ঢাকা; সবার জন্য অভিন্ন ১৫ ভাগ একক ভ্যাট আর ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের ওপর বাড়তি আবগারি শুল্ক আরোপ করে সংসদে উচ্চাভিলাষী বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের জন্য চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার এ বাজেটে নতুন কোনো চমক না থাকলেও সাধারণ মানুষের ওপর কর আর ভ্যাটের পরিধি বাড়ায় জনজীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
তারা বলছেন অতি উচ্চাভিলাষী এ বাজেটে সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা বাড়বে। এ ছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণও কঠিন হবে বলে মনে করছেন তারা। সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ পূর্ণাঙ্গ এ বাজেটকে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় উচ্চাভিলাষী বাজেট বলে আখ্যায়িত করেছেন। সাত দশমিক ৪ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে প্রস্তাবিত বাজেটে অনুদান ছাড়া সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ৫ ভাগ। বিদায়ী অর্থ বছরেও এ হার একই ছিল। বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৫৯ হাজার ১৩ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে এ খাতে সংশোধিত ব্যয়ের লক্ষ্য রয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে এ খাতে সংশোধিত ব্যয় হচ্ছে এক লাখ ৯২ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ২০১৬-১৭ অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ১৭ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি। প্রস্তাবিত বাজেট দেশের জিডিপি’র ১৮ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল জিডিপি’র ১৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
গতকাল বিকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদনের পর তাতে সই করেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ। বাজেটে অর্থসংস্থানের উৎস হিসেবে রাজস্ব থেকে আয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। করসমূহ থেকে আয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার ৮১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত কর থেকে আসবে দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত কর থেকে ৮৬২২ কোটি টাকা, কর ছাড়া ৩১১৭৯ কোটি এবং বৈদেশিক অনুদান থেকে ৫৫০৪ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। এবারের বাজেটে সবচেয়ে বেশি অর্থ আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্যসংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, ৯১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে ৮৫ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। আগের বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৭১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এ ছাড়া নতুন বাজেটে আমদানি শুল্ক থেকে ৩০ হাজার ২৩ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৩৮ হাজার ৪০১ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ১৫৯৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১৬৯০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। সার্বিক বাজেট বরাদ্দের মধ্যে শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে সর্বোচ্চ ১৬.৪ ভাগ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত জনপ্রশাসনে ১৩.৬ ভাগ, পরিবহন ও যোগাযোগে ১২ দশমিক ৫ ভাগ এবং এরপরে ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ ১০.৪ ভাগ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ৬.৯, কৃষিতে ৬.১ প্রতিরক্ষায় ৬.৪, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় ৫.৭, স্বাস্থ্যে ৫.২ এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ৫.৩ ভাগ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তিপর্যায়ের করসীমা অপরিবর্তিত রয়েছে। করমুক্ত আয়ের সীমা দুই লাখ ৫০ হাজার টাকাই থাকছে। তবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকার স্থলে চার লাখ টাকা প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। অঞ্চলভিত্তিক ন্যূনতম কর হার আগের অর্থবছরের করহারই বহাল থাকছে। ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ বহাল রাখার প্রস্তাব করে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় মূল্যসংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ আগামী ১লা জুলাই থেকে পুরোপুরি কার্যকর করার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মূল্যসংযোজন কর বর্তমানে ১৫ শতাংশ করে এক ও অভিন্ন হারে প্রয়োগ করা হবে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বিমান ভ্রমণে বাড়তি আবগারি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। বছরে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয় এমন অ্যাকাউন্ট আবগারি শুল্কের বাইরে রেখে বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এক লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিদ্যমান ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা এবং ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা এবং এক কোটি টাকার ঊর্ধ্বে থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ৭৫০০ টাকার পরিবর্তে ১২০০০ টাকা এবং পাঁচ কোটি টাকার ঊর্র্ধ্বে বিদ্যমান ১৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। বছরে একবার এই হারে আবগারি শুল্ক কাটা হবে।
সার্কভুক্ত দেশছাড়া অন্যান্য দেশে বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে এক হাজার টাকার পরিবর্তে দুই হাজার টাকা, ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে বিদ্যমান এক হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৩০০০ টাকা অবগারি শুল্ক আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। বিমানযাত্রীদের সুবিধার্থে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ এ শুল্ক টিকিটের সঙ্গে যুক্ত করে আদায় করবে। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় চলতি অর্থবছর থেকে স্বর্ণ আমদানি ও জুয়েলারি শিল্প নীতিমালা প্রণয়নের কথা জানিয়েছেন। মূল্যস্ফিতি অপরিবর্তিত থাকার আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী।
প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে তার মধ্যে রয়েছে গুঁড়া দুধ, মাখন, শুকনা আঙুর, যেকোনো ধরনের তাজা ফল, গোল মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, জিরা, চকলেট, শিশু খাদ্য, পটেটো চিপস, সস, আইসক্রিম, লবণ, জ্বালানি তৈল, পেইন্ট, বার্নিশ, সৌন্দর্য অথবা প্রসাধনী সামগ্রী, শেভিং কিটস, শরীরের দুর্গন্ধ দূরীকরণে ব্যবহৃত সামগ্রী, টয়লেট সামগ্রী, রুম সুগন্ধি, সাবান, ডিটারজেন্ট, মশার কয়েল, অ্যারোসল ও মশা মারার সামগ্রী, প্লাস্টিক পণ্য, প্লাস্টিকের দরজা, জানালা, ফ্রেম, মোটরগাড়ির টায়ার, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, ওভেন ফ্রেবিক্স, কার্পেট ও অন্যান্য টেক্সটাইল ফ্লোর আচ্ছাদন। এ ছাড়া শিশুদের গার্মেন্ট পণ্য, বিদেশি জুতা, ইমিটেশন জুয়েলারি, স্টেইলনেস স্টিলের সিঙ্ক, ওয়াস বেসিনের যন্ত্রাংশ, ওয়াটার ট্যাপ, বাথরুমের ফিটিংস, স্টেইনলেস স্টিল বেলট, দুই ও চার স্ট্রোক বিশিষ্ট অটোরিকশা/থ্রি হুইলার ইঞ্জিন, সিলিং ফ্যান ও এর যন্ত্রাংশ, রঙিন টেলিভিশন, সিম কার্ড, সিসি ভেদে গাড়ি ইত্যাদি।
প্রস্তাবিত বাজেটে বেশকিছু পণ্যে শুল্ক, মূল্যসংযোজন কর (মূসক) ও সম্পূরক শুল্ক কমানো বা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব প্রস্তাব অনুমোদন পেলে যেসব পণ্যের দাম কমবে তা হলো দেশীয় মোবাইল, ল্যাপটপ, আইপ্যাড, দেশীয় মোটরসাইকেল ও হাইব্রিড গাড়ি, দেশীয় ব্যাটারি, কৃষি যন্ত্রপাতি, সিরামিক, ক্যানসার প্রতিরোধক ঔষধসহ অন্যান্য ঔষধ, কৃষি, মৎস্য, পোল্ট্রি ও ডেইরি খাতের পণ্য, চামড়াজাত শিল্প যন্ত্রপাতি।
সার্কভুক্ত দেশছাড়া অন্যান্য দেশে বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে এক হাজার টাকার পরিবর্তে দুই হাজার টাকা, ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে বিদ্যমান এক হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৩০০০ টাকা অবগারি শুল্ক আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। বিমানযাত্রীদের সুবিধার্থে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ এ শুল্ক টিকিটের সঙ্গে যুক্ত করে আদায় করবে। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় চলতি অর্থবছর থেকে স্বর্ণ আমদানি ও জুয়েলারি শিল্প নীতিমালা প্রণয়নের কথা জানিয়েছেন। মূল্যস্ফিতি অপরিবর্তিত থাকার আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী।
প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে তার মধ্যে রয়েছে গুঁড়া দুধ, মাখন, শুকনা আঙুর, যেকোনো ধরনের তাজা ফল, গোল মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, জিরা, চকলেট, শিশু খাদ্য, পটেটো চিপস, সস, আইসক্রিম, লবণ, জ্বালানি তৈল, পেইন্ট, বার্নিশ, সৌন্দর্য অথবা প্রসাধনী সামগ্রী, শেভিং কিটস, শরীরের দুর্গন্ধ দূরীকরণে ব্যবহৃত সামগ্রী, টয়লেট সামগ্রী, রুম সুগন্ধি, সাবান, ডিটারজেন্ট, মশার কয়েল, অ্যারোসল ও মশা মারার সামগ্রী, প্লাস্টিক পণ্য, প্লাস্টিকের দরজা, জানালা, ফ্রেম, মোটরগাড়ির টায়ার, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, ওভেন ফ্রেবিক্স, কার্পেট ও অন্যান্য টেক্সটাইল ফ্লোর আচ্ছাদন। এ ছাড়া শিশুদের গার্মেন্ট পণ্য, বিদেশি জুতা, ইমিটেশন জুয়েলারি, স্টেইলনেস স্টিলের সিঙ্ক, ওয়াস বেসিনের যন্ত্রাংশ, ওয়াটার ট্যাপ, বাথরুমের ফিটিংস, স্টেইনলেস স্টিল বেলট, দুই ও চার স্ট্রোক বিশিষ্ট অটোরিকশা/থ্রি হুইলার ইঞ্জিন, সিলিং ফ্যান ও এর যন্ত্রাংশ, রঙিন টেলিভিশন, সিম কার্ড, সিসি ভেদে গাড়ি ইত্যাদি।
প্রস্তাবিত বাজেটে বেশকিছু পণ্যে শুল্ক, মূল্যসংযোজন কর (মূসক) ও সম্পূরক শুল্ক কমানো বা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব প্রস্তাব অনুমোদন পেলে যেসব পণ্যের দাম কমবে তা হলো দেশীয় মোবাইল, ল্যাপটপ, আইপ্যাড, দেশীয় মোটরসাইকেল ও হাইব্রিড গাড়ি, দেশীয় ব্যাটারি, কৃষি যন্ত্রপাতি, সিরামিক, ক্যানসার প্রতিরোধক ঔষধসহ অন্যান্য ঔষধ, কৃষি, মৎস্য, পোল্ট্রি ও ডেইরি খাতের পণ্য, চামড়াজাত শিল্প যন্ত্রপাতি।