চাপে বাংলাদেশে মুক্ত মত প্রকাশের স্বাধীনতা

Slider বাংলার মুখোমুখি

71295_kamal

 

 

 

 

 

ঢাকা: একজন শিক্ষার্থী হিসেবে সম্প্রতি আমি আবারো বাংলাদেশ সফরে যাই। এ সময় এক সহকর্মী আমাকে সুলতানা কামালের সঙ্গে সাক্ষাত করার পরামর্শ দেন। মানবাধিকার রক্ষায় কয়েক দশক ধরে তিনি কাজ করার জন্য সবার কাছে যথেষ্ট সম্মানীত তিনি। কিন্তু উগ্রপন্থিদের হুমকির কারণে সুলতানা কামাল জনসমক্ষে তেমন আসছেন না। এর নেপথ্যে যে কাহিনী বেরিয়ে এলো তা হলো কর্তৃপপক্ষ। তারা ধর্মীয় কিছু উগ্রপন্থিদের সন্তুষ্ট করার উদ্যোগ নিয়েছে। মৌলিক মানবাধিকারের নীতি নিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে তা শেষ হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দীর্ঘদিন ধরে ধর্ম নিরপেক্ষতার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ঢাকায় সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে ন্যায়বিচারের নারী মূর্তি সরিয়ে ফেলার দাবি করে কট্টরপন্থি গ্রুপ হেফাজতে ইসলাম। তাদের দাবি, এটা ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধ একটি জিনিস। তাদের সেই দাবি মে মাসে মেনে নেয় সরকার। ২৮ শে মে সুলতানা কামাল এক টিভি বিতর্কে যুক্তি দেখান যে, এই যুক্তিতে কোর্ট প্রাঙ্গণে কোনো মসজিদ থাকা উচিত নয়। এর ফলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে হেফাজতে ইসলাম। সুলতানা কামালকে তারা গ্রেপ্তারের দাবি তোলে। তাকে তারা হুমকি দিয়ে বলে যে, তিনি যদি রাস্তায় বের হন তাহলে তার শরীরের সব কটি হাড় ভেঙে দেয়া হবে। সুলতানা কামাল বলেছেন, এই হুমকি দেয়ার পর ফেসবুকে অবমাননাকর সব পোস্ট দেয়া হয়েছে। তাতে তার ছবি এমনভাবে ব্যবহার করা হয়েছে যাতে দেখানো হয়েছে তাকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে।

এরপর থেকেই পুলিশি নিরাপত্তায় রয়েছেন তিনি। এখনও সরকার ওই হুমকির প্রকাশ্যে কোনো নিন্দা জানায় নি। ১৮ই জুন দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কারণে তার গ্রেপ্তার দাবি করে একজন আইনজীবী লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন। যাহোক, সুলতানা কামালকে গ্রেপ্তার করা হয় নি।

এই রকম হুমকি ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। এরই ধারাবাহিকতায় ব্লগার ও ধর্মনিরপেক্ষবাদী কিছু নেতাকর্মীর ওপর প্রাণঘাতী বেশ কতগুলো হামলা চালিয়েছে উগ্রপন্থি গ্রুপগুলো। এসব হামলার নিন্দা জানানো ও দায়ীতের গ্রেপ্তারের পরিবর্তে কর্মকর্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তারা বলেছেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া একটি অপরাধ।

রাষ্ট্র ক্রমাগত মুক্ত মত প্রকাশের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান হারে আক্রমণ করছে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে ঘটছে এসব । গত দু’বছরে, মিডিয়া ও সুশীল সমাজের বিরুদ্ধে দমন পীড়ন চালিয়েছে সরকার।

সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে অন্য একটি স্থানে ‘লেডি জাস্টিস’কে পুনঃস্থাপন করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাংলাদেশ এক ভয়াবহতার পথে। সুলতানা কামালের মতো মানবাধিকার রক্ষাকারীদের নিরাপত্তা দিতে সরকারকে আরো অনেক কিছু করা উচিত। এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত যেখানে হুমকি ও আক্রমণমুক্ত পরিবেশে তারা তাদেরকাজ করে যেতে পারেন। ধর্মীয় কট্টরপন্থিদের খুশি করা ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশকে আরো সহিংসতায় ঠেলে দেয়া হবে।
(প্যাট্রিসিয়া গোসম্যান, সিনিয়র রিচার্স, আফগানিস্তান। তার এ লেখাটি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের অনলাইন সংস্করণের অনুবাদ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *