ঢাকা: অপহরণের ঘটনা আড়াল করতে এক নারীকে দিয়ে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ফরহাদ মজহারের পরিবার। পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, অচিরেই সংবাদ সম্মেলন করে তাঁদের অবস্থান পরিষ্কার করবেন।
ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতার গতকাল সোমবার বলেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে থেকে পেশাদারি আচরণ আশা করি। আমরা চাই তদন্তটা যথাযথ হোক। তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছুই আসতে পারে, কিন্তু তা যেন কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে।’
৩ জুলাই ভোর ৫টায় ফরহাদ মজহার শ্যামলীর নিজ বাসা থেকে বের হন। ১৮ ঘণ্টা পর যশোরের অভয়নগর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে একটি বাস থেকে নামিয়ে আনে। ফরহাদ মজহার পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটকে জানান, তিনি অপহরণের শিকার হয়েছিলেন। তাঁকে একটি মাইক্রোবাসে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তুলে নিয়ে যান। তাঁর স্ত্রী ফরিদা আখতার সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ওই দিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আতঙ্কগ্রস্ত গলায় মুঠোফোনে ফরহাদ মজহার তাঁকে বলেন, ‘ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’
৮ জুলাই মাদকবিরোধী এক অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ফরহাদ মজহার সম্ভবত অপহরণের স্বীকার হননি। এর দিন দুয়েকের মাথায় তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একজন নারীর জন্য টাকা সংগ্রহ করতেই ৩ জুলাই ভোরবেলা তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। ওই নারী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে ওই নারী এখন কোথায়, সে সম্পর্কে পুলিশ কিছু বলছে না। জানা গেছে, পুলিশ তাঁকে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে ঢাকায় আনে।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মো. আবদুল বাতেন বলেন, ওই নারী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে চলে গেছেন। তিনি কোথায় আছেন সে সম্পর্কে তাঁরা জানেন না। ফরহাদ মজহার অপহরণ হয়েছিলেন কি না, এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব এড়িয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারাও তো খোঁজখবর করছেন। দেখেন। আমরাও দেখি।’ তবে গত বৃহস্পতিবার ওই নারীকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আনার পর তিনি কোথায় ছিলেন তা তিনি জানেন না বলে জানান।
যে এলাকা থেকে ওই নারীকে আনা সেই রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদির ভূইয়া বলেন, ঢাকা থেকে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল এসেছিল দুদিন আগে। কিন্তু তারা কী জন্য এসেছিল, সে সম্পর্কে তিনি জানেন না।
ওই নারীকে যে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই বাড়ির লোকজনও এখন বলতে পারছেন না তিনি কোথায় আছেন।
রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি জানান, ওই নারীকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারোয়া ইউনিয়নের বসাকপাড়া থেকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। বাড়িটি আলো রানী দাসের। তিনি যখন আলো রানী দাসের বাসায় যান, তখন সেখানে তাঁর মেয়ে রত্না সমাদ্দার ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। তিনি বলেন, যাঁকে পুলিশ নিয়ে গেছে, তিনি তাঁর (রত্নার) দূর সম্পর্কের ননদ। তাঁর স্বামী রবি সমাদ্দারের সঙ্গে বুধবার রাঙ্গুনিয়ায় বেড়াতে আসেন। বৃহস্পতিবার তাঁরা গল্প করছিলেন। এ সময় ডিবি পুলিশের একটি দল এসে রবি সমাদ্দারের খোঁজ করেন। তাঁরা বাড়িতে তাঁর ননদ আছেন কি না জানতে চাইলে তাঁর ননদ বেরিয়ে আসেন। দু-একটি কথা বলার পরই পুলিশ তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যায়। তবে পুলিশ কী কথা বলেছে, সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে পারেননি। তিনি বলেন, তাঁর ননদ ঢাকায় থাকেন এবং তাঁর গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায়। পুলিশ যাওয়ার সময় তাঁর স্বামীর ফোনটিও নিয়ে যায়। এই মুহূর্তে তাঁর ননদ কোথায় আছেন, সে সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না।
আশির দশক থেকে ফরহাদ মজহারকে চেনেন এমন এক ব্যক্তির সঙ্গে গতকাল সোমবার এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি বলেন, ফরহাদ মজহার অপহরণের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সক্ষমতা দেখিয়েছে। তারা প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। একইভাবে তারা তদন্তটা করবে সেটাই সবার চাওয়া। মামলার প্রয়োজনে তারা যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ বা গ্রেপ্তার করতে পারে। তারা একজন নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। তিনি জবানবন্দিও দিতে পারেন, কিন্তু তদন্তের চেয়ে এখন সেই জবানবন্দি নিয়ে আলাপ-আলোচনা বেশি হচ্ছে। সেই গল্পই ছড়ানো হচ্ছে।
এর আগে পুলিশ খুলনা থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজের টিকিট বিক্রেতা নাজমুস সাদাতকে ঢাকায় এনে জবানবন্দি দেওয়ার ব্যবস্থা করে।