কাশিমপুর কারাগারে হুজিনেতা মুফতি হান্নান ও বিপুলের ফাঁসি কার্যকর

Slider গ্রাম বাংলা ফুলজান বিবির বাংলা

_DSC0091

 

 

 

 

 

 

মো. পলাশ প্রধান, কাশিমপুর (গাজীপুর) কারাগার থেকে; হুজিনেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। রাত ১০টায় গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির মঞ্চে ঝুলিয়ে তাদের এ রায় কার্যকর করা হয়। ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তিনজনকে হত্যা মামলায় মুফতি হান্নানকে এ মৃত্যুদ- দেওয়া হয়। জল্লাদ রাজুর নেতৃতে¦ শফিক ও ইকবালসহ ছয় জল্লাত এ ফাঁসি দেয়।

গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জনের উপস্থিতিতে একটি টিম তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। হুজিনেতাদ্বয়ের রায় কার্যকর উপলক্ষে বুধবার সকাল থেকে কারাগার কমপ্লেক্রের আশ-পাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। দুপুরের পর থেকে কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে ভীড় করেন শত শত উসুক মানুষ। তওবা পড়ান নোমানুর রশিদ। রাত দশটায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে বলে জানান কাশিমপুর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান।
স্বজনদের শেষ সাক্ষাতঃ ফাঁসি কার্যকরের আগে গতকাল সকাল ৭ টা ১০ মিনিট থেকে ৭ টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত মুফতি হান্নানের বড় ভাই আলি উজ্জামান মুন্সি, মুফতি হান্নানের স্ত্রী জাকিয়া পারভিন রুমা, বড় মেয়ে নিশি খানম ও ছোট মেয়ে নাজরিন খানম তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। পরে, দুপুর দুইটায় মুফতি হান্নানের সঙ্গে তার যাবজ্জীবন কারাবন্দি দুই ভাই সাজাপ্রাপ্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে থাকা বন্দি মো.মহিবুল্লাহ ও কাশিমপুর কারাগারের (পার্ট-২) থেকে বন্দি মো. আনিছ দেখা করছেন। অপরদিকে মৃত্যুদ- প্রাপ্ত জঙ্গি নেতা শরীফ শাহেদুল বিপুলের সঙ্গেও তার পরিবারের কোন সদস্য কিংবা কোন স্বজন এক বারের জন্যও দেখা করতে আসেননি বলে যানা যায়।

নিরাপত্তার চাদরে ঢাকাঃ বুধবার দুপুর থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, আর্মড পুলিশ, র‌্যাব ও ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাশিমপুর কারাগারের সড়কে এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়। সেই সঙ্গে রয়েছে কমিউিনিটি পুলিশের সদস্যরা। এজন্য রাজধানীর উত্তরার আব্দুল্লাহ্পুর, টঙ্গী, স্টেশন রোড, বোর্ড বাজার, ভোগড়া বাইপাস মোড়, চান্দনা চৌরাস্তা,গাজীপুর শহর, রাজেন্দ্রপুর, কোনাবাড়ি, চন্দ্রা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সন্ধ্যার পর থেকে আশেপাশের দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয়। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক থেকে কারাগারের প্রধান ফটক পর্যন্ত সড়কের ৩টি স্থানে নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন কারাগারের চিকিৎক মিজানুর রহমান। ডা. মিজানুর রহমান বলেন, দু’জনেই সুস্থ্য ছিলেন। সন্ধ্যায় শামিয়ায়ানা টানানো ফাঁসির মঞ্চে মহরা হয় বলে জানিয়েছেন কারা কতৃপক্ষ। গতকাল বুধবার ৪টায় কারাগারে প্রবেশ করেন ডিআইজি প্রিজন তৌহিদুল ইসলাম। সাতটা ৪০ মিনিটে প্রবেশ করেন অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্ণেল ইকবাল কবির। সাতটা ৫৭ মিনিটে প্রবেশ করেন আইজিপ্রিজম বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন। নয়টা ৩৪ মিনিটে প্রবেশ করেন সিভিল সার্জন সৈয়দ মঞ্জুরুল হক ও গাজীপুর জেলা প্রশাসক এসএম আলম। সর্ব শেষ প্রবেশ করেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন-উর রশিদ। এর আগে মৃতুদেহ নেয়ার জন্য সন্ধ্যা ৬ টা ৪০ মিনিটে কারাগারের প্রবেশ করে দুইটি লাশবাহী এ্যামবুলেন্স।

গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, শুধু কারাগার এলাকা নয়, পুরো গাজীপুর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
যে অভিযোগে ফাঁসিঃ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি হান্নানের বিরুদ্ধে যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, গোপালগঞ্জে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং রমনা বটমূলে বোমা হামলাসহ মোট ১৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে রমনা বটমূলে বোমা হামলার মামলাতেও বিচারিক আদালত তাকে মৃত্যুদ- দিয়েছে।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামি মুফতি হান্নান ২০১৩ সাল থেকে কাশিমপুরের হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রয়েছেন। তবে হাজিরা দেওয়ার জন্য এ কারাগার থেকে দেশের বিভিন্ন আদালতে তাকে নেওয়া হয়েছিল।

২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ)-এর মাজারে আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত এবং পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হন। ওই মামলায় ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত পাঁচ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃতুদ- এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়। হাই কোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গত বছরের ২৮ এপ্রিল প্রকাশিত হয়। ১৪ জুন রায় হাতে পাওয়ার পর ১৪ জুলাই আপিল করেন দুই আসামি হান্নান ও বিপুল। অপর মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি রিপন আপিল না করলেও আপিল বিভাগ তার জন্য আইনজীবী নিয়োগ করেন। আপিলের শুনানি শেষে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর আসামিদের আপিল খারিজ হয়ে যায়। গত ১৭ জানুয়ারি এ রায় প্রকাশের পর আসামিরা পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন। চলতি বছরের ১৯ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তিন জঙ্গির মৃত্যুদ- বহাল রেখে সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন (রিভিউ) খারিজ করে দেন।

২৭ মার্চ সন্ধ্যায় মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে মুফতি আবদুল হান্নান ও বিপুল প্রাণভিক্ষার আবেদন করে। রাষ্ট্রপতি আবেদন নাকচ করে দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *