পাহাড় জুড়ে আতঙ্ক

Slider সারাদেশ

63042_b1

 

ঢাকা; একটি মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তিন পার্বত্য জেলায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো তৎপর হয়ে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে পাল্টাপাল্টি প্রচারণা। একে অপরকে দোষ দিয়ে সংগঠিত হচ্ছে বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে প্রশাসনকে। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিষোদগার ছড়ানো হচ্ছে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে। সব মিলিয়ে অবরোধ, মানববন্ধন, গাড়ি ভাঙচুর, হুমকি, পাল্টা হুমকিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে। যে কোনো সময় বড়
ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয় প্রশাসনগুলো। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে তারা। পার্বত্য এলাকা থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠানো গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে গত তিনদিন ধরে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের বেশ কিছু এলাকায় ঘুরে, স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে আতঙ্কের বিষয়টি জানা যায়। তারা জানান, ১৯শে এপ্রিল ইউপিডিএফের (ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) সশস্ত্র গ্রুপের সদস্য রোমেল চাকমা ওরফে সুপেনের মৃত্যুর পর এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রশাসন বলছে, রোমেল ছিলেন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। মিয়ানমারের গভীর জঙ্গলে সে সশস্ত্র গ্রুপের কাছ থেকে নানা ধরনের অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিয়েছে। ২৩শে জানুয়ারি বেতছড়ি এলাকায় নাশকতার ঘটনা ঘটায়। ইউপিডিএফ-এর সক্রিয় সদস্য হয়ে সে অনেকগুলো অপারেশনে অংশ নেয়। এই ঘটনার পর যৌথবাহিনী তাকে ধরতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়। গত ৫ই এপ্রিল টিঅ্যান্ডটি বাজারে অভিযানের সময় যৌথবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে রোমেল পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় একটি সিএনজির সঙ্গে ধাক্কা লেগে সে আহত হয়। এ অবস্থায় যৌথবাহিনী তাকে নানিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে গত ৬ই এপ্রিল চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯শে এপ্রিল সে মারা যায়। এরপরই তৎপর হয়ে ওঠে ইউপিডিএফ। নিজ দলের সদস্যের মৃত্যুকে পুঁজি করে সক্রিয় হয়ে ওঠে তারা। বিভিন্ন মাধ্যমে শুরু করে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার। বিশেষ করে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে দায়ী করে উস্কানিমূলক বক্তব্য ছড়ায়। তাদের এ ধরনের কার্যক্রম এখনো চলমান। এলাকাবাসী জানান, ইউপিডিএফ অপপ্রচার চালিয়ে বলছে, রোমেলকে সেনাক্যাম্পে নিয়ে তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। মৃত্যুর পর তার লাশ পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। বেশকিছু সংবাদ মাধ্যমে এ খবর প্রচার করলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে তিন পার্বত্য জেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে। রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের স্থানীয় কয়েক বাসিন্দা জানান, ইউপিডিএফ সম্পর্কে তাদের রয়েছে ভীতিকর অভিজ্ঞতা। এর আগেও ইস্যু তৈরি করে নানা ধরনের নাশকতা চালিয়েছে। হত্যা ও অপহরণের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। ইউপিডিএফ-এর অপপ্রচার প্রসঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, লাশ পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়ার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। মানুষকে উস্কে দিয়ে একটি অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)-এর পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান মানবজমিনকে বলেন, ১৯শে এপ্রিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোমেল মৃত্যুবরণ করে। এসময় সে পুলিশের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিল। পরে ২১শে এপ্রিল দুপুর দেড়টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত তার দেহ রীতি অনুযায়ী দাহ করা হয়। তিনি বলেন, এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজগর আলী, হেডম্যান স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আত্মীয়স্বজন। এছাড়া ভান্তে নাইলদা গা তার দেহ দাহের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন। সেনাবাহিনীকে নিয়ে রোমেলকে নির্যাতনের যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এ প্রসঙ্গে রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার সৈয়দ তারিকুল হাসান বলেন, আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে রোমেলের লাশ দাহ করা হয়েছে। এখানে লাশ পুড়িয়ে দেয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে যা বলা হচ্ছে তা কেবল অপ্রপ্রচার মাত্র। তিনি বলেন, ইউপিডিএফ কোনো নিবন্ধিত সংগঠন নয়। সেহেতু তাদের সদস্যদের তালিকাও আমাদের কাছে নেই। তবে আমরা জেনেছি, রোমেল চাকমা সংগঠনটির সশস্ত্র সদস্য ছিল। যৌথবাহিনীর অভিযানের সময় পালাতে গিয়ে সে আহত হয়। পরে সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। একই প্রসঙ্গে রোমেলের লাশ দাহ কাজে যুক্ত ভান্তে নাইলদা গা জানান, লাশ দাহ আমি করেছি। ধর্মীয় যেসব রীতিনীতি পালন করা প্রয়োজন তাও যথাযথভাবে করা হয়েছে। এদিকে রোমেল চাকমা কবে ইউপিডিএফ-এর সশস্ত্র গ্রুপের সদস্য হিসেবে যোগ দেয়, কোথায় কতদিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানায় সমপ্রতি ওই গ্রুপ ছেড়ে আসা আরেক সশস্ত্র সদস্য। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আগ্রহী ওই সদস্য গত ২৩শে জানুয়ারির নাশকতার ঘটনায় জড়িত থাকার কথাও স্বীকার করেছে। সে জানায় ওই নাশকতার ঘটনায় মোট ১৩ জন অংশ নেয়। এর মধ্যে ১১ জনের হাতেই হালকা ও ভারী অস্ত্র ছিল। রোমেল সম্পর্কে সে জানায়, তারা দুজন কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থিত দুর্গম পাহাড়ে কয়েক ধরনের অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এদিকে রোমেল ইস্যুতে স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বাড়তি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *