বদরুল আমাকে খুন করার চেষ্টা চালিয়েছে, তার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই

Slider বাংলার আদালত

55309_f3

 

ঢাকা; আদালতে দাঁড়িয়ে তার ওপর হামলাকারী বদরুলের বিচার চাইলেন খাদিজা। বললেন- ‘আমি ওর সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। ও আমাকে খুন করার চেষ্টা চালিয়েছে।’ এর আগে আদালতে খাদিজাকে দেখেই বদরুল বললো- ‘খাদিজা তোমার মঙ্গল হোক- আমার ফাঁসি হোক।’ এসব কথার ফাঁকে আইনজীবীরা বদরুলকে ধমক দিয়ে শান্ত রাখার চেষ্টা করেন। তবে খাদিজা  ছিলেন অবিচল।
তিনি আদালতের কাছে বারবার ন্যায়বিচার দাবি করেন। সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরোর আদালতে বদরুলের সামনেই খাদিজা তার ওপর ঘটে যাওয়া নির্মমতার বিচার চান। প্রায় দুই মাস খাদিজার অপেক্ষায় ছিলেন আদালত। খাদিজাসহ আদালত ৩৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। ডিসেম্বর পর্যন্ত আদালত ৩৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। গতকাল খাদিজাকে আদালতে সাক্ষীর জন্য হাজির করা হয়। খাদিজা আদালতে আসবেন- এ কারণে সকাল থেকে সিলেটের আদালত এলাকা ছিল লোকারণ্য। তাকে এক নজর দেখার জন্য ভিড় করে লোকজন। এই অবস্থায় সকাল থেকে আদালত এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সকাল ১০টার দিকে কারাভ্যানে করে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বদরুলকে নিয়ে যাওয়া হয় আদালতে। নতুন বিল্ডিংয়ের নিচতলায় রাখা হয় তাকে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে মাইক্রোবাসযোগে আদালতে হাজির হন খাদিজা আক্তার নার্গিস। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে তিনি হেঁটে হেঁটে তিন তলায় যান। সেখানে ম্যাজিস্ট্রেটের খাস কামরায় রাখা হয় তাকে। দুপুর ১২টার দিকে বদরুল আলমকে নিয়ে যাওয়া হয় বিচারিক আদালতে। সেখানে বদরুলের সামনেই প্রথমে সাক্ষ্য প্রদান করেন খাদিজা। এ সময় খাদিজা বলেন- বদরুলের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। সে তাদের বাড়িতে লজিং মাস্টার ছিল। এর বেশি তিনি বদরুলকে চিনেন না। বদরুলের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। ঘটনার দিন সে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে তার হাত ধরে টানাটানি করে। এরপর পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়ার পর পুকুরপাড়ে তার ওপর হামলা চালায়। খাদিজা জানান- প্রথম তিনি হাত দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পরপরই কয়েকটি কোপ দেয়ার পর আর কিছু বলতে পারেননি। এ সময় আদালতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন খাদিজা। সাক্ষ্য গ্রহণের পর খাদিজাকে জেরা করেন আসামি পক্ষের নিযুক্ত আইনজীবী সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী। জেরার সময় বদরুল আদালতেও উগ্র মনোভাব দেখায়। খাদিজাকে উদ্দেশ্য করে কথাও বলে। পরে আইনজীবীরা ধমক দিয়ে তাকে শান্ত করেন। এদিকে- আদালত খাদিজার সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে আলোচিত এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ পর্ব সমাপ্ত করেন। মোট ৩৭ জন সাক্ষীর মধ্যে খাদিজা সহ ৩৪ জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য দিলেন। আদালত সাক্ষ্য গ্রহণ পর্ব সমাপ্ত করে আগামী ১লা মার্চ যুক্তি-তর্কের তারিখ নির্ধারণ করেন। এরপর রায় ঘোষণার তারিখ ঘোষণা করা হবে। আদালত থেকে বেরিয়ে এসে এপিপি অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- ‘আদালতে খাদিজার সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্ব সমাপ্ত করা হয়েছে। এখন যুক্তি-তর্কের পর রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন- আদালতের কাছে আমরা সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছি। আমরা আশাবাদী আদালত ন্যায়বিচার করবেন।’ তিনি বলেন- আদালতের কাছে নির্যাতনের শিকার হওয়া কলেজছাত্রী খাদিজাও সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন। এদিকে- আসামি বদরুলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন- ‘খাদিজার বক্তব্যে প্রচুর অসংলগ্নতা রয়েছে। সেটি আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি।’ তিনি বলেন- ঘটনার সময় বদরুল নেশাগ্রস্ত ছিল। নেশার ঘোরে সে ওই কাজ করেছে। এ কারণে তিনি আদালতের কাছে বদরুলকে নির্দোষ দাবি করেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যের জবাবে খাদিজার পরিবারের নিয়োজিত আইনজীবী আ.ক.ম শিবলী জানিয়েছেন- ঘটনা দিবালোকের মতো পরিষ্কার। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। খাদিজাকে প্রাণে হত্যার উদ্দেশেই পরিকল্পনা করে তার ওপর হামলা হয়েছে। এখন আদালতকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে- এ পর্যন্ত পাওয়া সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তিনি আদালতের কাছে আলোচিত এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। গত ৩রা মার্চ সিলেটের এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে সরকারি মহিলা কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে বদরুল আলম। বদরুল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মিত শিক্ষার্থী ছিল। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিল। এক সময় খাদিজাদের বাড়িতে লজিং মাস্টার হিসেবে বসবাস করতো বদরুল। পরে তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর থেকে কলেজে যাওয়া-আসার পথে রাস্তাঘাটেই খাদিজাকে প্রেম প্রস্তাব দেয় বদরুল। কিন্তু প্রেমে সারা না দেয়ায় তার উপর চালানো হয় এই নির্মমতা। এদিকে- ঘটনার পর আটক হওয়া বদরুলকে আসামি করে ৪ঠা অক্টোবর সিলেটের শাহপরান থানায় মামলা করেছিলেন খাদিজার চাচা আব্দুল কুদ্দুস। এ ঘটনায় ৫ই ডিসেম্বর বদরুল সিলেটের আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। আর জবানবন্দিতে সে জানিয়েছে- প্রেম প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় খাদিজাকে কুপিয়েছে। এদিকে- ঘটনার এক মাস পর আদালতে একমাত্র আসামি বদরুলকে অভিযুক্ত করে পুলিশ। আর চার্জশিট গ্রহণের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে ৩৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। আইনজীবীরা জানিয়েছেন- সিলেটের শিশু সাইদ ও রাজন হত্যা মামলার বিচার দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। একই ভাবে খাদিজা হত্যাচেষ্টা মামলাটি গুরুত্বসহকারে নিয়েছেন আদালত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *