প্রভাবশালী চক্রের ছত্রছায়ায়, কোথাও আবার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের পাহারায় গাজীপুরে আবাসিক হোটেলের নামে চলছে অবৈধ দেহ ব্যবসা। প্রতারণার স্বীকার হয়ে স্কুল-কলেজের অনেক শিক্ষার্থীও এসব হোটেল ছাড়াও শুটিং স্পটে গিয়ে জড়িয়ে পড়ছে অসামাজিক কর্মকাণ্ডে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তরুণ ও যুব সমাজ। এলাকাবাসীর অনুরোধে গত দুই সপ্তাহ ধরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ ধরনের কমপক্ষে ১০টি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে দুই শতাধিক যৌনকর্মীসহ খদ্দের ও সংশ্লিষ্টদের আটক করা হয়েছে। হোটেল সিলগালা করা হয়। আবার অনেককে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাৎক্ষণিক জেলও দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘণ্টা প্রতি ৫শ’ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা নিয়ে রুম আর যৌনকর্মী দিয়ে নগরের তেলিপাড়ায় মসজিদ ও স্কুলের পাশেই একটি আবাসিক হোটেলে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ-অসামাজিক ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। শুধু রাতেই নয়, দিনেও চলে এই অবৈধ ব্যবসা। গত বছর যৌনকর্মী ও খদ্দেরসহ ওই হোটেলটি স্থানীয় জনতা অবরুদ্ধ করে রাখে, এমন খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে হোটেল ম্যানেজার, খদ্দের ও নারীসহ ১৫ জনকে আটক করে। আটক করার পর আবারো অবাধে চলে অবৈধ ব্যবসা। ওই হোটেলের মতোই নগরের চান্দনা চৌরাস্তা, আউটপাড়া, তেলিপাড়া, ভোগড়া, নলজানি, দীঘিরচালা, কোনাবাড়ি, হোতাপাড়া, মাওনা চৌরাস্তা ও টঙ্গী এলাকার বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। এলাকাবাসী ও নানা শ্রেণি-পেশার লোকজনের অনুরোধে এবার রোজায় এর বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালাতে নির্দেশ দেন গাজীপুরে জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। এরপরই জেলা প্রশাসককে হোটেল রাজমনির মালিক পরিচয়ে মোবাইল ফোনে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়। হুমকির পর জেলা প্রশাসক জয়দেবপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরদিন থেকে শুরু হয় আবাসিক হোটেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। চান্দনা চৌরাস্তার আবাসিক হোটেল রাজমনি, দক্ষিণ বাংলা আবাসিক হোটেল ও টঙ্গীসহ অন্তত ১০টি আবাসিক হোটেল সিলগালা করা হয়। শনিবার বিকালে হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির কাছের আবাসিক হোটেল রোজ ভ্যালিতে অভিযান চালিয়ে ২০ জন যৌনকর্মীসহ ৩৫ জনকে আটক করা হয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আবাসিক হোটেলের সামনে অবস্থান করে দালাল চক্র। টার্গেট করা পথচারীদের তারা ধরিয়ে দেয় ভিজিটিং কার্ড। এসব কার্ডে হোটেল-যৌনকর্মীদের মধ্যস্থতাকারীর মোবাইল নম্বর থাকে। আর এভাবেই খদ্দেররা পৌঁছে যায় যৌনকর্মীদের কাছে। সচেতন মহলের আশঙ্কা এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হলে বড় ধরনের সামাজিক অবক্ষয়ের মুখে পড়তে পারে গাজীপুরের যুবসমাজ। নগর ও জেলাবাসীর দাবি। চলমান অভিযানের পর আগের মতো আবারো যাতে গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে আবাসিক হোটেলের নামে গড়ে ওঠা এসব মিনি পতিতালয় জমজমাট না হয়ে ওঠে। সমাজের ক্ষতিকারক এসব অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।