রেইনট্রিতে রুম বুকিং দেয়া হয়েছিল নাঈমের নামে

Slider টপ নিউজ

64900_noim

 

ঢাকা; বনানীর রেইনট্রি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের পরিচিত মুখ সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ। প্রায়ই রুম বুকিং করে আড্ডায় মেতে উঠতেন তারা। সাফাত ও নাঈমের সঙ্গে প্রতিবারই একাধিক তরুণী দেখেছেন হোটেলের কর্মচারীরা। তাদের আড্ডায় সচরাচর নারী ও মদ থাকতো। সন্ধ্যা থেকে সারারাত চলতো আড্ডা। আড্ডায় অংশ নিতেন এক প্রভাবশালী এমপির পুত্রও। ঘটনার দিন গত ২৮শে মার্চ তাদের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে চার তরুণীকে দেখেছেন হোটেলে কর্মরতরা। ৫৬ বর্গফুটের রুমটি বুকিং করা হয়েছিল নাঈম আশরাফের নামে। রাত পৌনে ৯টার দিকে একজন কর্মচারী নাঈম আশরাফকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘স্যার কোনো প্রবলেম।’ কিন্তু তারা কেউ কোনো কথা বলেননি। হোটেলে কর্মরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি মঙ্গলবার রাতে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার  আসমা মিলি।
সূত্রমতে, মামলা দায়েরের পর বাসাতেই ছিলেন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। সোমবার যখন তার বাসায় অভিযান চালানো হয় এর ঠিক আধা ঘণ্টা আগে বাসা থেকে বের হয়ে যান সাফাত। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সাফাত আহমেদের বাসার সামনে পুলিশকে অবস্থান করতে দেখা গেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আব্দুল মতিন বলেন, আসামিদের ধরতে কয়েকটি টিম অভিযান চালাচ্ছে। মঙ্গলবারও সাফাত ও নাঈমের বাসায় অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
সূত্রমতে, সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ সম্পর্কে তথ্য পেলেও এই গ্যাং র‌্যাপ মামলার তিন নম্বর আসামি সাদমান সাকিফের বাসার ঠিকানা পায়নি এখনো পুলিশ। এমনকি এই সাদমান সাকিফ যে তেজগাঁও-গুলশান লিঙ্ক রোডে অবস্থিত রেগনাম গ্রুপের পরিচালক তা জানা নেই তাদের। বিষয়টি স্বীকার করে তদন্তকারী কর্মকর্তা আবদুল মতিন বলেন, সাদমান সাকিফের বাসার ঠিকানা পাওয়া যায়নি। তবে তারা যেখানে আড্ডা দিতো সেসব স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। সূত্রমতে, সিলেটের তামাবিল সীমান্ত দিয়ে পালানোর চেষ্টা করতে পারে সাফাত ও তার সঙ্গীরা। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিমের কাছে তথ্য রয়েছে সাফাত সিলেটে অবস্থান করছে। এ বিষয়ে পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, তারা দেশ ছেড়ে পালায়নি এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে। যেকোনো সময় আসামিরা গ্রেপ্তার হবে বলে আশা করছি। মঙ্গলবার মামলার বাদীর বাসায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। কথা হয় তার মায়ের সঙ্গে। তিনি জানান, মামলা করার পর থেকে আতঙ্কে মেয়েটা বাসায় নেই। নানা হুমকি-ধমকি, সমঝোতার প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। কারা কি প্রস্তাব দিচ্ছে এসব জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে চাই না।
বনানীর রেইনট্রি হোটেলে গেলে কথা হয় কর্মরতদের সঙ্গে। এসময় হোটেলের কর্মকর্তা ফারজান আরা রিমি মানবজমিনকে জানান, যে রুমটি নাঈম আশরাফ বুকিং করেছিলেন তা একটি সুইট রুম। সেখানে এটাস্ট বাথরুম ও বেড রয়েছে। ছোটখাটো পার্টি করা যায়। পার্টির কথা বলেই রুমটি বুক করা হয়েছিলো। সেখানে কয়েক তরুণ-তরুণী ছিলেন বলে জানান তিনি। হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সম্পর্কে  রিমি বলেন, থার্টি ডে পর্যন্ত আমাদের ফুটেজ সংরক্ষণে থাকে। পরবর্তীতে আর থাকে না। ঘটনার বেশি দিন হয়ে যাওয়ায় তা আর সংরক্ষণে নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোটেলের এক কর্মচারী জানান, সোমবার দুই তরুণীকে নিয়ে স্পটে যান পুলিশের কয়েক কর্মকর্তা। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।  কোথায় কিভাবে দুই তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হয়, হুমকি দেয়া হয় এবং ধর্ষণের সময় কিভাবে, কোথায় অবস্থান করে ভিডিও ফুটেজ ধারণ করা হয় তা দেখানো হয়।
মামলার বাদী নির্যাতিতা তরুণী পুলিশকে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ২৮শে মার্চ সাফাত আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে দুই তরুণীকে দাওয়াত দেয়া হয়। পূর্ব পরিচিত সাদমান সাকিফের মাধ্যমেই সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফের সঙ্গে তাদের পরিচয়। তাদের বলা হয়েছিলো বনানীর রেইনট্রি হোটেলের ছাদে পার্টি হবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পান একটি ছোট রুমে পার্টি হবে। প্রথমে তারা রুমে ঢুকতে চাননি। তারা রুফটপ ও সুইমিং পুলের পাশে বসে কথা বলছিলেন। এসময় তারা চলে আসতে চাইলে তাদের বাধা দেয়া হয়। এক পর্যায়ে জোরপূর্বক ও অস্ত্র দেখিয়ে তাদের ওই কক্ষে নিয়ে মামলার বাদীকে সাফাত আহমেদ ও তার বান্ধবীকে নাঈম আশরাফ একাধিকবার ধর্ষণ করে। ওই দিন রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত ওই রুমে আটকে রাখা হয় তাদের। সেদিন সাকিফের সঙ্গে পরিকল্পনা করেই অভিযুক্তরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে জানিয়ে ওই তরুণী বলেন, পরিকল্পিতভাবে সাকিফ তাদেরকে  সেখানে ফেলে আসে।
ওই তরুণী জানিয়েছেন, বাধা দিয়েও নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি। এমনকি নিজের বান্ধবীকেও সম্ভ্রম হারাতে হয়েছে। দুজনেই তখন কান্না করেছেন। বাধা দেয়া ও কান্নাকাটি করার কারণে মারধর করা হয়েছে তাদের। দেরিতে মামলা করার কারণ সম্পর্কে তিনি জানিয়েছেন, ধর্ষণের বিষয়টি প্রকাশ করলে পরিবার বিব্রত হবে। সামাজিকতার কারণেই তাৎক্ষণিকভাবে মামলা করেননি। ধর্ষণ করার সময় সাফাতের গাড়ির ড্রাইভার বিল্লালকে দিয়ে ভিডিও করিয়েছে। ওই ভিডিও দিয়ে তারা জিম্মি করতে চেয়েছিলো। তারা বারবার ভোগ করতে চেয়েছিলো। তাদের এসব উদ্দেশ্য হাসিল না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত নিজেদের চেহারা আড়াল করে ভিডিওটি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবে বলে হুমকি দেয় ধর্ষকরা। তখন বাধ্য হয়েই তিনি মামলা করেছেন বলে জানান। ঘটনাটি উল্লেখ করে গত ৬ই মে বনানী থানায় মামলা করেছেন ওই তরুণী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *