গ্রামের ১০ টাকার বেগুন শহরে ৪০!

কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি

j2un7gmo_152202চট্টগ্রাম নগরী থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে চকরিয়ার কাকারা ইউনিয়নের ক্ষেতের এককেজি বেগুন আড়তদাররা পাইকারি কিনেন আট থেকে ১০ টাকা। সেই বেগুন নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে। আবার একই বেগুন অভিজাত কাজির দেউড়ি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা।
গ্রামের ১০ টাকার বেগুন শহরে ৪০ টাকায় বিক্রি হলেও মধ্যস্বত্বভোগীর পকেটে যাচ্ছে ৩০ টাকা। কৃষকরা পাচ্ছেন না ন্যায্য দাম। শীতের সবজির মৌসুমের শুরুতেই দামের এই অবস্থা দেখে কৃষকরা শঙ্কিত।
কাকারা ইউনিয়নের আদর্শ কৃষক ছিদ্দিক আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মৌসুমের শুরুর বেগুন বিক্রি হয়েছে ১০ টাকা কেজি দরে। শহর থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে সবজিগুলো কিনে নিচ্ছেন। এখন দাম আরো কমে গেছে। এই অবস্থায় দেড়কানি বেগুন ক্ষেত করে জমির লাগিয়ত তোলা নিয়ে সংশয়ে আছি।’ ছিদ্দিকের মতো এলাকার অনেক কৃষকই এখন সবজিক্ষেত করে বিপাকে পড়েছেন বলে জানা গেছে।
গ্রামের এই চিত্র দেখে গতকাল সোমবার নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আড়তগুলোর সামনে প্রতিকেজি বেগুন খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
এর কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতা আবুল হাশেম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উত্তরাঞ্চল থেকে প্রচুর সবজি আসছে। সেগুলো চট্টগ্রাম অঞ্চলের তুলনায় দাম অনেক কম। এই কারণে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না এখানকার সবজি।’
রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক আসলাম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজারে প্রতিদিন ৫০টি বড় ট্রাক এবং ৬০টি ছোট ট্রাকে সাত হাজার টন সবজি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে।’
রিয়াজউদ্দিন বাজারের একতা বাণিজ্যালয়ের কর্ণধার মোহাম্মদ নাসির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজারে এখন সবজির প্রচুর সরবরাহ থাকায় দাম অনেক কম। আড়তে পাইকারিতে দক্ষিণ চট্টগ্রাম চকরিয়া থেকে আসা বেগুন বিক্রি হচ্ছে কেজি ১০-১২ টাকা এবং উত্তরাঞ্চল থেকে আসা বেগুন ৮-১০ টাকা দরে। আড়তে কাঁচামরিচের কেজি ১৫ টাকা, টমেটো ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
গতকাল সোমবার রিয়াজউদ্দিন বাজারে আড়তের সামনে খুচরা দোকানে সবজি বিক্রি হয় কাঁচা মরিচ ২৫ টাকা, টমেটো জাতভেদে ৫০ থেকে ৭০, লাউ ৩০, বরবটি ৩০, ঢেঁড়স ৩০, তিতকরলা ৬০, খিরা ৪০ ও শসা ২৫ টাকা।
কাজীর দেউড়ি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সব সবজিই কেজিতে সর্বনিম্ন ২০ টাকা বেশি। এখানে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি। ফুলকপি ৫০, বাঁধাকপি ৪০ টাকা। কোনো সবজিই ৫০ টাকার নিচে নেই। অথচ এসব সবজি প্রতিদিন সকালে রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়ত থেকে পাইকারি দরে কিনে আনা হয়।
এ প্রসঙ্গে কাজির দেউড়ির সব ব্যবসায়ীর একটাই জবাব, ‘আমরা সবচেয়ে ভালো জিনিসটি ভালো দামেই বিক্রি করে থাকি।’
গ্রামের তুলনায় চারগুণ বেশি দামে নগরে সবজি বিক্রির কথা শুনে কৃষক শফিউল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এসব শুনলে ইচ্ছে হয় ট্রাকে করে সবজিগুলো নিজেই শহরে নিয়ে বিক্রি করি। কিন্তু সেই পুঁজি তো আমাদের নেই। তবে এটা নিশ্চিত এভাবে ঠকতে থাকলে একদিন আমার মতো অনেকে সবজি আবাদ ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *