গাজীপুরে কারখানায় বিস্ফোরণে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি’

Slider জাতীয়

72486_thumbS_boi

 

গাজীপুর: ‘পুরোটাই কারখানা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি। বয়লারের রক্ষণাবেক্ষণে সমস্যা ছিল। বিস্ফোরণের আগে সেফটি বাল্ব কয়েকবার সিগন্যাল (বিপৎসংকেত) দিলেও তারা বয়লার বন্ধ করেনি।’

গাজীপুরের কাশিমপুরের নয়াপাড়া এলাকার মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড নামের পোশাক কারখানার বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এভাবেই অভিযোগ করেন শ্রমিক হারুনুর রশীদ। বর্তমানে তিনি কোনাবাড়ী এলাকার শরীফ জেনারেল মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

হাসপাতালের বিছানায় বসে আজ মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে হারুনুর রশীদ প্রথম আলোকে এসব কথা বলেন। বিস্ফোরণে তিনি মাথার পেছনে, কপালে ও পায়ে আঘাত পেয়েছেন। তাঁর মাথার পেছন দিকে চারটি ও কপালের বাঁ পাশে সেলাই দিতে হয়েছে। সাড়ে চার বছর ধরে মাল্টিফ্যাবসে কাজ করা হারুনুর রশীদ বলেন, ‘ঈদের ছুটির কারণে কারখানার অন্য সেকশন বন্ধ থাকলেও গত তিন দিন ধরে ডাইং ও নিটিং সেকশনে কাজ হচ্ছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যার আগে বয়লারের সেফটি বাল্ব থেকে হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ হয়। তখন আমরা গিয়ে জিজ্ঞেস করি, সমস্যা কী? তখন বয়লারের অপারেটররা বলেন, বাল্বের সমস্যা। ঠিক হয়ে যাবে। তোমরা কাজে যাও। কিছুক্ষণ পর একই ধরনের শব্দ হলে আমরা আবার গিয়ে জানতে চাই। তখন পুনরায় আমাদের কাজে ফেরত পাঠানো হয়। এর ১০ মিনিট পরেই তীব্র বিস্ফোরণ হয় বয়লারে।’ হারুনুর রশীদ জানান, বিস্ফোরণে তাঁর দুই সহকর্মী বিপ্লব ও মাহবুব ঘটনাস্থলে নিহত হন।

গতকাল সোমবার মাল্টিফ্যাবসে বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় ১০ জন নিহত হন। তিনজন এখনো নিখোঁজ। ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন অর্ধশত শ্রমিক ও পথচারী।

আজ দুপুর ১২টার দিকে কারখানার সামনে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ মূল সড়কে পাহারা বসিয়েছে। সাধারণ কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কারখানার সামনের সড়কের ওপর গ্লাসের টুকরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। পাশের ইসলাম নিট ডিজাইন কারখানার ছয়তলা ভবনের সামনের সব কাচ ভেঙে সড়কের ওপর পড়ে আছে। মাল্টিফ্যাবসের বিস্ফোরিত বয়লারের পাশে কারখানার একটি চারতলা ভবনের নিচের একটি অংশ উড়ে গিয়ে সুড়ঙ্গের মতো তৈরি হয়েছে। সেই সুড়ঙ্গ দিয়ে দেখা যায়, বয়লারের পাশে থাকা ডাইং সেকশন পুরোপুরি বিধ্বস্ত। ডাইং সেকশনের ছাদ ও ভবনের কলাম ভেঙে পড়ে আছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন।

সকালে কারখানাটি পরিদর্শনে এসেছিলেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর গাজীপুরের উপমহাপরিদর্শক ফরিদ আহমেদ। দুপুরের দিকে তিনি বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে মনে হচ্ছে, কারিগরি সমস্যার কারণেই বয়লার বিস্ফোরিত হয়েছে। তবে পুরো তদন্ত শেষ হওয়ার আগে বিস্তারিত কিছু বলা যাবে না।’

কারখানাটির কমপ্লায়েন্স ম্যানেজার বিভূতি হীরা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হচ্ছে, কারিগরি ত্রুটির জন্যই বয়লারে বিস্ফোরণ ঘটেছে।’ তিনি জানান, গতকাল কারখানার অধিকাংশ বিভাগই বন্ধ ছিল। না হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হতো।’ কারখানার কর্মকর্তারা জানান, যে বয়লারটি বিস্ফোরিত হয়েছে, সেটির ওজন পাঁচ টন। এটি প্রায় ১৫ বছরের পুরোনো। পাশেই একটি ১০ টনের বয়লার অক্ষত আছে।

ঘটনা তদন্তে দুই কমিটি
বিস্ফোরণের পর গাজীপুরের জেলা প্রশাসক দেওয়ান মোহাম্মদ হ‌ুমায়ূন কবির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে  তিনি বলেন, ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রায়হানুল ইসলামকে প্রধান করে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

কমিটির অপর সদস্যরা হলেন গাজীপুর পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার), শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার), ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক, বয়লার পরিদর্শক, কলকারখানা অধিদপ্তর, বিজিএমইএর প্রতিনিধি ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা।

কমিটিকে বয়লার বিস্ফোরণের কারণ, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশমালা উল্লেখপূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অপর দিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদর দপ্তরের স্টেশন অফিসার মো. আতাউর রহমান জানান, ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক দিলীপ কুমার ঘোষকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান এবং জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. জাকির হোসেন। সাত কার্যদিবসের মধ্যে এ কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *