ডিসেম্বরেও শেষ হচ্ছেনা কেন্দ্রীয় কারাগার সিলেট’র নির্মান কাজ

Slider সারাদেশ
IMG_20170706_064359
হাফিজুল ইসলাম লস্কর :: সিলেট শহরতলির বাদাঘাটে নির্মাণাধীন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের কয়েক দফা মেয়াদ বৃদ্ধির পরও শেষ হয়নি নির্মান কাজ।
স্বাভাবিক ভাবে তাই জনমনে প্রশ্ন জাগছে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্মান কাজ শেষ হবে কবে?
বিগত ২০১৬ সালের জানুয়ারী মাসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ঘোষনা দিয়েছিলেন ঐ বছরের জুলাই মাসে এ কারাগার উদ্বোধন করা হবে। কিন্তু এ ঘোষনার বছর পেরিয়ে গেলেও কারাগার উদ্বোধনে নেই কোন অগ্রগতি কর্তৃপক্ষের ।
ফলে ঘোষনাতেই আটকে আছে  সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের মতো বিগ বাজেটের বৃহৎ প্রকল্পের উদ্বোধন। চলতি বছরের জুন মাসে সিলেট সফরে এসে অর্থমন্ত্রী আবারও ঘোষনা দিলেন ডিসেম্বর মাসে উদ্বোধন হবে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানদের দাবী এ বছর ও শেষ হবে না নির্মাণ কাজ। এখনো ২০ শতাংশ কাজ বাকী রয়েছে, যা আগামী ছয় মাসেও শেষ করা সম্ভব হবেনা। তবে কবে নাগাদ এ কাজ শেষ হবে তা বলতে পারছে না গনপূর্ত বিভাগ। ফলে এ বছরও উদ্বোধন হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার’র।
সিলেটের প্রাণকেন্দ্র ধোপাদীঘীর পাড়ে অবস্থিত বর্তমান কারাগারটি অনেক প্রাচীন , ফলে জরাজীর্ণ পরিবেশ ও ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশী কয়েদি থাকার কারণে ২০১০ সালে একনেকে ১৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণ ও স্থানান্তর প্রকল্প অনুমোদন পায়।
এরই পরিপেক্ষিতে ২০১১ সালের আগস্ট মাসে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে নিয়ে কারাগারের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই নেতার দ্বন্দ্বে কারনে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকে এ নির্মাণ কাজ।
এর এক বছর পর ২০১২ সালের জুলাই মাসে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০১৫ সালের জুন মাসে কিন্তু মন্ত্রনালয় থেকে অর্থ ছাড়ের জটিলতার কারনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স প্রা. লি:, হাবিব কনস্ট্রাকশন, কুশলী নির্মাতা, জেড কনস্ট্রাকশন, ঢালি কনস্ট্রাকশন ও জেবি কনস্ট্রাকশন কোম্পানির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়াদ ২০১৬ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পটি শেষ করার মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু নিদিষ্ট মেয়াদের এক বছর পেরিয়ে গেলেও আশ্বাসের মধ্যে আটকে আছে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণ কাজ।
সরেজমিনে নির্মানাধীন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে , ৩০ একর জায়গার মধ্যে মূল কারাগারের ভেতরে রয়েছে ১৪ একর ও বাইরে রয়েছে ১৬ একর জায়গা। কারাগারের বাইরের জায়গায় থাকছে কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য ১৩০ টি ফ্ল্যাট, ক্যান্টিন, বন্দিদের সাথে সাক্ষাতকার রুম, এডমিন অফিস, সেন্ট্রাল মসজিদ, এছাড়া স্টিল স্ট্রাকচারড ভবন আছে চারটি, একটি স্কুল। যার প্রতিটি ভবনের নির্মান কাজ সম্পূর্ণ। ভেতরের জায়গায় আছে পুরুষ হাজতি, কয়েদিদের জন্য ছয়তলা বিশিষ্ট চারটি এবং নারী হাজতি ও কয়েদিদের জন্য তিনটি চারতলা ও দুটি দোতলা ভবন।
এ ছাড়াও কারাগারের পশ্চিম পাশে বন্দিদের আধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ১০০ শয্যা বিশিষ্ট পাচঁতলা হাসপাতাল, ২০ শয্যা বিশিষ্ট দোতলা মানসিক হাসপাতাল তাছাড়াও টিবি রোগীদের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ২৫ শয্যা বিশিষ্ট দোতলা টিবি হাসপাতাল।
কারাগারের চারপাশে উচু সীমানা প্রাচীর ও ভেতরে অভ্যন্তরীন সীমানা প্রাচীরের কাজ শেষ হয়েছে। তবে বেশীর ভাগ ভবনের বাথরুমের সেনিটারির কাজ এখন সম্পূর্ণ হয়নি। তাছাড়া কারাগারের একটি মসজিদ, ক্যান্টিন, তিনটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। তবে এখনো লিংক রোড (রাস্তা নির্মাণ), ড্রেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও কয়েকটি ভবনের নির্মাণ কাজ না হওয়ায় কবে কাজ শেষ হবে তা বলতে পারছেন না গণপূর্ত বিভাগসহ সংশিষ্টরা। তবে কমপক্ষে আরো এক বছর লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তেমূখী বাদাঘাট মূল সড়ক থেকে কারাগারের সংযোগ সড়ক এখনো নির্মান হয়নি। শীগ্রই এ সড়ক নির্মাণ হবে বলে গনপূর্ত বিভাগ দাবী করে। এ ছাড়াও কারাগারে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবহরাহ নিশ্চিত করার জন্য মূল সড়কের পশ্চিম পাশে ১০ মেগাওয়াটের পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কুশলী নির্মাতার প্রকল্প ইঞ্জিনিয়ার নাছির উদ্দিন জানান, আমাদের প্রতিষ্টানের আওতায় যতটুকু কাজ ছিল তার বেশীর ভাগ সম্পূর্ণ হয়েছে। বিভিন্ন ভবেনের সেনিটারীর কাজ বাকী রয়েছে। অর্থ প্রাপ্তির জটিলতার কারনে কাজ শেষ করতে সময় লাগছে। ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
আরেক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স প্রা. লি: এর প্রোপাইটার এডভোকেট নূরে আলম সিরাজী জানান, বিভিন্ন মহলের টানাপোড়েন’র কারনে নির্মাণ কাজে বিলম্ব হয়েছে।
 এছাড়া গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান’র বদলীর কারনে নির্মান কাজে ধীর গতি দেখা দিয়েছে। নতুন প্রকৌশলী শেখ মিজানুর রহমান নতুন কাজ বুঝে নিতে অনেক সময় লেগেছে। তবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত অন্তরিক থাকার কারণে নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। তার প্রতিষ্ঠানে মাটি ভরাটের কাজ ও ফিমেল ওয়ার্ড নির্মানের কাজ শেষ হয়েছে। তবে এ বছর ডিসেম্বরের ভেতরে নির্মান কাজ শেষ করা সম্ভব নয় বলে তিনি জানান।
সিলেট গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা তিনি জানান, বেশীর ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। ডিসেম্বরে উদ্বোধনের জন্য দ্রুত কাজ চলছে। তবে ডিসেম্বরের উদ্ভোধন হবে কিনা এ ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু বলেননি। অর্থ প্রাপ্তিতে জটিলতার কথা অস্বীকার করে তিনি জানান, অর্থ প্রাপ্তিতে কোন জটিলতা নেই। ইতোমধ্যে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের কাজ পল্লী বিদ্যুতের কাছ থেকে বুঝে নেওয়া হয়েছে। লিংক রোড নির্মাণের এখনো শুরু হয়নি তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা শেষ করা হবে।
বর্তমান সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার দেশের প্রাচীনতম কারাগারগুলোর অন্যতম। ১৭৮৯ সালে ধোপাদিঘিরপার এলাকায় আসামের কালেক্টর জন উইলিয়াম প্রায় এক লাখ ভারতীয় রুপি ব্যয়ে ২৪.৬৭ একর জমির ওপর এ কারাগারটি নির্মাণ করেন।
তৎকালীন আসাম রাজ্যের একমাত্র টিবি হাসপাতাল ছিল এ কারাগারেই। প্রশাসনিক প্রয়োজন এবং বন্দি আধিক্যের কারণে ১৯৯৭ সালে কারাগারটি কেন্দ্রীয় কারাগারে উন্নীত করা হয়। বর্তমানে বন্দি ধারণক্ষমতা ১২০০ হলেও কারাগারে দ্বিগুণের বেশি বন্দি রয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *