রাঙামাটির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট

Slider জাতীয়

Rangamati_Pic2

বর্ষার প্রায় শেষ মুর্হূতে পাহাড়ে চলছে টানা বর্ষণ। কখনো হালকা, কখনো মাঝারি আবার কখনো ভারি।

থেমে থেমে চলছে  বর্ষার বর্ষণ। তাতে হন হন করে বাড়ছে কাপ্তাই হ্রদের পানি। নামছে উজান থেকে পাহাড়ি ঢলও। প্লাবিত হয়েছে রাঙামাটির ১০টি উপজেলার কাপ্তাই হ্রদ ঘেঁষে গড়ে উঠা পাহাড়ি গ্রামগুলো।

পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। সড়ক ও কালভার্ট ডুবে যাওয়ার কারণে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বাঘাইছড়ি-বাঘাইহাট-মারিশ্যা ও সাজেক এলাকা। আর এজন্য বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে আটকা পড়েছে প্রায় সাড়ে ৪০০ পর্যটক। একই সঙ্গে আটকা পড়েছে পর্যটকদের প্রায় ৪৫টি গাড়ি। তবে দুইদিন পর উদ্ধারে নেমেছে সেনাবাহিনী।

রবিবার সকালে খাগড়াছড়ি রিজিয়নের সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ দল সাজেকের পর্যটকদের নৌ-যোগে নিয়ে আসে।

খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের জেনারেল স্টাফ অফিসার (জিটু) মেজর মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম জানান, সড়কের উপর পাহাড় ধসে ও সড়ক ডুবে যাওয়ায় খাগড়াছড়ির সাথে সাজেক, বাঘাইছড়ি ও লংগদু সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ অবস্থায় সাজেকে সাড়ে চার শতাধিক পর্যটক আটকা পড়ে। রবিবার নদীর স্রোত একটু কম থাকায় খাগড়াছড়ি সেনাবাহিনীর সদস্যরা পর্যটকদের নিরাপদে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।

অন্যদিকে, কাপ্তাই হ্রদের পানি ঘোলা, ময়লাযুক্ত ও দূষিত হওয়ায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শহর এলাকাসহ রাঙামাটি জেলাজুড়ে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা উপড়ে পড়া গাছ-গাছালি, লতাগুল্ম ও বিস্তর কচুরিপানা কাপ্তাই হ্রদজুড়ে সৃষ্টি করেছে ভাসমান জঞ্জালও। ময়লাযুক্ত দূষিত পানি ব্যবহারে জেলার বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। শুধু কাপ্তাই উপজেলায় পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে অন্তত ১২জন।

আক্রান্তরা হলেন- অংথুইচিং মারমা, উবাচিং মারমা, অংমেচিং মারমা, মাউচিং মারমা, অংহ্লাচিং মারমা, নেপালী মারমা, মেসাই প্রু মারমা, আইমন ফেরদৌস, রাফি, মাহিম ইসলামসহ আরও কয়েকজন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলার বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি উপজেলা ও কালাপাকুজ্জা, গুলশাখালী, বগাচতর, গাথাছড়া, ভাসান্যাদম, মাইনীমুখ, বালুখালী, আদারক ছড়া ইউনিয়ন ও সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দি পরিবারগুলো হয়ে মানবেতর দিন কাটছে। যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়ছে শিক্ষার্থীরাও। লেক তীরবর্তী গ্রামের রাস্তা গো-চারণ ভূমি, শুকটি মাছ শুকানোর স্থানসহ মানুষের বাড়ি-ঘর ডুবে গেছে। ওই অঞ্চলের ঘর-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় খুঁজে বেড়াচ্ছে অনেকেই। আবার অনেকে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

এদিকে, পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকদের ফসলি জমি। কাকরোল, শশা ও কাঁচা মরিচের ক্ষেতও। রাঙামাটি শহর এলাকাতেও হ্রদের পানি উত্তোলন করে সরবরাহ দেয়া হয়। কিন্তু পাহাড়ি ঢলে ঘোলা, ময়লাযুক্ত ও দূষিত হয়ে এসব পানির উৎস ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এমনকি কাদাযুক্ত পানি ভূ-গর্ভে প্রবেশ করায় রিংওয়েল এবং নলকূপগুলো থেকেও ঘোলা পানি বেরিয়ে আসছে। দূষিত পানি কারণে বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়া, আমাশয়, পেটের পীড়াসহ পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে, টানা বর্ষণে বাঘাইছড়ি উপজেলার কাচালং নদীর পানির প্রবাহ বেড়ে অন্তত সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ইতিমধ্যে এসব গ্রামের মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাজুল ইসলাম জানান, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বাঘাইছড়ি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৭টি গ্রামের মানুষ। সেগুলো হলো- মধ্যম পাড়া, মাস্টার পাড়া, পশ্চিম মুসলিম ব্লক, জীবঙ্গ ছড়া, উগল ছড়ি, বাঘাইছড়ি (এফব্লক), হাজীপাড়া ও আমতলি। এছাড়া তলিয়ে গেছে স্থানীয় বিদ্যালয় ও মাদরাসা। বন্যাদূর্গত মানুষগুলোর জন্য উপজেলার বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বন্যা কবলিতদের তাৎক্ষণিকভাবে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে বাঘাইহাট সেনা জোন।

এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান জানান, টানা বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি ঢলে রাঙামাটি বাঘাইছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ১৮’শ মানুষকে প্লাবিত মানুষকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে রেখেছি। তাদের স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন শুকনো খাবার বিতরণ করেছে। এছাড়া আশ্রয় নেয়া মানুষগুলো যাতে কোন প্রকার সমস্যা না হয় তার জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ সমাগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া রাঙামাটি জেলা প্রশাসন দুর্গতদের জন্য ১৫ মেট্রিক চালও বরাদ্দ দিয়েছে।

অন্যদিকে হ্রদের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় কাপ্তাই বাধের স্পিলওয়ে (পানি নির্গমনের পথ) ৩ ফুট উচ্চতায় খুলে দিয়ে পানি ছাড়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

রাঙামাটি কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক শফিউদ্দিন আহমেদ জানান, রুলকার্ভ (পানির পরিমাপ) হ্রদের পানি থাকার কথা ৯৩.৫২ ফুট মীন সী লেভেল (এমএসএল) পানি। কিন্তু বর্তমানে পানি রয়েছে ১০৭.৭৮ ফুট এমএসএল পানি। কিন্তু হ্রদে প্রায় ১৪ ফুট এমএসএল পানি বেশি রয়েছে। এছাড়া ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে হ্রদে পানির পরিমাণ আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবে আশঙ্কাজনভাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *