ওই নারীর নাম সুখিয়া রবিদাস (৩০)। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শাইলু মিয়া (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শাইলু একই উপজেলার সুরাবই গ্রামের আবদুর নুরের ছেলে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সুতাং বাজারের সেতুর পশ্চিম পাশে সুখিয়া রবিদাস তাঁর একমাত্র ১২ বছরের ছোট ভাইকে নিয়ে বাস করে আসছিলেন। বিভিন্ন সময় সুখিয়াদের বাড়ির জায়গা দখলের জন্য এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল তাঁদের নির্যাতন করে আসছিল। শনিবার সকাল সাতটার দিকে শাইলু মিয়া যান সুখিয়ার বাড়িতে। তখন সুখিয়ার ছোট ভাই বাড়িতে ছিল না। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সুখিয়া ঘর থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় শাইলু ভারী একটি কাঠ নিয়ে তাঁকে তাড়া করেন। দৌড়ানোর একপর্যায়ে সুখিয়া সড়কের ওপর লুটিয়ে পড়েন। তখন শাইলু কাঠ দিয়ে তাঁকে আঘাত করেন। ঘটনাস্থলেই সুখিয়া মারা যান। এলাকার অনেকেই এ দৃশ্য দেখেছেন। তবে কেউ এগিয়ে আসেননি।
সুখিয়ার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় মোহর রবিদাস অভিযোগ করেন, হত্যার আগে সুখিয়াকে ধর্ষণ করা হয়। দ্বিতীয়বার নির্যাতন করতে চাইলে তিনি দৌড়ে ঘর থেকে বের হন। তখন শাইলু তেড়ে গিয়ে একটি কাঠ দিয়ে আঘাত করে তাঁকে হত্যা করেন।
এলাকাবাসী বলেন, আট বছর আগে সুখিয়ার স্বামী মনি লাল দাসকেও একইভাবে বাড়ির পাশে রাতের আঁধারে হত্যা করা হয়। মামলা পরিচালনা করতে না পারার কারণে সেই হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। সুখিয়ার চাচা অর্জুন রবিদাসও (৫০) ২০১৩ সালে হত্যার শিকার হন। শাইলু মিয়া ওই হত্যা মামলার প্রধান আসামি। মামলাটি বর্তমানে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ওই হত্যা মামলার সাক্ষী ছিলেন সুখিয়া রবিদাস। এলাকাবাসীর দাবি, সুখিয়া ও তাঁর স্বামী মনিলাল দাস এবং তাঁর চাচা অর্জুন হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র একই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, সুখিয়া বাড়ি থেকে দৌড়ে পালানোর পর সড়কে প্রকাশ্যে তাঁকে হত্যা করা হয়। অনেকেই এ দৃশ্য দেখেছেন, তবে তাঁকে সহযোগিতা করার জন্য কেউ এগিয়ে যাওয়ার সাহস পায়নি।
সুতাং বাজারের ব্যবসায়ী রফিক মিয়া বলেন, বাজারের পাশে আরও তিন-চারটি রবিদাস পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বাস করে আসছে। ওই এলাকা থেকে উচ্ছেদ করতে একই এলাকার একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে তাদের নানাভাবে নির্যাতন করে আসছে। জায়গা দখল করাই মহলটির মূল উদ্দেশ্য।
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে অশালীন প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কারণে ওই নারীকে হত্যা করেন শাইলু। শাইলুকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। আগের হত্যাকাণ্ডগুলোর বিষয়ে ওসি বলেন, তদন্তের পর এসব বিষয়ে জানা যাবে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।