গাঁজা শিক্ষা

Slider শিক্ষা সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী
19184303_1053768224753441_250702109_n

 ওমর অক্ষর: শিক্ষা সবাই পায়, কিন্তু শিক্ষিত সবাই হয় না। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়ে কেউ শিক্ষিত হতে পারে না। অনেক বিষয় স্মরন রাখার ক্ষমতাকেই আমি শিক্ষা বলি না। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যদি মানুষ কে শিক্ষিত করতে পারত, তাহলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ সমাজের একটা বড় অংশ আজ গাঁজা খেতো না। আমি একটি বন্ধুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
তার বন্ধুত্বের নিবেদনে তার হলে রাতে থাকার জন্য মনস্থির করলাম। রাত ৮ থেকে ৯ টা পর্যন্ত এক ঘন্টা মাত্র গাঁজার ধোঁয়ায় টিকতে পারছিলাম না। রুমগুলো মাদকের ধোয়ায় অন্ধকারে অন্য জগৎ লাগছিলো। বড় একটি অযুহাত দিয়ে আমি সে রাতে চলে আসলাম। এ বিষয়ে এক
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রি জাকিয়া আপুর সাথে আলাপ হলো। সব শুনে সে বললো গাঁজা এখন অনেক ছাত্র-ছাত্রি খায়, এটা বেপার না। অনেক ভালো ভালো ফ্যামিলির ছেলে মেয়েরা গাঁজা খায়। এটা তেমন কোনো প্রবলেম না ‘অক্ষর’। আপুটি গাঁজা খাওটাকে কোনো সমস্যায় মনে করে না। আর ভালো ফ্যামিলি ছেলে মেয়ে বলতে সে বুজাইছে আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল পরিবার। এখানে মেধাবী জাকিয়া আপুর কথা মানতে আমি নারাজ। কেউ কেউ খুব মেধাবী, কিন্তু বিচার-বিবেচনা করার ক্ষমতার অভাব দেখা যায় এবং সুবিবেচনার মধ্যে ভেদাভেদ নির্ধারণ করতে পারে না। যেমন সে স্বচ্ছল পরিবারকে ভালো ফ্যামিলি বলছে। কিন্তু একটি ভালো পরিবার স্বচ্ছলতার পাশা পাশি নেশামুক্ত সুস্ততা থাকা জুরুরি। নেশাগ্রস্থ অসুস্থ পরিবারকে ভালো পরিবার বলি কেমনে? আর জাকিয়া আপু মেধাবী শিক্ষত মেয়ে হয়ে গাঁজা সেবন সমস্যা না বলে জানিয়েছে। জাকিয়া আপুর মতো অনেকে আসক্তের গাঁজা সেবনের ব্যাপারটি জানলেও খুব একটা গুরুত্ব দেন না – কিন্তু প্রকৃতপক্ষে গাঁজাও একটি সর্বনাশা, ভয়ংকর মাদক। গাঁজা সেবনে সংজ্ঞাহীনতা, গলা শুকিয়ে আসা, মানসিক অসুস্থতা, ইনস্ট্যাবিলিটি, মাথা ঘুরানো, হার্টবিট প্রচণ্ড বাড়িয়ে দেয়া ইত্যাদি। এবং এর দীর্ঘস্থায়ী কুফলটুকু আরও মারাত্মক। টানা পাঁচটা সিগারেট খেলে যতটুকু ক্ষতি হবে এক পুরিয়া গাঁজা খেলে ততটুকু ক্ষতি হবে। গাঁজা সেবন করলে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি ফেইলিওরের মতো সমস্যা, হাইপ্রেশার ইত্যাদি অবশ্যম্ভাবী। গাঁজার ক্ষতিকর কেমিক্যালটি মানবদেহে সাত থেকে দশদিন থাকে এবং এই নেশাটি মানুষকে অল্পদিনেই আসক্ত করে ফেলতে পারে। বেশি দিন সেবনে ধ্বংস করে।

ওমর

 কিছুক্ষন আলোচনার পর জাকিয়া আপু আমাকে প্রশ্ন করেছিলো। “অক্ষর কেউ নেশা করলে তোমার সমস্যা কি? এখানে তোমার স্বার্থ কি?” উত্তরে বলেছিলাম, “ এখানে আমার স্বাস্থ্যকর স্বর্থপরতা আছে। আমি যা দিবো তার চেয়ে বেশি ফিরত পাবো! তাই বলে কিছু ফিরে পাওয়া ইচ্ছানিয়ে কিছু দেয় না।” সে মনে হয় আমার কথা বুঝতে পারেনি, তাই আবার প্রশ্ন করলো -“যে কোনো ছাত্র মাদক দ্রব্য গ্রহন করলে তাতে তোমার মাথাব্যথা কেন?” বললাম, “আপু তোমার কথা কিন্তু সম্পূর্ণ মেনে নেওয়া যায় না। কেন আমার মাথাব্যথা থাকবে না? আমি সাধারণ নাগরিক হিসেবে বাসযোগ্য সুস্থ সুন্দর দেশ আশা করতেই পারি। আপনি কি নিশ্চিত নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি গাড়ি চালিয়ে কেবল গাছের সাথেই ধাক্কা লাগবে? শারীরিক ভারসাম্য রক্ষায় অসুবিধা যার, সে যে কারোর উপর গাড়ি চালিয়ে দিতে পারে। অতএব সমস্যা আমার, আমাদের এবং সবার।” এত বলাম শিক্ষামহলে তরুণ তরুণীদের একটি মাত্র নেশার কথা। আরো অনেক মাদক তাদের গ্রাস করেছে যেমনঃ- ফেন্সিডিল, গিট্টু, চুযানি, বাংলামদ, টি.টি০, হর্স, ডেন্ডি, ভাং, চরস, আফিম, মরফিন, হেরোইন, কোকেন, মদ, এলএসডি, এবং আসক্তদের জনপ্রিয় ইয়াবা।

ওমর

 এসব যে কোনো নেশায় জড়িয়ে যাওয়ার অনেক কারণ থাকে। প্রধান কারণ সুশিক্ষার অভাব। অলোচনার প্রথমে বলেছিলাম, শিক্ষা সবাই পায়, কিন্তু শিক্ষিত সবাই হয় না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাত্র/ছাত্রীদের জ্ঞাননার্জনে সহায়তা করে। ব্যবসা-বাণিজ্য শিক্ষা দেয়া নয়; চরিত্র গঠনে উৎসাহ দেওয়া কলাকৌশলগত শিক্ষায় নয়। শিক্ষিত সে যে নিজেকে ভালোবাসে। নেশায় গলিয়ে তলিয়ে যাওয়া মানুষটিকে কেমনে শিক্ষিত বলি? অনেকে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বা দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে নেশা করা শুরু করেন। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষিত মানুষ দুর্ভাগ্যের শিকার হলেও অশোভন ভাবে বিচলিত না হয়ে সেই দুর্ভাগ্যকে মানুষের স্বভাবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গ্রহণ করেন। সে তো শিক্ষিত যার জীবন একের পর এক যে সমস্ত ব্যর্থ, সমস্যার সম্মুখীন হন, সেই সমস্ত অবস্থার সম্যকভাবে মোকাবিলা করতে পারেন এবং যারা সমস্যাপূর্ণ মুহূর্তগুলিকে যথার্থরুপে বিচার করে সঠিক পন্থা নির্ধারণ করতে পারেন। আর বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে সন্মানজনক ব্যবহার করেন, অপরের ব্যবহার অপ্রিয় বা অপমানজনক হলেও তাদের সঙ্গে সহজভাবে ব্যবহার করেন। তাছাড়াও যারা নিজেদের আনন্দ-উল্লাসকে সব সময়েই নিয়ন্ত্রণে রাখেন। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যারা সাফল্যের অনন্দে পথভ্রষ্ট হয়ে মানুষের নিজস্ব স্বত্বাকে বিনষ্ট করেনি এবং ব্যর্থ হয়ে নিজেকে ধ্বংস করেনি। যাদের এসব গুণাবলী নেই তাদের শিক্ষিত বলা যায় না। সহজ কথাই বলা যায়, শিক্ষিত ব্যক্তি যে কোনো কঠিন অবস্থায় বিজ্ঞতা ও সাহসের সঙ্গে সঠিক পথ নির্ধারণ করে নিতে পারেন। যদি কেউ প্রজ্ঞা ও সাহসের সঙ্গে সঠিক পথ নির্ধারণ করে নিতে পারেন। কেউ প্রজ্ঞা ও মূঢ়তার মধ্যে, ভালো ও মন্দের মধ্যে শালীনতা ও অশালীনতার মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন, তাহলে তার প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি থাকুক বা না থাকুক তাকে শিক্ষিত ব্যাক্তি বলা যায়। সঠিক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হলে কেউ যদি সমস্ত প্রশ্নের যদি উত্তর জানেন তবে তাকে বিশেষজ্ঞ বলা যায়।।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *