আপিলেও হেরে গেলেন ট্রাম্প

Slider সারাদেশ

52227_lead

 

 

 

 

 

 

ডেস্ক; এবার আপিলেও হেরে গেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। সাতটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের তার নিষেধাজ্ঞা ওয়াশিংটনের একজন ফেডারেল বিচারক আগেই স্থগিত করে দিয়েছিলেন। এই স্থগিতাদেশ বাতিল চেয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের আবেদনও এবার নাকচ করে দিয়েছে একটি আপিল আদালত। এর ফলে ওই ফেডারেল বিচারকের রায়ই বহাল থাকলো।

এ খবর দিয়েছে বিবিসি। ফেডারেল বিচারক নিজের রায়ে বলেছিলেন, সরকার ও বাদী পক্ষ নিজেদের যুক্তি পুরোপুরি তুলে ধরার আগ পর্যন্ত প্রশাসনের ওই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত থাকবে। এখন আপিল বিভাগও একই বক্তব্য দেওয়ায়, সোমবার পর্যন্ত আরও বেশি যুক্ত উপস্থাপনের সময় পেয়েছে হোয়াইট হাউজ ও বাদী অঙ্গরাজ্যগুলো। ওয়াশিংটন ও মিনেসোটা Ñ এই দুইটি অঙ্গরাজ্য ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে এ মামলা করেছে। ওই অঙ্গরাজ্যগুলোর যুক্তি, প্রশাসন সাতটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নাগরিকদের প্রবেশের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা অসাংবিধানিক।

অপরদিকে শুক্রবার প্রশাসনের পক্ষে জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট যুক্তি দেখিয়েছিল, বাদী অঙ্গরাজ্যগুলো প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ চ্যালেঞ্জ করার এখতিয়ার রাখে না। কিন্তু এই যুক্তি ফেডারেল বিচারক নাকচ করে দেন। এরপর নিজেদের আপিলে জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট নতুন যুক্তি দেখিয়ে বলেছে, ফেডারেল বিচারক জেমস রবার্ট জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইস্যুতে প্রেসিডেন্টকে অনুমানের ভিত্তিতে বিবেচনা করে বাড়াবাড়ি করেছেন। পাশাপাশি সরকারের আরও যুক্তি ছিল, যুক্তরাষ্ট্রে কারা প্রবেশ করতে বা থাকতে পারবে, তা কেবল প্রেসিডেন্টই ঠিক করতে পারবেন।
ওয়াশিংটন ও মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের পক্ষে আইনজীবীরা যুক্তি দেখিয়েছিলেন, এই নিষেধাজ্ঞা অসাংবিধানিক কারণ এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও মানুষকে যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া প্রবেশ থেকে বিরত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, এই নিষেধাজ্ঞায় কার্যত মুসলমানদের টার্গেট করা হয়েছে। ফলে এটি ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারও লঙ্ঘিত হয়েছে। তাদের যুক্তি বিচারক জেমস রবার্ট আমলে নিয়ে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা রদ করে দেন। এর ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে হোয়াইট হাউজ। খোদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে ওই রায়কে ‘হাস্যকর’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। পাশাপাশি বিচারক জেমস রবার্টকে ‘তথাকথিত বিচারক’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি তার নিষেধাজ্ঞা পুনঃস্থাপনেরও অঙ্গীকার করেন। কিন্তু আপিল বিভাগ নিষেধাজ্ঞা পুনঃস্থাপনের আবেদন নাকচ করায় দৃশ্যত ট্রাম্প তার প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছেন। বিচারক রবার্ট ২০০৪ সাল থেকে ফেডারেল বেঞ্চের বিচারপতি। তাকে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ নিয়োগ দিয়েছিলেন।
শুক্রবার তার রায়ের ফলে নিষেধাজ্ঞার শিকার মানুষজন আবারও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাতিল করা ভিসা আবারও গ্রহণ করা শুরু করেছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের কর্মকর্তাদের এই রায় মেনে চলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাস্টম কর্মকর্তারা বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইনকে বলেছেন তারা আবার পূর্বে নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন দেশগুলো থেকে মানুষজন আনতে পারবেন। কাতার এয়ারওয়েজ, এয়ার ফ্রান্স, ইতিহাদ এয়ারওয়েজ, লুফথানসা সহ অন্যান্য বৃহৎ এয়ারলাইনগুলো বলেছে, তারা এই নির্দেশ মেনে চলবেন।
ট্রাম্প প্রথম এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর আমেরিকা ও অন্যান্য দেশের বিমানবন্দরে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। এতে ইরাক, সিরিয়া, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেনের নাগরিকদের ওপর ৯০ দিনের প্রবেশ-নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পাশাপাশি শরণার্থী গ্রহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় ১২০ দিনের জন্য। তবে সিরিয়ার বেলায় শরণার্থী গ্রহণের নিষেধাজ্ঞা ছিল অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য। এই নিষেধাজ্ঞার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের ও বিশ্বের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ দেখা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *