পাহাড়ধসে নিহত ১২৬

Slider জাতীয়

c20377289eca4e4f703ae9474b0454fd-59403fed4f6ef

ঢাকা: কেউ হারিয়েছেন স্ত্রী-সন্তান, কেউ হারিয়েছেন মা ও ভাইবোন। আবার কয়েকটি পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। স্বজনের কান্না আর অবিরাম বৃষ্টি যেন মিলেমিশে একাকার। চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দরবানের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসে অন্তত ১২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ঘটেছে রাঙামাটিতে। সেখানে পাহাড়ধসে মারা গেছেন ৯৮ জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সেনাবাহিনীর দুই কর্মকর্তা ও দুই সৈনিক। পাহাড়ধসে বন্ধ হয়ে যাওয়া রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক চালু করতে গিয়ে প্রাণ হারান তাঁরা।

এ ছাড়া চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ২১ জন ও চন্দনাইশ উপজেলায় ৩ জন এবং বান্দরবানে পাহাড়ধসে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার মধ্যরাত ও গতকাল মঙ্গলবার ভোরে পাহাড়ধসে তাঁরা মারা যান। প্রাণহানি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ফায়ার সার্ভিস ও জেলা প্রশাসন গতকাল রাত আটটা পর্যন্ত উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছে। দুর্গম যোগাযোগব্যবস্থা ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গত রাত আটটায় উদ্ধার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের ৬০ জনের একটি দল আজ বুধবার রাঙামাটি গিয়ে উদ্ধারকাজে অংশ নেবে।

এর বাইরে দেয়াল চাপা পড়ে চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

গত নয় বছরের মধ্যে পাহাড়ধসে প্রাণহানির এটি সবচেয়ে বড় ঘটনা।

এর আগের ঘটনাটিও জুন মাসে ঘটেছিল। ২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসে ১২৭ জন নিহত হয়েছিল।

রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেন, জেলা সদরে ৫৩ জন, কাউখালীতে ২৩ জন, কাপ্তাইয়ে ১৮ জন এবং বিলাইছড়ি ২ জন ও জুরাছড়িতে ২ জন করে পাহাড়ধসে মারা গেছেন। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর নষ্ট হয়েছে। রাঙামাটি শহরও বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

পাহাড়ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে আগেই প্রস্তুতি নেওয়া যেত বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক গওহার নঈম ওয়ারা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অতীতে পাহাড় ধ্বংস করা হয়েছে। এখনো পাহাড় কাটা হচ্ছে। দখল চলছে। পাহাড়ে বসতি ব্যবস্থাপনায় নিয়ম-শৃঙ্খলা আনা না গেলে ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যা দেখা দেবে।

এই অধ্যাপক বলেন, এবার যে আগাম বর্ষা হবে, তা ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ যাওয়ার সময়ই বলে গিয়েছিল। কিন্তু তা কেউ কানে তোলেনি। পাহাড়খাদক দখলদারেরা বাঁচার আশা নিয়ে আসা মানুষদের পাহাড়ে বসিয়ে দেয়। উদ্বাস্তুর আশা মাথা গোঁজার ঠাঁই, আর দখলদারদের আশা জমি-মাটি-টাকা। সমতলের বাঙালিরা পাহাড়ে বসতি গড়ার কায়দা-কানুন জানে না। তারা মাটি আর পাহাড়ের তফাত বুঝতে পারে না। পাহাড়ে বসবাসের তরিকা রপ্ত করার আগেই দুর্ঘটনা ঘটে যায়।

ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে সরে যেতে মাইকিং করার পরও কেউ সরেনি বলে জানান রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান। তিনি বলেন, জোর করে তো আর কাউকে সরানো সম্ভব নয়। পাহাড়ের এসব ঘর অবৈধ। পাহাড় কেটে নিয়মনীতি না মেনে এসব বসতি করা হয়েছে।

রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ধস শুরু হয় গতকাল ভোর ৫টা থেকে। এরপর বেলা ১১টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় শহরের ভেদভেদি, রাঙ্গাপানি, যুব উন্নয়ন, টিভি স্টেশন, রেডিও স্টেশন, রিজার্ভ বাজার, মোনঘর, শিমুলতলি ও তবলছড়ি এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। শহরের যুব উন্নয়ন এলাকায় মা-ছেলের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলো সোনালি চাকমা (৩০) ও তাঁর ছেলে অমিয় চাকমা (৭)। ওই সময় সোনালি চাকমার স্বামী জীবন চাকমা ঘরে ছিলেন না। একই এলাকায় প্রায় ৫০০ গজ দূরে মাটি চাপা পড়ে মারা গেছেন এক পরিবারের ছয়জন—হাজেরা বেগম (৪০), রুমা আক্তার (২৫), মো. সোহাগ (১৩), নূরী আক্তার (৩) মো. শরিফ (২৬) ও সোহানা আক্তার (২০)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *