কুমিল্লায় বাবার পর এবার মেয়ের সঙ্গে লড়ছেন সাক্কু

Slider রাজনীতি

56670_akku

 

  কুমিল্লা;    ২০১২ সালে অধ্যক্ষ আফজল খানকে পরাজিত করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন মনিরুল হক সাক্কু। ৩০শে মার্চের নির্বাচনে এবার তার লড়াই হবে আফজল কন্যা আঞ্জুম সুলতানা সীমার সঙ্গে। পিতার বড় ছায়া পার হয়ে এরইমধ্যে কুমিল্লার রাজনীতিতে নিজের অবস্থান করে নিয়েছেন সীমা। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর, কুমিল্লা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন অনেকটা সময়। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে ভোটের রাজনীতির মাঠে নেমে পড়েছেন আঞ্জুম সুলতানা সীমা। নৌকার পক্ষে জনগণের বিপুল সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান তিনি। আওয়ামী লীগে কোনো কোন্দল নেই বলেও দাবি তার। অন্যদিকে, মাঠের রাজনীতির দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে মনিরুল হক সাক্কুর। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র। জানালেন, জনগণের মাঝে থাকতে ভালো লাগে তার।
নিজের সব কাজকে সঠিক মনে করেন না কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। বলেন, আমি যেসব কাজ করেছি তার সবতো সঠিক ছিল না। ভুলও ছিল। কিন্তু আমি সবসময়ই জনগণের পাশে ছিলাম। তাদের পাশে থেকে উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছি। জনগণের জন্য আমার দরজা সবসময় খোলা ছিল। আমি দিনের বেশিরভাগ সময়ই জনগণের সঙ্গেই কাটাই।
নানুয়া দীঘিরপাড়ের বাসায় বসে কথা বলার সময় মনিরুল হক সাক্কু পৌরসভার চেয়ারম্যান আর সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন। তার এবং স্থানীয় সরকারদলীয় এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের মধ্যে তার কথিত রাজনৈতিক সমঝোতা নিয়ে কুমিল্লার রাজনীতিতে নানা আলোচনা রয়েছে। মনিরুল হক সাক্কু হয়তো জানতেন প্রশ্নটা তাকে এক পর্যায়ে করা হবে। প্রশ্ন করার আগে নিজেই তুললেন সে প্রসঙ্গ। বললেন, আমি বিরোধী দলের রাজনীতি করি। উন্নয়নমূলক কাজের জন্য এমপি’র সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। এমপি’র সঙ্গে আমার সম্পর্ক উন্নয়নের। উনার সঙ্গে যদি রাজনৈতিক সমঝোতা থাকতো তবে আমার বাড়ি ভাঙতো না। আমার পরিবারের সদস্যদের এতো নির্যাতন সহ্য করতে হতো না। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন যখন গঠিত হয়, এর অবকাঠামো বলতে তেমন কিছু ছিল না। অনেক কষ্টে আমরা তা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। পৌরসভা মেয়র থাকার সময় থেকে কুমিল্লায় সবুজায়নের কিছু চেষ্টা ছিল সাক্কুর। জানালেন, নিজের পকেটের টাকা দিয়েই তা করেছেন তিনি। মনিরুল হক সাক্কুর সবচেয়ে বড় আপসোস শহরের যানজট কমাতে না পারা। তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশ তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। তাই যানজট নিরসন বড় সমস্যা। তবে আবার নির্বাচিত হলে এ ব্যাপারে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার চেষ্টা করবো। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব পরিবহন চালুর ভাবনার কথাও জানান তিনি। ভোটাররা আগামী নির্বাচনেও তার কার্যক্রমের মূল্যায়ন করবেন বলে আশাবাদী সাক্কু।
চাচাতো সরাসরি কিছু করতে পারবেন না: সীমা
গত কয়েকদিনের ভোটের অভিজ্ঞতায় খুশি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা। বলেন, মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই বিপুল সাড়া পাচ্ছি। কুমিল্লার মানুষ নৌকার পক্ষে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করছেন। কুমিল্লায় আওয়ামী লীগে বর্তমানে কোনো দ্বন্দ্ব নেই বলেই দাবি সীমার। বলেন, যখন প্রচারণা শুরু হবে তখন দেখবেন সবাই নৌকা প্রতীকের পক্ষে প্রচারণায় নেমে যাবেন। নৌকার পক্ষে আমরা সবাই এক। মেয়র নির্বাচিত হলে তার আগের অভিজ্ঞতা কাজে দেবে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, আমি সাড়ে তিন বছর পৌরসভায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছি। ওই সময় আমি সবাইকে নিয়ে কাজ করেছি। মেয়র নির্বাচিত হলেও সবাই মিলেই কাজ করবো। মিলেমিশেই সমস্যার সমাধান করবো। কুমিল্লাকে একটি আদর্শ সিটি করপোরেশন হিসেবে গড়ে তুলবো। নির্বাচনে হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চাচাতো সরাসরি কিছু করতে পারবেন না। আইনি বাধার কারণে নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু নৌকার প্রার্থীর পক্ষে, আমার পক্ষে নিশ্চয়ই তার সমর্থন, সহযোগিতা থাকবে। পরে মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারও নৌকার প্রার্থীর পক্ষে তার সমর্থনের কথা জানান।
৩০শে মার্চের নির্বাচনে ২ লাখ ৭ হাজার ৩৮৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সেদিনই ভাগ্য নির্ধারিত হবে মনিরুল হক সাক্কু আর আঞ্জুম সুলতানা সীমার। পিতাকে পরাজিত করার পর কন্যাকেও কি পরাজিত করতে পারবেন সাক্কু। নাকি পিতার পরাজয়ের বদলা নেবেন আঞ্জুম সুলতানা সীমা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *