়েশিয়া সরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *