ঝাঁঝরা আতিয়া মহল

Slider সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী সিলেট

6a68991d8cd31c68932c8ad54e744fbb-58ed3c3016533

বিশেষ প্রতিবেদন  :   ২৪ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল! সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহল নামের বাড়িটির দিকে চোখ ছিল সবার। গতকাল মঙ্গলবার সকালে মিলল আতিয়া মহলকে ভেতর থেকে দেখার সুযোগ। বাসিন্দাসহ দর্শনার্থীরা দেখলেন ঝাঁঝরা এক আতিয়া মহল। দেখে আঁতকে উঠেছেন অনেকে।

গতকাল সকাল নয়টা থেকেই বাসিন্দারা শিববাড়ির রাস্তার মুখে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। সকাল সোয়া ১০টায় বাসিন্দাদের ঢুকতে দেওয়া হয়।

নিচতলায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে গত ২৩ মার্চ রাতে ভবনটি ঘিরে ফেলে পুলিশ। পরদিন ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট অভিযানে অংশ নেয়। ২৫ মার্চ সকাল থেকে সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করে। সেনাবাহিনীর অভিযান শেষে ৩ এপ্রিল ঢাকা থেকে র‌্যাব এসে আতিয়া মহল বিস্ফোরকমুক্ত করতে অপারেশন ক্লিয়ার শুরু করে। গত সোমবার এই অভিযানের সমাপ্তি টানা হলে গতকাল সকালে ফ্ল্যাটগুলো ভাড়াটেদের বুঝিয়ে দেয় পুলিশ।

সকাল সোয়া ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আতিয়া মহলের ভেতরের কক্ষগুলো ঘুরে দেখা গেছে, পাঁচতলা ভবনের প্রতি তলার দুই পাশে তিনটি করে ছয়টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এসব ফ্ল্যাটে দুটি কক্ষ, একটি শৌচাগার এবং একটি করে রান্নাঘর। নিচতলার সব কটি ফ্ল্যাটেরই বিধ্বস্ত অবস্থা। বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণের ছাপ কক্ষের দেয়ালে দেয়ালে। স্থানে স্থানে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। দরজা-জানালার কাচ ভেঙে গেছে, খসে পড়েছে পলেস্তারা। মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ধ্বংসাবশেষ। বিস্ফোরণে দোতলা ও তৃতীয় তলার বাসিন্দাদের টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, আলমারিসহ অনেক আসবাব ভেঙে মাটিতে পড়ে আছে। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কম।

.

গতকাল বাসিন্দারা তাঁদের মালামাল সরিয়ে নেন। এ সময় দেয়ালে বোমা ও গুলির দাগ দেখা যায় l ছবি: আনিস মাহমুদগতকাল বাসিন্দারা তাঁদের মালামাল সরিয়ে নেন। এ সময় দেয়ালে বোমা ও গুলির দাগ দেখা যায় l ছবি: আনিস মাহমুদনিচতলার ছয়টি ফ্ল্যাটের মধ্যে চতুর্থ ফ্ল্যাটটিতে ছিল জঙ্গিদের অবস্থান। সেটির রান্নাঘর, শৌচাগারের দেয়াল পুরোপুরি ভাঙা। শৌচাগারে বেশ কিছু রড বেরিয়ে এসেছে। রান্নাঘরের মেঝেতে একটি নীল পর্দা পড়ে আছে। জঙ্গিদের ফ্ল্যাটের অপর দুটি কক্ষ তুলনামূলকভাবে অক্ষত থাকলেও দেয়ালে ছোট ছোট বেশ কিছু গর্ত রয়েছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ার পাশাপাশি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে টাইলস মোড়ানো মেঝে। একটি কক্ষে পড়ে রয়েছে দেয়ালের ধ্বংসাবশেষ। সব কক্ষ থেকেই উৎকট দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে।

নিচতলার প্রথম ইউনিটে থাকতেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পিয়ালী চৌধুরী। তিনি জানালেন, ভেতরের অবস্থা দেখে নিজের ফ্ল্যাটই চিনতে পারেননি। তাঁর কক্ষে ঢুকে দেখেন, একটি ভাঙা ওয়ার্ডরোব ছাড়া আর কোনো মালপত্রই নেই। এ অবস্থা দেখে বারবার এই কক্ষ থেকে ওই কক্ষে ছুটতে থাকেন আর বিলাপের মতো বলতে থাকেন, ‘সারা জীবনের রুজির সব শেষ অই গেল!’

কয়েকজন বাসিন্দা টাকা ও স্বর্ণালংকার খোয়া যাওয়ার অভিযোগ করেছেন। দ্বিতীয় তলার বাসিন্দা শিরিন আক্তার জানান, তাঁর নগদ ৩৮ হাজার টাকা ও ৩ ভরি সোনা খোয়া গেছে। তৃতীয় তলার বাসিন্দা শাহেনা বেগম জানান, ২৪ এপ্রিল তাঁর বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছিল। তাই তিনি কিছু স্বর্ণালংকার তৈরি করেছিলেন। সেগুলো খোয়া গেছে।

অভিযোগ সম্পর্কে মহানগর পুলিশের মোগলাবাজার থানার ওসি খায়রুল ফজল বলেন, ‘কেবল প্রথম তলার বাসিন্দাদের অনেক জিনিসপত্র অভিযান চলাকালে বিনষ্ট হয়ে গেছে। সেসব পুরোপুরি বিনষ্ট হওয়ায় এরই মধ্যে অপসারণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত সব ফ্ল্যাটের জিনিসপত্র ঠিকঠাক আছে। আসবাবের বিস্তর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তবে কিছু খোয়া যায়নি।’ ধ্বংসপ্রায় দশায় আতিয়া মহলে বসবাস ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার জেদান আল মুসা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *