দুই মায়ের প্রশ্ন, কীভাবে বাঁচাবেন সন্তানদের!

Slider তথ্যপ্রযুক্তি সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী সারাদেশ

 

th

 

 

 

 

 

 

‘ফেসবুক ব্যবহারে ঢাকা দ্বিতীয়’—গতকাল শনিবার এমন একটি প্রতিবেদন যখন বিভিন্ন অনলাইন সংবাদমাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছে, কাকতালীয়ভাবে দুজন নারী তখন প্রথম আলো কার্যালয়ে। তাঁদের কলেজপড়ুয়া ছেলেরা ফেসবুকে আসক্ত। সেই আসক্তি এত প্রবল যে ইন্টারনেট ব্যবহারের টাকা না পেলে মা-বাবাকে পর্যন্ত মারতে আসে। মায়েদের প্রশ্ন, তাঁরা কোথায় যাবেন? কীভাবে বাঁচাবেন সন্তানদের।

ফেসবুক আসক্ত দুই তরুণই দেশসেরা দুটি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। ঢাকার গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে ভালো ফল নিয়ে পাস করেছিল। কলেজে ঢোকার পর থেকে তাদের আচরণে পরিবর্তন ঘটতে থাকে। ওই দুই মা বলছিলেন, তাঁরা সমাধান চান। ছেলেরা অসৎ সঙ্গে যেন না পড়ে, সেদিকে মনোযোগী ছিলেন তাঁরা। ঘরের ভেতর প্রযুক্তি তাদের শেষ করে দিচ্ছে।

একজন মা বলছিলেন, তিনি ও তাঁর স্বামী দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন। তিনি বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি। চাকরিবাকরির চেষ্টাও করেননি আর। ইচ্ছে ছিল দুই ছেলেকে বড় করবেন, তাঁর স্বপ্ন ছেলেরা পূরণ করবে। তিনি বলছিলেন, ‘আমি আমার দুই ছেলের জন্য যা কিছু ভালো, তার সবটুকুর জোগান দিতে চেষ্টা করেছি। গণিত অলিম্পিয়াড, ভাষা প্রতিযোগসহ সব অনুষ্ঠানে ছেলেদের নিয়ে গেছি। তারা শুধু যায়নি, পুরস্কার হাতে করে ঘরে ফিরেছে। সেই ছেলেকে এখন আমি আর চিনতে পারি না।’

ছেলে ঠিক কী করছে জানতে চাইলে এই মা বলেন, শুধু যোগাযোগের জন্য ছেলেকে তিনি একটা বেসিক ফোন কিনে দিয়েছিলেন। ছেলে টাকা জমিয়ে পরে একটি ‘টাচ মোবাইল’ কেনে। তারপর থেকেই ছেলের আচরণে পরিবর্তন হয়। ছেলেকে টিফিন কিনে খাবার জন্য টাকা দেন, ছেলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সে টাকা খরচ করে। সারা রাত জেগে থাকে। কিছু বললেই উত্তেজিত হয়ে ওঠে। আত্মহত্যার হুমকি দেয়। কলেজের প্রথম পরীক্ষায় শুধু দুটি বিষয়ে ষাটের কোঠায় নম্বর পেয়েছে, বাকিগুলোয় কোনো রকমে পাস করেছে। টাকা না দিলে ভাঙচুর করে। সংসারে মূল্যবান যা কিছু ছিল, সবই ছেলে ভেঙে শেষ করেছে।

ওই নারী বলছিলেন, ছেলের মতো স্বামীকেও এখন তাঁর অচেনা লাগে। তিনি বলছিলেন, ‘যত দিন ছেলে ভালো ফল করেছে, তত দিন তিনি স্বামীর কাছে কদর পেয়েছেন। এখন আর পান না। ছেলের কারণে উঠতে-বসতে স্বামী তালাকের হুমকি দেন। বাড়ি থেকে বেরও করে দিয়েছেন। এ মাসের শেষ নাগাদ ছেলে নিয়ে ঘর ছেড়ে যেতে বলেছেন।’

অন্য মায়েরও করুণ দশা। তাঁকে তাঁর স্বামী ছেড়ে চলে গেছেন মাস খানেক হলো। ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ না করলে আর ফিরবেন না বলেছেন। আর ছেলে হুমকি দিয়েছে, পুলিশে সোপর্দ করলে ফিরে এসে সে ‘ঐশীর মতো’ কাণ্ড ঘটাবে। ছেলে ইদানীং টাকার জন্য মাকে মারধরও করে।

ওই মায়েরা বলছিলেন, তাঁদের মতো আরও অনেক মা আছেন, যাঁরা একই সমস্যায় পড়েছেন। তাঁরা জানেন না কী করবেন, কোথায় যাবেন। সরকার ছয় ঘণ্টার জন্য ফেসবুক বন্ধ করার চিন্তাভাবনা করছে, কয়েক দিন আগে এমন একটা খবর শুনে তাঁরা খুশি হয়েছিলেন। এখন কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ চাইলেন এই দুই মা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *