বিরল পাখি ‘কালো দোচরার’ দেখা মিলছে পঞ্চগড়ে

Slider জাতীয় বাধ ভাঙ্গা মত

131পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধায় দেখা মিলেছে বিরল পাখি ‘কালো কাস্তে চরা’। পাখিটি বাস করে সীমান্তের ওপারে। শুষ্ক মৌসুমে তারা খাবারের সন্ধানে চলে আসে আমাদের দেশে। কৃষকের বন্ধু হিসেবে খ্যাত এই পাখিটির আরেক নাম কালো দোচরা। ইংরেজীতে তাকে সম্বোধন করা হয়  ‘ইন্ডিয়ান ব্লাক ইবিস’ নামে (Indian Black Ibis or Red-naped Ibis)। কালো দোচরার বৈজ্ঞানিক নাম Pseudibis papillosa।

আগে কখনো দেখা না গেলেও গত কয়েকবছর ধরে পঞ্চগড়ের  বিভিন্ন  এলাকায় দেখা মিলছে এই পাখির। সম্প্রতি এ পাখির ছবি তুলেছেন পঞ্চগড়ের বন্য প্রাণী আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবা। তিনি জানান, কালো দোচরা এ অঞ্চলে খাবারের সন্ধানে আসে। বাসা বাঁধেনা। তবে পরিবেশ অনুকুলে থাকলে তারা প্রজননও করতে পারে এই এলাকায় । বাংলাবান্ধার ধাইজান,তেঁতুলিয়ার কালান্দিগঞ্জ,সদর  উপজেলার আমতলা সহ আরোও বেশ কয়েকটি গ্রামের মাঠ ও  ক্ষেত,নদীর চরে দেখা মিলেছে এই বিরল পাখির।

কালোদোচরা সাধারনত জলা জায়গার পরিবর্তে শুকনো খোলা মাঠে থাকতে বেশী পছন্দ করে। এরা দল বেঁধে বাসা বাঁধে । অন্য জাতের পাখিদের সাথে বাসা বাঁধে না। গাছের ওপর বড় বাটির মতো আকারের বাসা বানায়।  তবে  মাঝে মাঝে শকুন বা ঈগলের পরিত্যক্ত বাসাতেও থাকতে দেখা যায়। বক এবং পানকৌরীর দলেও তারা থাকে । সাধারনত অগভীর জলাশয়, মোহনা বা কৃষি জমিতে একা অথবা দল বেঁধে ঘুড়ে বেড়ায়।

রাশভারী চালে পা ফেলে খেত খামার চষে বেড়ায় কালোদোচরা। ক্ষতিকর পোকামাকড়, ইঁদুর ইত্যাদি খেয়ে উপকার করে কৃষকের । আকারে বেশ বড়োসড়ো এ পাখি এদেশে পরিযায়ী হয়ে আসে। শান্ত স্বভাবের পাখিটি দেখতে চমৎকার বর্ণময়। উচ্চস্বরে না ডাকলেও কণ্ঠস্বর কর্কস । কখনো কখনো ওড়ার সময় নাকিস্বরে চিৎকার করে। এরা দ্রুত এবং অনেক উঁচুতে উড়তে পারে।

এদের গড় দৈর্ঘ্য ৬০-৬৮ সেন্টিমিটার। প্রসারিত ডানা ১০০-১১৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় তেমন তফাৎ নেই। মাথার উপর আঁচিল এবং লাল প্যাঁচ দেখা যায়। কাঁধ সাদা প্যাঁচের সঙ্গে গাঢ় বাদামি। পিঠ বাদামি। ডানা ও খাটো লেজে থাকে নীল-সবুজের সঙ্গে কালোর মিশ্রণ। দেহতল খয়েরি-বাদামি। ঠোঁট নিচের দিকে কাস্তের মতো বাঁকানো। লম্বা পা লালচে গোলাপি। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে রঙে সামান্য তফাৎ রয়েছে। প্রধান খাবার জলজ পোকামাকড়, ইঁদুর, কেঁচো,ব্যাঙ, ছোট সাপ, পচা মাংস, টিকটিকিসহ বিভিন্ন ধরনের সরীসৃপ। মাঝে মধ্যে মাছও শিকার করে।

কালো দোচরার প্রজনন মৌসুম অক্টোবর। তবে অঞ্চলভেদে সময়ের হেরফের দেখা যায়। প্রজনন ঋতুতে ডানার নিচে রক্তলাল পট্টি দেখা যায়। এসময় কালো মাথায় নীলাভ আভা লক্ষ্য করা যায়। পাও চকচকে কালো হয়ে ওঠে। জলাশয়ের কাছাকাছি গাছের উঁচু ডালে (ছয় থেকে বারোমিটারের মধ্যে) সরু কাঠি, নলখাগড়া বা ডালপালা দিয়ে বাসা বাঁধে এরা। ডিম পাড়ে ২-৩টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২৫-২৭ দিন। ডিম পাড়ে ২-৮টি । বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম,লাওস ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত এদের বৈশ্বিক বিচরণ। বিশ্বে এদের অবস্থান খুব একটা ভালো নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *