সাফাতের অন্ধকার সাম্রাজ্য

Slider সারাদেশ

66566_f1

 

 

 

 

 

ছোটবেলা থেকেই ছিল অবাধ স্বাধীনতা। বেপরোয়া জীবন। মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরুনোর আগেই নারী ও মদের নেশা পেয়ে বসে তাকে। বন্ধুদের সঙ্গে তখন থেকেই বিভিন্ন পার্টিতে অংশ নিতো। পার্টিতে ঘটেছে অনভিপ্রেত নানা ঘটনা। বয়স ২৫ বছর হওয়ার আগেই নিজের ইচ্ছেমতো একে একে দু-দুটি বিয়ে। বিলাসিতা-বহুগামিতার কারণে কোনো বিয়েই টিকেনি। এভাবেই পা পা করে মাত্র ২৪ বছরের জীবনে এক অন্ধকার সাম্রাজ্য গড়ে তুলে সাফাত আহমেদ। যার পরিণতিতে গত ২৮শে মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের দায়ে কারাগারে আটক রয়েছে সে।
সাফাত আহমেদের কাছের বন্ধু, স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে তার সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সিলেটের গোলাপগঞ্জের দিলদার আহমেদ সেলিমের ছেলে সাফাত আহমেদ। পুরান ঢাকায় শাড়ি ব্যবসা করতেন দিলদার আহমেদ। সেই আপন শাড়ি থেকেই পরে আপন জুয়েলার্স। বাসা ছিল বারিধারা এলাকায়। সেখানেই ১৯৯২ সালের ২৮শে মার্চ জন্ম সাফাত আহমেদের। বর্তমানে গুলশান-২ এর আপন ঘর নামের দুই নম্বর বাড়িটি তাদের। দিলদার আহমেদ ও নিলুফার জেসমিনের দুই সন্তানের মধ্যে সাফাত আহমেদ বড়, ছোট ছেলে ১১ বছর বয়সী রিফাত আহমেদ। ওই বাড়িতেই পরিবারের সঙ্গে থাকতো সাফাত। স্বজনরা জানান, উত্তরাধিকারসূত্রেই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা পেয়ে যায় সাফাত। সাফাতকে ভর্তি করা হয়েছিল ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে (আইএসডি)। প্রতি বছর তার লেখাপড়ার জন্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করতেন দিলদার আহমেদ। টাকা ব্যয় করলেও স্বজনরা মনে করে সঠিক শিক্ষা দেয়া হয়নি তাকে। এ লেভেল পাস করার আগেই সাফাত হয়ে উঠে বেপরোয়া। মা-বাবার অবাধ্য হয়েই চলাফেরা করতো। ওই সময়েই বিভিন্ন পার্টিতে অংশ নেয়া শুরু। বিত্তশালীদের বখে যাওয়া সন্তানরা হয়ে যায় তার বন্ধু। ওই বয়সেই মদের বারে যাওয়া শুরু। বনানীর ব্লু মুন বারে আসা-যাওয়া ছিল সাফাত ও তার বন্ধুদের। রাত ১১টার পর প্রায়ই গাড়ি নিয়ে বাইরে বের হওয়া ছিল তার অভ্যাস। প্রায়ই বান্ধবীদের নিয়ে লং ড্রাইভে বের হতো।
কখনও কখনও প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালাতো। ছোটবেলা থেকে গড়ে উঠা এই বেপরোয়া, অবাধ স্বাধীনতা ক্রমেই বাড়তে থাকে। তার উগ্র ব্যবহারের শিকার হতো বাড়ি ও শো-রুমে কর্মরতরা।
২০১১ সালে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ কোর্সে ভর্তি হয় সাফাত। ওই সময়ে ক্লাসমেট লুদমিনা জেরিনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে তার। ২০১৩ সালে পরিবারের সবার অজান্তে লুদমিনা জেরিনকে বিয়ে করে সাফাত। যদিও এর আগে দুটি বিয়ে হয়েছিল লুদমিনা জেরিনের। বিয়ের পর আর বিবিএ সম্পন্ন করা হয়নি। দুজনেই চলে যায় আমেরিকা। তিন মাস আমেরিকা থাকার পর দেশে ফিরে তারা। ততদিনে বিয়েটা মেনে নিয়েছে সাফাতের পরিবার। আনুষ্ঠানিকভাবে লুদমিনা জেরিনকে ঘরে তোলার আয়োজন চলছে। একটি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠান। সবকিছু ঠিকঠাক। এর মধ্যেই ঘটে ঘটনা। সাফাতের ফোনে বান্ধবীদের ক্ষুদেবার্তা। এ নিয়ে দুজনের বাকবিতণ্ডা। সাফাত মদ্যপ। মারধর করে লুদমিনা জেরিনকে। অবশ্য একই কারণে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে স্ত্রী লুদমিনা জেরিনকে মারধর করেছে সাফাত আহমেদ। ব্যস পরদিন সকালে সাফাতের বাসা ছেড়ে মায়ের উত্তরার বাসায় চলে যান লুদমিনা জেরিন। তারপর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হবে দূরে থাক। বদলে যায় দৃশ্যপট। সাফাতকে ডিভোর্স দেন লুদমিনা জেরিন। সূত্রমতে, ২০১০ সালের পর থেকে সবসময়ই কোনো মেয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল সাফাতের। লুদমিনা জেরিনের সঙ্গে ডিভোর্সের পরও থেমে থাকেনি সাফাত। মেয়ে বন্ধু, মদ ও হোটেলের কক্ষে কাটতো তার সময়। কখনও কখনও চলে যেত দেশের বাইরে। থাইল্যান্ডে বাসা রয়েছে তাদের। সেখানেই বেশি যেত সাফাত। মাসে অন্তত দুই বার দেশের বাইরে যেত। স্বর্ণের ব্যবসার নাম করে বারবার ভারতে গেলেও সেখানে বিভিন্ন হোটেলে, বারে নিয়মিত আড্ডা দিত।
২০১৩ সালে থার্টি ফার্স্ট নাইটে রেডিসনে অংশ নিয়েছিল সাফাত। সেখানে এক সুন্দরী তরুণীকে নিয়ে ঘটে বিপত্তি। তিনি র‌্যাম্প মডেল। ওই তরুণীকে নিয়ে পার্টিতে অংশ নেন এক ব্যবসায়ী। তার কাছ থেকে তরুণীকে কেড়ে নিতে চেষ্টা করে সাফাত। দু’পক্ষে অবস্থান নেয় দুজনের বন্ধুরা। এ নিয়ে মারধরের ঘটনাও ঘটে। সকলেই তখন মাতাল। পরে নিরাপত্তার দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ওই সময়ে ফেসবুকে বিভিন্ন তরুণীর সঙ্গে বন্ধুতা গড়ে উঠেছিল তার। পরিচয় হয় মডেল পিয়াসার সঙ্গেও। এ বিষয়ে পিয়াসার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে নক করেছিল। আমি সাড়া দিইনি। এরকম অনেককেই নক করতো সাফাত। সে তখন উগ্র ছিল। বাজে একটা সার্কেল ছিল তার। পিয়াসার সঙ্গে তখন প্রায়ই দেখা হতো একটি টিলিভিশনের অফিসে। সেখানে একটি এনজিও’র মিটিং হতো। ওই এনজিও’র দাতা ছিলেন পিয়াসা ও সাফাত। আস্তে-আস্তে বন্ধুত্ব গভীর হয়। ২০১৪ সালের শুরুতেই প্রেমে জড়িয়ে যান তারা। পুরো এক বছর ছুটিয়ে প্রেম করার পর ২০১৫ সালের ১লা জানুয়ারিতে মহাখালীর একটি কাজী অফিসে গোপনে বিয়ে করে সাফাত-পিয়াসা। খবর ছড়িয়ে গেলে চটে যান দিলদার আহমেদ। কোনোভাবেই বিয়ে মেনে নিবেন না। পিয়াসাকে পছন্দ না তার। অন্যদিকে যেকোনোভাবেই সংসার করতে চান পিয়াসা। সংসারের জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত। পিয়াসাকে বিয়ে করার কারণে সাফাতকে গুলি পর্যন্ত করেছিলেন দিলদার আহমেদ। পিতা-পুত্রের পাল্টাপাল্টি জিডি হয়েছিল থানায়। সাফাত বাসা থেকে বের হয়ে যায়। মা-বাবাকে ছেড়ে পিয়াসাকে নিয়ে থাকতো বনানী পরে বসুন্ধরা এলাকায়। হঠাৎ করেই গত ৮ই মার্চ পিয়াসাকে ডিভোর্স দেয় সাফাত। অথচ ৭ই মার্চ একসঙ্গে একটি রেস্টুরেন্টে ডিনার করে তারা। তারপর আবারও নারী ও মদে মত্ত হয় সাফাত। প্রতি সন্ধ্যায় হোটেলে মদ, গাঁজা ও ইয়াবা’র পার্টি। অংশ নেয় নাঈম আশরাফসহ কয়েক প্রভাবশালী নেতার ছেলেরা। যারা সবাই তার বন্ধু। মনোরঞ্জনের জন্য থাকে সুন্দরী তরুণীরা। বিনিময়ে দামি গিফট ও নগদ টাকা দিতো সাফাত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *