ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আংশিক কার্যকর করার রায়

Slider সারাবিশ্ব

71582_TR copy

 

 

 

 

 

 

মুসলিম নিষেধাজ্ঞা আখ্যা পাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ভ্রমন নিষেধাজ্ঞা আংশিক কার্যকর করার রায় দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। ৬ টি মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ট্রাম্পের জারি করা নির্বাহী আদেশ এতোদিন নিম্ন আদালতের রায়ে স্থগিত ছিল। এবারে সুপ্রিম কোর্ট সেই স্থগিতাদেশ আংশিক প্রত্যাহার করার রায় দিয়েছে। এছাড়াও শরণার্থীদের ওপর নিষেধাজ্ঞার অংশবিশেষ কার্যকর করতে হোয়াইট হাউসের অনুরোধে সম্মতি দিয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। এবারই প্রথম নানা সমালোচনার জন্ম দেয়া ভ্রমন নিষেধাজ্ঞার পক্ষে রায় দিলো আদালত। ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে এটাকে ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিজয়’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে বিবিসি। আদালতের বিচারপতিরা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট নীতি বহাল রাখা হবে নাকি বাতিল করা হবে সেটা অক্টোবর মাসে তারা বিবেচনা করবেন।
ট্রাম্প ৬ টি মুসলিম প্রধান দেশের (ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেন) জনগনের ওপর ৯০ দিনের নিষেধাজ্ঞা চেয়েছিলেন। আর শরণার্থীদের ওপর চেয়েছিলেন ১২০ দিনের নিষেধাজ্ঞা। আদালতের রায়ের পর ট্রাম্প আরও বলেছেন, আদালত অনুমোদন দেয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে।  সোমবার দেয়া সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, ‘যেসব বিদেশি নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রের কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ।ঠানের সঙ্গে সত্যিকারের সম্পর্ক বা যোগসূত্রের (বোনা ফাইড রিলেশনশিপ) বিশ্বাসযোগ্য দাবি রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে এটা (নির্বাহী আদেশ) কার্যকর করা যাবে না। বাকি বিদেশি নাগরিকরা (নির্বাহী আদেশের) বিধির আওতায় পড়বে।’ রায়ে আরও বলা হয়েছে যে শরণার্থীদের ক্ষেত্রেও যাদের মার্কিন ব্যক্তিবিশেষ বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সত্যিকারের সম্পর্ক নেই তাদের বিরেুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ১২০ দিনের নিষেধাজ্ঞার অনুমতি দেবে আদালত।

ওয়াশিংটন থেকে বিবিসির প্রতিবেদক অ্যন্থনি জারকার বলেছেন, আদালতের এ রায় ডনাল্ড ট্রাম্পের জন্য বিজয় হিসেবে লিখে রাখুন। যুক্তরাষ্ট্রে পরিবার, স্কুল বা নিয়োগ সংক্রান্ত বিদ্যমান যোগসূত্র না থাকলে আক্রান্ত দেশগুলোর অভিবাসী ও শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কঠিন হয়ে গেলো।
অক্টোবর মাসে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা উভয় পক্ষের যুক্তি তর্ক বিবেচনা করবেন। অবশ্য ততদিনে প্রশাসন তাদের অভিবাসন নীতির ‘নির্বাহী পর্যালোচনা’ করা এবং নতুন দিকনির্দেশতা প্রস্তুত করতে তিন মাস সময় পাবে। তার আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের দরজা কিছুটা ছোট হয়ে গেলো।

‘বোনা ফাইড’ রিলেশনশিপের অর্থ কি?
আদালত তার রায়ে ‘বোনা ফাইড’ রিলেশনশিপ বা প্রকৃত সম্পর্কের বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছে। এম সম্পর্ক আছে বলে বিবেচিত হবে তারাই যেসব বিদেশি নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কোন সদস্যের সঙ্গে বাস করতে চান বা তাদের কাছে বেড়াতে আসতে চান,মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ছাত্র, মার্কিন কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মী অথবা মার্কিন শ্রোতাদের সামনে বক্তব্য রাখতে আমন্ত্রিত লেকচারার।
এতে আরও বলা হয়, যারা শুধু ওই নির্বাহী আদেশ এড়ানোর জন্যে কোন সম্পর্কে জড়বে তাদের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে না।
আদালতে বিচারপতিদের মধ্যে কি মতপার্থক্য ছিল?
হ্যা। আদালতের রক্ষনশীল তিন বিচারপতি ক্ল্যারেন্স থমাস, স্যামুয়েল আলিটো এবং নিল গোরসাচ লিখেছিলেন যে তারা ভ্রমন নিষেধাজ্ঞা পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকরের অনুমতি দিতেন। বিচারপতি থমাস বলেন, দেশে প্রবেশ প্রত্যাখ্যাত মানুষের কষ্টের তুলনায় জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় সরকারের আগ্রহ অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।
বিবিসির রিপোর্টে বলা হয়, এপ্রিল মাসে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চে ট্রাম্পের মনোনিত প্রার্থী বিচারপতি গোরসাচ যোগ দেয়ার পর আদালতে ৫-৪ রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠতা ফিরিয়ে আনেন ট্রাম্প। আদালতেন এখন রিপাবলিকান নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারপতি রয়েছেন ৫ জন আর ডেমোক্রেটিক শিবির থেনে নিয়োগপ্রাপ্ত ৪ জন।
ভ্রমন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নিম্ন আদালতগুলো কি বলেছিল?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছিলেন যে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য তার নিষেধাজ্ঞা ছিল জরুরি। তবে, সমালোচকরা তার ওই নিষেধাজ্ঞাকে আন-আমেরিকান ও ইসলামোফোবিক বলে আখ্যা দেন। নিম্ন আদালতও বহুলাংশে তেমনটাই মনে করেছিল। ৬ই মার্চ নির্বাহী আদেশ আসার পর হাওয়াই ও ম্যারিল্যান্ডের ফেডারেল বিচারকরা তা স্থগিত করে দিলে প্রেসিডেন্টের এ নীতি বাধাগ্রস্থ হয়। ভার্জিনিয়ার রিচমন্ডের ৪র্থ ইউএস সার্কিট কোর্ট অব আপিলস মে মাসে বলেছিল এ নিষেধাজ্ঞা মুসলিমদের প্রতি ‘ধর্মীয় বৈরিতায় প্রোথিত’।
ট্রাম্প কেন ওই আদেশ সংশোধন করেছিলেন?
২৭ শে জানুয়ারি জারি হওয়া প্রথম নিষেধাজ্ঞার পর মার্কিন বিমানবন্দরগুলোতে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ দানা বাধে। সেবারের নিষেধাজ্ঞা তালিকায় ইরাকও ছিল। আর সিরিয়ার শরণার্থীদের ওপর পূর্ণাঙ্গ নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলা হয়েছিল। কিছু আইনি সমস্যা এড়াতে ৬ই মার্চ সংশোধিত ভ্রমন নিষেধাজ্ঞার নির্বাহী আদেশ জারি করেন প্রেসিডেন্ট। তবে, সেটা করে নাখোশ ছিলেন ট্রাম্প। সংশোধিত আদেশকে প্রথমটির ‘দূর্বলতর ও রাজনৈতিকভাবে সঠিক’ ভার্শন বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *