প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাইরে বিএনপি-জামায়াতের নির্মমতা তুলে ধরার জন্য ইউরোপে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোতে প্রবাসী বাংলাদেশি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নিজ এলাকায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রাখতে এবং দেশে বিএনপি-জামায়াতের নৃশংসতা ও দুর্নীতি তুলে ধরার আহ্বান জানান।
২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের নৃশংসতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরীহ মানুষ হত্যা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত লবিং করছে।
তিনি আরো বলেন, নিরীহ লোকদের হত্যা এবং সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের জন্য বিএনপি ও জামায়াতের বিরুদ্ধে সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং হত্যা ও আগুন সন্ত্রাসের জন্য দায়ী সকলকে বিচারের আওতায় আনা হবে।
অষ্ট্রিয়ার রাজধানীতে গতকাল সোমবার রাতে একটি হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির দেওয়া এক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) ৬০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সম্মেলনে যোগ দিতে গতকাল বিকেলে ভিয়েনায় পৌঁছান তিনি।
দেশের প্রতিটি সংকটকালে প্রবাসীদের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা জাতীয় উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন।
তিনি জনগণকে সচেতন করতে বিশেষ করে যুবকদেরকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে ভূমিকা রাখার জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপি-জামায়াত কোমলমতি তরুণ ও শিশুদের ভুল পথ ঠেলে দিচ্ছে অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার যেকোনো মূল্যে এ ধরনের বিপদগামীদের নির্মূলে অঙ্গীকারবদ্ধ।
বাংলাদেশের মাটিতে সন্ত্রাসীদের কোন স্থান নেই এবং এই যুগল দানবের মূলোৎপাটন করতে হবে- উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেককে এই দুই দানবের ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তাঁর সরকার জনগণের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের মূলোৎপাটনে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে। এছাড়া স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, সংস্কৃতি কর্মী ও অন্যান্য পেশাজীবীদের সম্পৃক্ত করে গণসচেতনতা কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বাংলাদেশেও এর কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বর্তমান সরকার এই ভয়ঙ্কর অপরাধ নির্মূলে অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম হচ্ছে সহিষ্ণুতা ও শান্তির ধর্ম। এই পবিত্র ধর্ম কখনো মানুষ হত্যা অনুমোদন করে না। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে একটি স্বার্থান্বেসী মহল ধর্মের নামে যুবক শ্রেণিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের ধর্মে কোনো বিশ্বাস নেই। আত্মহত্যা ও গণহত্যাকারিরা কখনো বেহেশতে যেতে পারবে না। অবশ্যই তারা দোজখে যাবে।
শেখ হাসিনা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, আইসিটি ও বিদ্যুৎখাতের উন্নয়নসহ অর্থনীতি জোরদারে তাঁর সরকারের ব্যাপক সাফল্যের উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ প্রত্যেক মানুষের উন্নয়নে অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচি নিয়েছে।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মাঝে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু বাস্তবভিত্তিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সুবাদে দেশ ওই সংকট উতরে গেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে এবং এর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশেরও বেশি।
শেখ হাসিনা বলেন, আলোচিত সমাজ গঠনে বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ সার্বিক শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। সরকার মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে অব্যাহত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সুবাদে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়- এমন কোনো দল দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে না।
বিএনপি হেফাজতে ইসলামের মতো ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে উসকানি দেওয়ার জন্য দায়ী- উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্ররোচণায় হেফাজত ২০১৩ সালে ঢাকায় তাণ্ডব চালায়। জঙ্গিদের ব্যাপারে তার (খালেদা) সহানুভূতিতে তাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা বিরোধিতার নামে মূলতঃ নাটক করছে। তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে উন্নয়নে বাধা দেওয়া।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে এবং ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম এবং ২০৪১ সালের অনেক আগেই উন্নত দেশে রূপান্তরের প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
গ্র্যান্ড হোটেলে আওয়ামী লীগ অষ্ট্রিয়া চ্যাপ্টারের উদ্যোগে আয়োজিত এ সংবর্ধনা সভায় সভাপতিত্ব করেন খন্দকার হাসিবুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, আইসিটি ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অল-ইউরোপ আওয়ামী লীগ সভাপতি অনিল দাসগুপ্ত, আওয়ামী লীগ ইউকে চ্যাপ্টার সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ, অল-ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এম এ নজরুল ইসলাম।