পরমাণু যুদ্ধের দামামা

Slider টপ নিউজ সারাবিশ্ব

61669_lead

 

ঢাকা;  উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। মুখোমুখি উত্তর কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। যেকোনো সময় শুরু হয়ে যেতে পারে আরেকটি যুদ্ধ। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করেছে উত্তর কোরিয়া। বলেছে, ওই অঞ্চলে তারা যেন কোনো উস্কানিমূলক পদক্ষেপ না নেয়। এমনটা হলে উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক হামলা চালিয়ে জবাব দিতে প্রস্তুত। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সতর্ক করে বলেছেন, যেকোনো সময় যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। এ যুদ্ধে কেউই জয়ী হবে না। কারণ, প্রতিপক্ষ সবার হাতেই রয়েছে শক্তিশালী পারমাণবিক অস্ত্র। যুদ্ধ আসন্ন এমন আশঙ্কায় রাজধানী পিয়ংইয়ং থেকে প্রায় ৬ লাখ নাগরিককে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। বলা হচ্ছে, যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কায় চীন তার সীমান্তে প্রায় দেড় লাখ সেনা মোতায়েন করেছে। শরণার্থীর ঢেউ সামাল দিতে এমন ব্যবস্থা। মিডিয়ায় এ খবর ছড়িয়ে পড়লেও সীমান্তে সেনা মোতায়েনের কথা অস্বীকার করেছে চীন। উত্তর কোরিয়া একের পর এক পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কোরীয় উপদ্বীপ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প পাঠিয়েছেন যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস কার্ল ভিনসন-কে। উত্তর কোরিয়াকে শায়েস্তা করতে তিনি চেয়েছেন চীনের সহযোগিতা। চীন সহযোগিতা না করলে তিনি একতরফাই উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছেন। এর ফলে ওই অঞ্চলে যুদ্ধের সমূহ সম্ভাবনা দেখছে চীন। দীর্ঘদিন এ দেশটি সমর্থন দিয়েছে উত্তর কোরিয়াকে। এখন সেই চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে উত্তেজনা। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে যেকোনো সময় যুদ্ধ বাঁধবে। এজন্য তিনি সব পক্ষকে উত্তেজনাকর ও উস্কানিমূলক হুমকি দেয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। যদি যুদ্ধ লেগেই যায় তাহলে এ যুদ্ধে কে জিতবে, কে হারবে তা বলা মুশকিল। কারণ, প্রতিটি পক্ষের হাতে রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র। এমনও খবর কিছুদিন আগে বেরিয়েছিল, উত্তর কোরিয়ার হাতে এমন পারমাণবিক অস্ত্র আছে যা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত করতে সক্ষম। ওদিকে ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটির প্রেসিডেন্ট ডেভিড অলব্রাইট মনে করেন, ২০২০ সালের মধ্যে উত্তর কোরিয়ার হাতে থাকবে ৬০টি পারমাণবিক অস্ত্র। এই অস্ত্রের জোরেই ধরাকে সরা জ্ঞান করছে দেশটি। বিশ্বাস করা হয়, উত্তর কোরিয়ার হাতে আছে ৩৩ কিলোগ্রাম সমৃদ্ধ প্লুটোনিয়াম। এছাড়া আছে ১৭৫ থেকে ৬৪৫ কিলোগ্রাম ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ অস্ত্র। এসব ব্যবহার করে ১৩ থেকে ৩০টি পারমাণনিক বোমা বানানো সম্ভব। কিন্তু হিসাব বলে, ওই সরঞ্জাম দিয়ে আরো ১২টি অস্ত্র বা বোমা বানানো সম্ভব। এছাড়া তারা থার্মো-নিউক্লিয়ার অস্ত্র, যাকে ‘এইচ-বোমা’ বলা হয়, তা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। অলব্রাইট মনে করেন এরই মধ্যে তারা এমন অস্ত্র তৈরি করে থাকতে পারে। ওদিকে এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ং থেকে এক-চতুর্থাংশ মানুষকে সরে যেতে বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উত্তর কোরিয়া যুুদ্ধের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত বলেই মনে হচ্ছে এ নির্দেশের ফলে। দক্ষিণ কোরিয়ার মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার নাগরিকরা ব্যাপক আকারে পারমাণবিক যুুদ্ধের প্রস্তুতিতে একে অন্যের কাছ থেকে বিদায় নেয়া শুরু করেছেন। আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের বিদায় জানানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে যেসব নেতা রয়েছেন তাদের নাম উচ্চারণ করে বিদায় জানানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ওদিকে উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সাং-য়ের ১০৫তম জন্মবার্ষিকীতে ব্যাপক আয়োজন করা হয় পিয়ংইয়ংয়ে। সেখানে শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় শুরু হয় এ উপলক্ষে উৎসব। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘ডে অব দ্য সান’। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের ফুটেজে দেখানো হয়েছে, পিয়ংইয়ংয়ে কিম জং-উনের দাদার নামাঙ্কিত স্কয়ারে সেনারা সারিবদ্ধভাবে মার্চ করছেন। এ সময় শাসক কিম জং-উনের পাশে উপস্থিত ছিলেন তার বোন কিম ইয়ো-জং। এদিন শক্তি প্রদর্শনের জন্য সেনাবাহিনী, ট্যাংক ও সেনাবাহিনীর অন্যান্য হার্ডওয়্যার প্যারেডে অংশ নেয়। খবর ছড়িয়ে পড়েছে, কিম জং উন নতুন করে আরেকটি পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর নির্দেশ দিতে পারেন। তার আগেই তিনি তার দাদা, দেশের জনকের জন্মবার্ষিকীতে নিজের শক্তি পরীক্ষা দিলেন। উত্তর কোরিয়ার সেনা কর্মকর্তা চোই রিওং-হাই বলেছেন, সার্বিক একটি যুদ্ধের সার্বিক জবাব দিতে আমরা প্রস্তুত। আমাদের বিরুদ্ধে কোনো পারমাণবিক হামলা হলে আমরা আমাদের মতো করে তার জবাব দেবো পারমাণবিক উপায়ে। উল্লেখ্য, কিম ইল সাং-য়ের জন্মবার্ষিকীতে সেনা কুচকাওয়াজ উত্তর কোরিয়ায় নতুন নয়। তবে এবার এর অর্থ ভিন্ন রকম। যেহেতু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে দিয়েছেন, ঘোষণা দিয়েছেন তিনি একতরফাভাবেই উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন, ঠিক সেই সময় এই সামরিক কুচকাওয়াজের মাধ্যমে কিম জং উন দেখিয়ে দিলেন নিজের শক্তি। এবারই তাই প্রথমবার কুচকাওয়াজে হাজির করা হয় সাবমেরিন চালিত ব্যাপক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, চীন সহযোগিতার সিদ্ধান্ত নিলে ভালো। নইলে তাদের ছাড়াই আমরা সমস্যার সমাধান করবো। ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন হচ্ছে কারণ তারা ভাবছে উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রে পরমাণু হামলা চালানোর সক্ষমতা অর্জন করছে। এদিকে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন ডনাল্ড  ট্রাম্প। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে আরো কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিও বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ পটভূমিতে ধারণা করা হচ্ছে শনিবার ষষ্ঠবারের মতো পরমাণু বোমার বা আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাতে পারে উত্তর কোরিয়া। তবে উত্তর কোরিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন উত্তর কোরিয়ার প্রতি আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখাচ্ছেন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জড়িত একটি প্রতিষ্ঠান যেকোনো সময় পরমাণু যুদ্ধ হতে পারে সতর্ক করে দিয়েছে। সরাসরি যুদ্ধ না বললেও সেরকম আশঙ্কাই করছে চীন। এখন পরমাণু পরীক্ষার প্রস্তুতিতে নৌবাহিনীর জাহাজ কোরীয় উপত্যকায় অবস্থান নেয়ার পর  সোচ্চার হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর তারই জের ধরে ওই অঞ্চলে এখন যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখছে চীন, যে দেশটি দীর্ঘকাল ধরে উত্তর কোরিয়াকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। মনে হচ্ছে যেকোনো সময় একটা সংঘাত দেখা দেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *