ধর্ষিতা ও মাকে ন্যাড়া; শ্রমিকলীগ নেতাসহ ৩ জন রিমান্ডে

Slider জাতীয়

78985বগুড়ায় ছাত্রীকে ধর্ষণের পর বিচারের কথা বলে মারপিট এবং নির্যাতনের পর ধর্ষিতা ও তার মা’র মাথা ন্যাড়ার ঘটনায় শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারসহ গ্রেফতার তিনজনকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

রবিবার দুপুরে বগুড়ার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম শ্যামসুন্দর রায়ের আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে তাদের প্রত্যেককে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ডে নেয়া আসামিরা হলেন- বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুর এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক ও তুফান বাহিনীর প্রধান তুফান সরকার (২৮), তার বাহিনীর সদস্য কসাইপাড়ার দুলু আকন্দের ছেলে আলী আজম দিপু (২৫) ও কালিতলার জহুরুল হকের ছেলে রূপম (২৪)।

এদিকে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তি দেওয়ায় আতিকুর রহমানকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়নি। এছাড়া এখনো ধরা পড়েননি তুফান সরকারের স্ত্রী আশা ও তার বোন ওয়ার্ড কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি।

জানা যায়, বগুড়া শহরের নামাজগড় এলাকায় মা ও বাবার সাথে ভাড়া বাসায় বসাবাস করে ধর্ষিতা ওই কিশোরী। সে এবার বগুড়া শহরের জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেছে। তার বাবা একজন ড়্গুদে ব্যবসায়ী। জেলার শাজাহানপুর উপজেলার রাতাইল বন্দরে তার একটি খাবারের ছোট হোটেল রয়েছে। এসএসসিতে এ প্লাস না পাওয়ার কারণে ভাল কলেজে ভর্তি হতে পারবে না বলে কিশোরীর বাড়ির পাশেই বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুরের বাসিন্দা বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহবায়ক প্রভাবশালী নেতা তুফান সরকারের (২৪) সাথে যোগাযোগ করে। তুফান সরকার কিশোরীকে ভাল কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার কথা বলে ১৭ জুলাই সকালে নিজ বাড়িতে ডেকে পাঠায়। সেখানে সুযোগ পেয়ে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে তুফান সরকার। এ ঘটনার পর ২৮ জুলাই রাতে তুফান সরকারের স্ত্রী মোছা. আশা ও আশার বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি বিচারের কথা বলে ধর্ষিত ওই কিশোরী এবং তার মাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে আটক রেখে ধর্ষিত কিশোরী ও তার মাকে নির্যাতন, মারপিট করে মাথার চুল কেটে নেড়ে করে দেয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ রাতে তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। ২৮ জুলাই শুক্রবার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তুফান সরকারসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে। পুলিশের অভিযানের সংবাদ পাওয়ার পর থেকে তুফান সরকারের স্ত্রী আশা ও তার বোন ওয়ার্ড কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি পলাতক রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় ধর্ষিতা কিশোরীর মা বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় নারী নির্যাতন ও অপহরণের অভিযোগে পৃথক ধারায় দুইটি মামলা দায়ের করেছেন।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত তুফান সরকার ওই কিশোরীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। পরে তাদের মারপিট, নির্যাতন এবং মাথার চুল নেড়ে করে কেটে দিয়েছে। মামলা হয়েছে। আসামী গ্রেফতারে অভিযান চলছে। বগুড়া সদর থানার ওসি এমমাদ হোসেন জানান, এজাহারে তুফান সরকারের বিরুদ্ধে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। অন্য আসামীদের বিরুদ্ধে ওই কিশোরী এবং তার মাকে (মামলার বাদী) অপহরণ, মারপিট ও শ্লীললতাহানির অভিযোগ আনা হয়েছে। বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন ওই কিশোরী জানায়, ১৭ জুলাই তুফান তাকে ধর্ষণ করে। তুফান রাজনৈতিকভাবে খুব প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কাউকে বলতে পারেন নি। এরপর তুফানের স্ত্রী আশা তার বড় বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকিসহ তুফানের সহযোগী ৮/১০ জনকে সঙ্গে নিয়ে ২৮ জুলাই শুক্রবার দুপুরে প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে নির্যাতনের পর মাথার চুল কেটে নেড়ে করে দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *