শ্রীপুরে লিচুর বাগানে লাল গোলাপী রঙের সমারোহ

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

SRiPUR(GAZiPUR)--14.05.2017--শ্রীপুরে লিচুর বাগান লাল গোলাপী রঙে সেজেছে ॥ (12) (1)

 

 

 

 

 

 
রাতুল মন্ডল,শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি; লাল ও গোলাপী রঙে সেজেছে গাজীপুরের শ্রীপুরের বিভিন্ন গ্রামের লিচুর বাগান গুলো। জৈষ্ঠ্যের রসালো মৌসুমী ফল লিচুর পাইকারী ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভিড় করছে শ্রীপুরের বিভিন্ন গ্রামের লিচুর বাগান গুলোতে। চলতি বছর শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া, তেলিহাটি ইউনিয়নের টেপিরবাড়ী, মাওনা ইউনিয়নের বারতোপা, রাজাবাড়ি ও প্রহলাদপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে বাণিজ্যিক ভাবে ৭২৪ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে। শ্রীপুরে রসালো ফল লিচুর ফলন ভাল হয় ও বাগান গুলো আয়তনে অনেক বড়। এসব গ্রাম থেকে সংগৃহীত লিচু বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন প্রান্তিক কৃষকরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শ্রীপুর পৌর এলাকা ও তেলিহাটি ইউনিয়নের টেপিরবাড়ী গ্রামে লিচুর বাগান ঘিরে এক সাজসাজ বর বিরাজ করছে। লিচু নিয়ে প্রতিটি বাড়িতেই চলছে উৎসব। লিচু ঘিরে এলাকা সর্বত্রই এখন আলোচনা। কে কত টাকার লিচু বিক্রি করেছে।আতœীয় স্বজনদের পদচারনাও বেড়ে গেছে। লিচু গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা লাল ও গোলাপী রঙের লিচু। গ্রামগুলো যেন সেজেছে গোলাপী রঙে। শ্রীপুরে তিন ধরনের গোলাপী, কদমী ও পাতি লিচুর চাষ হয়। স্থানীয় বাজার গুলোতে প্রতিটি ভাল মানের লিচু বিক্রি হচ্ছে তিন টাকায়।

কেওয়া গ্রামের লিচু চাষী আইনুল হক আকন্দ বলেন, লিচু গাছে মুকুল আসার আগেই ভাল করে যতœ নিতে হয়। লিচুর ভাল ফলন আশা করতে হলে, মৌসুম শেষের পরেই গাছে জৈবসারসহ বিভিন্ন প্রকারের সার প্রয়োগ করতে হয়। ফুল ফোঁটার আগেই গাছে মগডাল ভেঙ্গে দিয়ে গাছের গোড়ায় সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমেই সবসময়ই ভিজিয়ে রাখতে হয়। লিচুর ক্ষতিকার পোঁকারোধে মুকুল আসা ও কুঁড়ি তৈরীর পর বিভিন্ন কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। গতবারের চেয়ে এই বার লিচুর দাম তুলনামুলক এবার বেশি।

কেওয়া গ্রামের কৃষক মফিজ উদ্দিন বলেন, চলতি বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় তার বাগানের ২৫টি গাছে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এবার তিনি প্রায় আশি হাজার টাকার লিচু বিক্রি করেছেন। একই গ্রামের আইনুল হক আকন্দ তার বাগান বিক্রি করেছেন সাড়ে তিন লাখ টাকায়,এই এলাকার সবচেয়ে বড় লিচু বাগানের মালিক আলমাস আকন্দ বলেন,প্রতি বছর পাঁচ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করলেও এবার লিচুর ফলন তুলনামূলক ভাবে কম হয়েছে,তবে দাম বেশী পাওয়ায় তিনি বিক্রি করেছেন সাড়ে পাঁচ লাখ টাকায়।

রাজাবাড়ীর আমির হোসেন বলেন,শ্রীপুরে উৎপাদিত লিচুতে বিষাক্ত পদার্থ তেমন প্রয়োগ করা হয় না,্এ কারনে এ লিচুর প্রতি সবার আগ্রহ রয়েছে।

টেপিরবাড়ী গ্রামের তারেক মৃধা বলেন, তাদের গ্রাম গুলোতে কৃষকরা মুলত লিচু চাষের উপর নির্ভরশীল। সারা বছরই লিচু গাছের যতœ নেন তারা।এসব গ্রামের উঁচু চালাযুক্ত জমি হওয়ায় অন্যান্য ফসল তেমন হয়না। ফলে আবাদী-অনাবাদী সব জমিতেই লিচু চাষে আগ্রহী হচ্ছে কৃষকরা।

টেপিরবাড়ী গ্রামের লিচুচাষী রুহুল আমিন জানান, গ্রাম গুলোতে কৃষকরা নিজস্ব পদ্ধতিতে লিচু চাষ করে থাকেন। সরকারী ভাবে কোন প্রশিক্ষণ নেই এলাকার লিচু চাষীদের। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লিচু চাষের কৃষক উদ্ভুদ্ধ করণে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে লিচুর উৎপাদন দ্বিগুণ হবে।

মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী হাসমত মিয়া বলেন, মুকুল থাকাবস্থায় লিচু বাগান কিনে শ্রমিক দিয়ে গাছের চারার যতœ করেছেন। যদি আবহাওয়া অনুকুলে থাকে তাহলে ভাল ফলনের আশা করেন তিনি।

লিচুর পাইকারী ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল ও সেনু মিয়া বলেন, শ্রীপুরের লিচুর গুণগত মান ভাল ও রসালো হওয়ায় রাজধানী ঢাকায় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই বাগান থেকে সংগৃহীত লিচু ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় সরবরাহ্ করে থাকি।

এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুবা সুলতানা বলেন, শ্রীপুর বন্যামুক্ত ও জমি উচু চালা সমৃদ্ধ হওয়ায় এখানকার উৎপাদিত লিচু রসালো ও সুস্বাদু। স্থানীয় ভাবে এবছর থেকে কৃষকদের লিচু চাষে দিক নির্দেশনা দিয়ে ৭২৪ হেক্টর জমিতে লিচু চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *