অটোচালকের সংসারে আলো আনল ক্রিকেট

Slider খেলা সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

54476_aaa

 

 

 

 

 

কষ্টের সংসারে ছেলের ক্রিকেট খেলার নেশাটা ছিল বিলাসিতার মতো। মা তাই কম বকাবকি করেননি। ক্রিকেট ছাড়াতে শপথও নিতে হয়েছে অনেক বার। কিন্তু ছেলের ক্রিকেটের ভূত নামেনি। বরং ক্রমশ বেড়েছে।

সেই ছেলেই সোমবারের আইপিএল নিলামের শিরোনামে। তিনি— মহম্মদ সিরাজ। ২০ লক্ষ টাকা বেসপ্রাইস থাকা সিরাজ-কে ২.৬ কোটি টাকায় কিনেছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। ভাইরাল হয়ে গিয়েছে তাঁর কাহিনি। অটোরিক্সা চালকের সন্তানের আইপিএল নিলামের হাত ধরে ক্রিকেটের গলি থেকে রাজপথে উঠে আসার কাহিনি।

সোমবার রাতে ফোনে ধরতেই উচ্ছ্বসিত সিরাজ আনন্দবাজারকে বলে উঠলেন, ‘‘এত টাকায় কোনও দল কিনবে আমায় ভাবিনি। আইপিএলে খেলার স্বপ্ন দেখতাম এত দিন। এ মরসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে যা পারফর্ম করেছি তার পর নিলামে কোনও দলে সুযোগ পাব এই আশায় ছিলাম।’’ তার পরেই মনে পড়ে যায় সেই কষ্টের অতীত। ‘‘একটা সময় ছিল যখন ক্রিকেট ম্যাচ খেলে সামান্য কয়েকশো টাকাই পেয়েছি,’’ বলে চলেন তিনি, ‘‘আজ তাই আমার আইপিএলে দাম কোটি টাকায় উঠে যাওয়াটা বিশ্বাস হচ্ছিল না প্রথমে।’’

বাইশ বছর বয়সি ডান হাতি পেসার ৪১ উইকেট নিয়ে হায়দরাবাদের হয়ে এ বার রঞ্জি ট্রফির তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। ঘরোয়া ক্রিকেটে যার দারুণ বাউন্সার দেওয়ার জন্য নামডাক আছে। ক’দিন আগে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারত ‘এ’-র প্রস্তুতি ম্যাচের দলে ছিলেন। ‘‘মা খুব বকাবকি করত। বাবা অটো রিক্সা চালায়। খুব কষ্ট করে সংসার চালিয়েছে। কিন্তু সব সময় উৎসাহ দিয়ে গিয়েছে আমাকে। এখন দু’জনেই খুব খুশি,’’ বলেন ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন চাঞ্চল্য। সঙ্গে যোগ করেন আরও সংগ্রামের কাহিনি, ‘‘একটা সময় গিয়েছে একটা ভালো জুতো ছিল না। আমার ইচ্ছে বাবা-মাকে খুব ভালো ভাবে রাখার। আর যাতে দু’জনকে কষ্ট করতে না হয়।’’ বলতে গিয়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করাই কঠিন হয়ে যায় যেন তাঁর কাছে।

এ বার আইপিএলে লক্ষ্য কী?

‘‘আইপিএলে বিশ্বসেরা ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা হবে ভাবলেই একটা আলাদা উত্তেজনা হচ্ছে। আমি চাই, এ বার দারুণ পারফর্ম করে জুনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে জায়গা করে নিতে। দেশের জার্সিতে নামার চেয়ে বড় স্বপ্ন আর কী হতে পারে! আইপিএল নিলামের সাফল্য সেই পথেই এক পা এগনো বলতে পারেন।’’

সিরাজের আদর্শ ক্রিকেটার অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি পেসার মিচেল স্টার্ক। দিনকয়েক আগে ভারত ‘এ’ আর অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তুতি ম্যাচে তাঁর নায়কের সঙ্গে সামনা-সামনি কথা বলার সুযোগও হয়েছিল। সিরাজের প্রধান অস্ত্র ইনসুইং ও বাউন্সার। ইয়র্কারটাও অস্ত্রশালায় যোগ করতে চান আইপিএলের কথা ভেবে। কী ভাবে ইয়র্কার আরও নিখুঁত করতে হবে, জানতে চেয়েছিলেন স্টার্কের কাছে। স্টার্ক উপদেশও দিয়েছেন। এ বারের আইপিএলে অবশ্য স্টার্কের সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, স্টার্ক সরেই দাঁড়িয়েছেন টুর্নামেন্ট থেকে।

‘‘তাতে কী, অদূর ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেখা হয়ে যেতেই পারে আমার নায়কের সঙ্গে,’’ বলছেন নিলামে ঝড় তোলা প্রতিশ্রুতিমান পেসার। হায়দরাবাদের সিরাজ তো জেনেই গেলেন, সব স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন থাকে না। কখনওসখনও সত্যিও হয়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *