ফাঁকা নগরে প্রবাসীর ঈদ

Slider গ্রাম বাংলা

c078a3a89856030ecc52290893e43c21-594fb94168bee

 

 

 

 

ঈদের কথা, ঈদের আনন্দের কথা মনে হলে ভীষণ খারাপ লাগে। ৩০ রোজার শেষে ঈদ। এই ঈদ কতই না আনন্দের ছিল। সারা বছরই অপেক্ষায় থাকতাম যে ঈদের জন্য। সেই ঈদই এখন কেমন জানি নিরানন্দে চলে যায়। প্রবাসে ঈদে আনন্দ যে নেই, তা নয়। দেশে পালন করে আসা ঈদের তুলনায় প্রবাসে ঈদের আনন্দ সামান্যই। আসলে পরিবার-পরিজন, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, পুরোনো বন্ধুবান্ধব ছাড়া ঈদ আনন্দ জমে না। ঈদ আনন্দময় হয়ে ওঠে না।

বলতে গেলে গ্রামের তুলনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম শহরেও তো ঈদ আনন্দ একটু কম। তাই তো যানবাহনের অপ্রতুলতা সত্ত্বেও মানুষ এত কষ্টে শহর থেকে গ্রামে শেকড়ের দিকে ছোটে।
এই কুয়ালালামপুর শহরও ঢাকা-চট্টগ্রাম শহরের মতো। আর কিছুতে মিল থাকুক না থাকুক, ঈদে গ্রামে ফেরার দিক দিয়ে কুয়ালালামপুরের সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম শহরের মিল আছে। ঈদের দুই-তিন দিন আগে থেকে মালয়েশিয়ানরা গ্রামে ছুটে যায়। ঈদে ফাঁকা হয়ে যায় কুয়ালালামপুর শহর। তখন বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের দখলে থাকে কুয়ালালামপুর শহর।
ইট-পাথরের ইমারতের এ শহরে দেশের মতো ঈদ আনন্দ খুঁজেও পাওয়া যায় না। বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজনের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ, আড্ডা শেষে বিষণ্ন মনে ফেলে আসা দিনগুলোর কথা, শৈশবের ঈদ, কৈশোরের ঈদের কথা ভাবতে ভাবতে কোনোসময় যে নিজের অজান্তে চোখের কোণে জল ছলছল করে ওঠে। আর কি করার থাকে?
বাড়িতে ফোন করে পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে কথা বলে তাদের আনন্দের কথা জেনে নিজেও কিছুটা আনন্দ অনুভব করার চেষ্টা করা।
কোনো কোনো প্রবাসীর তো আবার ঈদের দিনও ডিউটি থাকে। বিশেষ করে যারা শপিংমলে কাজ করেন। কুয়ালালামপুর শহরের বড় কোনো শপিংমল ঈদে বন্ধ থাকে না। অনেক প্রবাসী শুধু কোনোমতে ঈদের নামাজ পড়ে বাসায় এসে ভালোমন্দ কিছু খেয়েই ডিউটিতে যান। ডিউটির ফাঁকে কোনো এক সময় দেশে ফোন দিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। হ্যাঁ, আজ আমাদের ঈদ। দেশে তো ঈদ আগামীকাল। ঈদের নামাজ পড়েছি, বাসায় সেমাই রান্না করে খেয়েছি, এখন ডিউটিতে আসছি, দোকান খোলা অন্য লোক নেই, তাই আমার আসতে হলো। তো তোমাদের সবকিছু কেনাকাটা ঠিকমতো হয়েছে তো? দেখো, কোনো কিছু বাদ থাকলে কিনে নাও।
পরিবারের সঙ্গে এ রকম কথাই বলেন প্রবাসীরা। নিজের জন্য কিছু কিনল কী কিনল না, তাতে কিছু আসে যায় না। তবে, দেশে পরিবারের সবাই শপিং করেছে কিনা তারই খবর নেয় বারবার ফোন করে। অধিকাংশ প্রবাসীর ঈদে কেনাকাটার প্রতি আগ্রহই থাকে না। শুধু নামমাত্র কেনাকাটা করা। হাজার হোক ঈদ বলে কথা।
কুয়ালালামপুরে গত ১৪ বছর ধরে দেখে আসছি, যারা কন্সট্রাকশন কোম্পানি বা ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন তারা ঈদের কেনাকাটার চেয়েও ঈদের ছুটির দিনগুলো উপভোগ করতেই বেশি পছন্দ করেন। কুয়ালালামপুর কোতারায়া বাংলা মার্কেটে এসে আত্মীয়স্বজন বা পরিচিত বন্ধুদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ, বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে বিরিয়ানি অথবা গরুর মাংস দিয়ে পেটভরে ভাত খাওয়া আর গল্পগুজব করে সময় কাটান। কেউ কেউ দল বেঁধে কোথাও বেড়াতে যান। আর এখন তো নতুন করে যুক্ত হয়েছে অনলাইন আসক্তি। ছুটিতে যতক্ষণ খুশি অনলাইনে সময় কাটানো যাবে। দেশে ফেলে আসা বন্ধুদের সঙ্গে হাই-হ্যালো যত ইচ্ছে করা যাবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজে যাওয়ার তাড়া তো নেই। যেভাবে পারি একটু উপভোগ তো করতেই হয়। ব্যস্ততার প্রবাসজীবনে, কষ্টের প্রবাসজীবনে ছুটি বলে কথা।
প্রবাসী অনেকে ঈদে বিশেষ খাবার হিসেবে বাসায় বিরিয়ানি, খিচুড়ি, গরুর মাংস রান্না করেন। প্রবাসী বন্ধুদের দাওয়াত করে খাওয়ানো, প্রবাসে থাকা আত্মীয়স্বজনদের বাসা, পরিচিতজনের বাসায় যাওয়া এ সবও আছে প্রবাসীর ঈদে।
প্রবাসীরা চেষ্টা করেন ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে। কিন্তু, প্রবাসের ঈদ কি আর দেশের ঈদের সঙ্গে মেলে? প্রবাসের ঈদের চেয়ে দেশের ঈদ আনন্দ অনেক-অনেক বেশি। তাই-তো প্রবাসীরা বারবার দেশে ফেলে আসা ঈদ আনন্দের কথা ভেবে-ভেবে কষ্টবোধ করেন মনের গহিনে; আর অশ্রুসিক্ত হয় দুই চোখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *