কুয়েতফেরত চার শ্রমিকের কান্না

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

74879_kuetশাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমেই অঝোরে কাঁদতে থাকেন কুয়েত ফেরত চার শ্রমিক। ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে যখন তারা গেটের কাছে আসেন তখন তৈরি হয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের। ঢাকার ইব্রাহীম, নোয়াখালীর মোতালেব, নরসিংদীর আনসার মিয়া ও গাজীপুরের হাসান একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। তাদের এ কান্না উপস্থিত সবার মনকে নাড়া দেয়। এ সময় একজন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ছয় লাখ টাকা খরচ করে কুয়েত গেলাম। ফিরলাম শূন্য হাতে। এখন বাড়িতে যাওয়ার ভাড়াও নেই। কি করবো বুঝতে পারছি না? পরিবার কিভাবে চালাবো? ঋণ শোধ করবো কিভাবে? এখন চোখে অন্ধকার দেখছি। চার কুয়েত ফেরত বাংলাদেশি জানান, চার মাস একটি কারখানায় কাজ করেছেন তারা। সব মিলিয়ে একশ’ দিনার আয় করেছেন। এখন মেডিকেল আনফিট (অযোগ্য) দেখিয়ে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে কুয়েতের কোম্পানি। এর সঙ্গে বাংলাদেশি দালাল সিন্ডিকেটের যোগসাজশ রয়েছে। তারাই এমন অপকর্ম করে বাংলাদেশিদের কিছুদিন পর ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে। এরপর নতুন করে ভিসা তৈরি করছে একই সিন্ডিকেট। কুয়েত ফেরত ইব্রাহিম মানবজমিনকে বলেন, এর আগেও সাড়ে চার বছর কুয়েতে কাজ করেছি। কিন্তু দালালদের এমন ভয়াবহ কর্মকাণ্ড এর আগে দেখিনি। এবার কুয়েত যাওয়ার আগে বেশ ভালোই ছিলাম। লন্ড্রি, ফোন-ফ্যাক্স ও ফ্লেক্সিলোডের দোকান ছিল। কিন্তু হঠাৎ দেশে ফিরে আমি এখন নিঃস্ব। শাহজালাল এয়ারপোর্টে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, কুয়েত ফেরত এ চার বাংলাদেশি এক কাপড়ে দেশে এসে পৌঁছান। তাদের কাছে হাতব্যাগ পর্যন্ত ছিল না। পরনের কাপড় চোপড় থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। কারও কাছে মোবাইল ফোন ছিল না। কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর অন্যের কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে আত্মীয়স্বজনদের কাছে ফোন করেন। তবে ফোন করেই কান্নাকাটি জুড়ে দেন তারা। এয়ারপোর্ট থেকেই ঢাকার কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা ইব্রাহীমকে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে ফোন করতে দেখা যায়। ফোন করে ইব্রাহিম পল্টনের এসআর ইন্টারন্যাশনালের কাছে এক হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলেন। কথামতো তার সহধর্মিণী এক হাজার টাকা নিয়ে পল্টনস্থ ওই ট্রাভেলসের কাছে যান। ইব্রাহিম মানবজমিনকে জানান, এ বছরের ১৭ই মার্চ সোনালী স্বপ্নের আশায় কুয়েত যাই। এ জন্য পল্টনের এসআর ইন্টারন্যাশনাল নামে ট্রাভেল এজেন্টকে পাঁচ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেই। কিন্তু কুয়েত যাওয়ার পর প্রথমে একটি কোম্পানিতে অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ দেয়া হয়। প্রথম মাস কাজ করে আমরা ১৩ দিনার পাই। এরপর আরো ৬০ দিনার পাই। দেশে ফেরত আসার সময় টাকা চাইতে গেলে বলা হয়, তোদের বেতনের টাকা দিয়ে বিমানের টিকিট কেটেছি। কুয়েতে চার মাস কাজ করলে আমাদের আকামা দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, দুই মাস কুয়েতে থাকার পর আমাদের কাছে দালাল মারফত ৭০ হাজার টাকা করে চাওয়া হয়। বলা হয়, এ টাকা দিলে আকামাসহ সব কাগজপত্র হয়ে যাবে। অন্যথায় ঝামেলা হলে তাদের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। এমন কথা শুনেই আমরা আঁতকে উঠি। ইব্রাহিম জানান, সাজেদা ফাউন্ডেশন থেকে আড়াই লাখ টাকা লোন নিয়েছি। এছাড়া সুদে আরো দুই লাখ টাকা ধার নিয়েছি। সব মিলিয়ে সাড়ে চার লাখ টাকা ঋণ নিয়ে কুয়েত যাই। এছাড়া বিদেশ যাওয়ার জন্য কালিগঞ্জে জমি বিক্রি করে বাকি টাকা যোগাড় করি। এখন খালি হাতে ফিরে চোখে অন্ধকার দেখছি। বাড়ি ফেরার পর থেকেই পাওনাদারদের তাগাদা শুরু হয়ে গেছে। তিনি বলেন, চিন্তা করেছিলাম কুয়েতে দিনার কামিয়ে পরিবারকে একটু সচ্ছলতা দেবো। সেটা আর হলো না। এ ধাক্কা কিভাবে সামলাবো বুঝতে পারছি না। এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছে, আপনাদের মেডিকেল আনফিডের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে আমাদের কি করার আছে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার বাসিন্দা ইব্রাহিম খুব সহজে নিজের বাড়িতে ফিরতে পারলেও অন্য তিনজন দেশের বাড়িতে যেতে আত্মীয়স্বজনদের ডেকে আনেন। এরপর নানা ব্যবস্থায় গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *